ইস্টার আইল্যান্ডের সেই সব মূর্তি।
ইস্টার আইল্যান্ডের উপকূল ঘেঁষে পাহারায় থাকা মুখগুলো ক্রমেই বিবর্ণ হয়ে যাচ্ছে। আর হয়তো মেরেকেটে একশোটা বছর। তার পরে আর চেনা যাবে না তাদের। এমনই আশঙ্কায় সংরক্ষণবিদেরা।
দক্ষিণ-পূর্ব প্রশান্ত মহাসাগরে চিলের একটি দ্বীপ ‘ইস্টার আইল্যান্ড’। স্থানীয় ভাষায় ‘রাপা নুই’। বহু শতাব্দী আগে আগ্নেয়-দ্বীপের বাসিন্দারা পাথর খোদাই করে ওই প্রকাণ্ড মুখগুলো (জায়ান্ট হেডস) বানিয়েছিলেন। পূর্বপুরুষ পলিনেশিয়ানদের মুখ। একটা-দু’টো নয়। অন্তত হাজারটা মূর্তি বা ‘মোয়াই’। আনুমানিক ১২০০ খ্রিস্টাব্দে পলিনেশিয়ানদের পা পড়েছিল ওই দ্বীপে। রাপা নুইয়ের বাসিন্দাদের স্থাপত্য কীর্তিকে ১৯৯৫ সালে ‘ওয়র্ল্ড হেরিটেজ সাইট’-এর মর্যাদা দেয় ইউনেস্কো।
রানো রারাকু জলাভূমি ঘিরে পাহাড়ের ধার ঘেঁষে সাজানো বহু ‘মোয়াই’। সম্প্রতি ‘জরা’য় আক্রান্ত হয়েছে মূর্তিগুলো। স্থানীয় বাসিন্দারা বলছেন, ‘‘যেন কুষ্ঠ হয়েছে ওগুলোর।’’ মূর্তির গায়ে সাদা ছোপ ছোপ দাগ। বিশেষজ্ঞরা জানাচ্ছেন, ‘লাইকেন’ বাসা বেঁধেছে মূর্তির গায়ে। ছত্রাক ও শৈবালের সহাবস্থান হল এই ‘লাইকেন’। দুয়ের যৌথ আক্রমণে ক্ষয়ে যাচ্ছে মূর্তির গা। পাথর ক্ষয়ে কাদার মতো আস্তরণ তৈরি হচ্ছে। আর তাতেই বিকৃতি আসছে ‘জায়ান্ট হেড’-এ। তা ছাড়া ঝোড়ো হাওয়া, এগিয়ে আসা সমুদ্রের জলরাশির তাণ্ডবে ক্ষতিগ্রস্ত মূর্তিগুলো। কিছু কিছু জায়গায় আবার পাড় ভেঙেছে।
‘মোয়াই’কে লাইকেনের হাত থেকে বাঁচানোর চেষ্টা করছেন চিলের ‘ন্যাশনাল ফরেস্ট্রি কর্পোরেশন’-এর উপদেষ্টা তাহিরা এডমন্ডস। তাঁর কথায়, ‘‘এ ভাবে চললে আগামী একশো বছরের মধ্যে সমস্ত ‘মোয়াই’ আয়তাকার চেহারা নেবে।’’ ইস্টার আইল্যান্ডের বাসিন্দা ও প্রত্নতত্ত্ববিদ সনিয়া হাওয়া জানাচ্ছেন, ৭০ শতাংশ মূর্তিতে লাইকেন বাসা বেঁধেছে। চিলের মূল ভূখণ্ড থেকে ৩৫০০ কিলোমিটার সফর করে আগ্নেয়-দ্বীপ ‘ইস্টার আইল্যান্ড’-এ মোয়াই দেখতে এসে স্তম্ভিত পর্যটকেরাও। সনিয়ার বিশ্বাস, চেষ্টা করলে এখনও রক্ষা করা যেতে পারে মূর্তিগুলোকে। ‘মোয়াই’য়ের গা থেকে লাইকেন সরিয়ে নির্দিষ্ট রাসায়নিক লাগাতে হবে। তাতে সামুদ্রিক আর্দ্রতা থেকে বাঁচানো যাবে আগ্নেয় শিলাকে। ইস্টার আইল্যান্ডে অন্তত ৩০ হাজার প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে। সে সব দেখাশোনায় অন্তত ৫০ কোটি ডলার প্রয়োজন। ‘‘তবে এত কিছু করেও পুরোপুরি রক্ষা করা যাবে না। সময় আর প্রকৃতির নিয়মেই এক সময় হারিয়ে যাবে মোয়াই,’’ আক্ষেপ সনিয়ার।