anne frank

Anne Frank: ফ্রাঙ্ক পরিবারের সঙ্গে প্রতারণা কার, নয়া তথ্য

ফ্রাঙ্ক পরিবারের ঠিকানা কী ভাবে ফাঁস হয়েছিল, তা বিশ্বের সমাধান না হওয়া রহস্যগুলির মধ্যে অন্যতম।

Advertisement

সংবাদ সংস্থা

আমস্টারডাম শেষ আপডেট: ১৯ জানুয়ারি ২০২২ ০৪:৫৫
Share:

আনে ফ্রাঙ্ক

তেরো বছরের জন্মদিনে ডায়েরি উপহার পাওয়ার পরে প্রিয় গল্পের চরিত্রকে উদ্দেশ করে নিয়মিত চিঠি লিখত কিশোরীটি। স্বপ্ন ছিল লেখিকা হওয়ার। তবে সবই নাৎসিদের চোখ এড়িয়ে বাবা, মা, দিদির সঙ্গে আমস্টারডামের এক কারখানার গুদামঘরের চোরা কুঠুরিতে লুকিয়ে থাকাকালীন। ১৯৪৪ সালের ৪ অগস্ট নাৎসি গেস্টাপো অফিসারের হাতে ধরা পড়ে ফ্রাঙ্ক পরিবার। কিশোরীর ঠাঁই হয় জার্মানির কুখ্যাত বের্গেন-বেলসেন কনসেন্ট্রেশন ক্যাম্পে। ১৯৪৫ সালে মাত্র ১৫ বছর বয়সে মৃত্যু হয় সেই কিশোরীর... গোটা বিশ্ব যাকে আনে ফ্রাঙ্ক নামে চেনে। যার ডায়েরি চোখে আঙুল দিয়ে দেখায় দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় কী ভাবে বেঁচে থাকার জন্য লড়াই চালাতেন ইহুদিরা।

Advertisement

কিন্তু এত পরিকল্পনা করে লুকিয়ে থাকার পরেও কী ভাবে ধরা পড়ল ফ্রাঙ্ক পরিবার? একাধিক বিশেষজ্ঞের মতামতে উঠে এসেছে একটাই বিষয়— ফ্রাঙ্করা কোথায় লুকিয়ে রয়েছেন এই বিষয়ে জার্মান সিকিয়োরিটি সার্ভিসকে কেউ নিশ্চয়ই তথ্য দিয়েছিল। না হলে, এত দিন লুকিয়ে থাকার পরে হঠাৎ কী ভাবে ধরা পড়েন তাঁরা! ঘটনার ৭৭ বছর পরে সম্প্রতি প্রাক্তন এফবিআই অফিসার ভিন্স প্যানকোক ও তাঁর সহকারীদের গবেষণা ও তদন্তে উঠে এসেছে এক নতুন তথ্য। দীর্ঘ ছ’বছর ধরে গবেষণা চালিয়েছেন প্যানকোকেরা। সম্ভবত আর্নল্ড ভ্যান ডেন বার্গ নামের এক ইহুদির কাছ থেকেই সিকিয়োরিটি সার্ভিসের কাছে পৌঁছেছিল ফ্রাঙ্ক পরিবারের খবর ও গোপন ঠিকানা।

সংবাদমাধ্যমকে ভিন্স জানিয়েছেন, আমস্টারডামের আনে ফ্রাঙ্ক হাউজ়ের সহায়তায় আধুনিক তদন্ত পদ্ধতি, আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স ও ১৯ জন ফরেন্সিক বিশেষজ্ঞের সঙ্গে কাজ করে তিনি এই তথ্য পেয়েছেন। মূল সূত্র, আনের বাবা অটোকে লেখা একটি নামহীন চিরকুট। তাতে লেখা ছিল, ‘আপনাদের ঠিকানা জানিয়ে দেওয়া হয়েছে।’ চিরকুটে নাম না থাকলেও ভিন্সের দাবি, অটো জানতেন ঠিক কে তাঁদের সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা করেছে। যদিও কোনও দিনই এ বিষয়ে মুখ খোলেননি তিনি।

Advertisement

পেশায় আইনজীবী ও নোটারি ভ্যান ডেন বার্গেরও বাসস্থান ছিল আমস্টারডাম শহর। নাৎসি কর্তৃক জোর করে স্থাপিত শহরের ইহুদি পরিষদের সদস্য ছিলেন তিনি। নাৎসিদের কাছে দীর্ঘদিন নিজের ইহুদি পরিচয় লুকিয়ে রাখতে পারার কারণে কনসেন্ট্রেশন ক্যাম্পে যাওয়ার দুর্ভাগ্য তাঁর হয়নি। যদিও, ‘দ্য বিট্রেয়াল অব আনে ফ্রাঙ্ক’-এর লেখিকা রোজ়মেরি সালিভানের মতে, প্রাণের ভয়ে ও নিজের পরিবারকে বাঁচাতেই সম্ভবত ফ্রাঙ্কদের ঠিকানা দিতে বাধ্য হয়েছিলেন ভ্যান ডেন বার্গ। এর কারণ, তত দিনে তাঁর নিজের ইহুদি পরিচয় প্রকাশ হয়ে গিয়েছে। ইহুদি পরিষদের সদস্য ও আইনজীবী হওয়ায় তাঁর কাছে শহরের সমস্ত ইহুদি পরিবারের তালিকা ছিল।

ফ্রাঙ্ক পরিবারের ঠিকানা কী ভাবে ফাঁস হয়েছিল, তা বিশ্বের সমাধান না হওয়া রহস্যগুলির মধ্যে অন্যতম। ভিন্স জানিয়েছেন, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ শেষ হওয়ার পরে ১৯৪৭ সালে ও ১৯৬৩ সালে দুটি পুলিশি তদন্ত হয়। তাতে অবশ্য কোনও সুরাহা হয়নি। ১৯৬৩ সালের তদন্তটি করেছিলেন ডিটেকটিভ আরেন্ড ভ্যান হেল্ডেন, তিনিই চিরকুটটি আবিষ্কার করেছিলেন। তাঁর পরিবারের কাছ থেকেই চিরকুটটি পেয়েছেন ভিন্স।

রোজ়মেরির দাবি, ভ্যান ডেন বার্গ আসলে ‘ট্র্যাজ়িক ভিলেন’। ফ্রাঙ্ক পরিবারের প্রতি তাঁর এই বিশ্বাসঘাতকতা আসলে কতটা অসহায়তা থেকে তা বোঝা এখনকার সময়ে দাঁড়িয়ে হয়তো খানিক কঠিনই। ১৯৪৫ সালে মারা গিয়েছিল আনে। ১৯৫০ সালে মৃত্যু হয় ভ্যান ডেন বার্গের। দু’জনের জীবনের কাহিনিই সাক্ষ্য দেয় দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধকালীন নাৎসি জার্মানিতে ইহুদি অসহায়তার।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন