ওর নাম নেবো না, বললেন জেসিন্ডা

পার্লামেন্ট সদস্যদের কাছে মঙ্গলবার এই আন্তরিক অনুরোধ জানালেন নিউজ়িল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী জেসিন্ডা আর্ডের্ন।

Advertisement

সংবাদ সংস্থা

ক্রাইস্টচার্চ শেষ আপডেট: ২০ মার্চ ২০১৯ ০২:০৮
Share:

সাক্ষাৎ: অধিবেশন শেষে। নিউজ়িল্যান্ডের ওয়েলিংটনে। ছবি: এএফপি।

মুখে বলুন শুধু সেই সব নাম, যাঁদের আমরা হারিয়েছি। যার জন্য ওঁদের আমরা হারিয়েছি, তার নামটা কখনওই বলবেন না।

Advertisement

পার্লামেন্ট সদস্যদের কাছে মঙ্গলবার এই আন্তরিক অনুরোধ জানালেন নিউজ়িল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী জেসিন্ডা আর্ডের্ন। ক্রাইস্টচার্চের দুই মসজিদে হানার পরে পার্লামেন্টের অধিবেশন আজ যথেষ্টই ভারাক্রান্ত ছিল। অধিবেশন শুরুর আগে কালো পোশাকে বছর ৩৮-এর নেত্রী ‘সালাম আলাইকুম’ বলে আরও এক বার স্বজনহারাদের পাশে থাকার বার্তা দেন। তার পরে জেসিন্ডা বলেন, ‘‘নিউজ়িল্যান্ড আইনের সর্বশক্তি দিয়ে ওই ব্যক্তির বিচার করবে।’’ এই সূত্রেই প্রধানমন্ত্রী তাঁর দেশের নাগরিকদের জানিয়ে দেন, ক্রাইস্টচার্চে নির্বিকার ভাবে গুলি চালিয়ে যে লোকটি ৫০টি প্রাণ কেড়ে নিয়েছে, তার নাম তিনি আর কখনওই মুখে আনবেন না।

জেসিন্ডার কথায়, ‘‘লোকটি সন্ত্রাসবাদী কার্যকলাপের মাধ্যমে অনেক কিছু দেখাতে চেয়েছে। তার মধ্যে অন্যতম হচ্ছে, কুখ্যাত হওয়ার বাসনা।’’ পার্লামেন্টে দাঁড়িয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘‘আর এই জন্যই আপনারা আমায় আর কখনও ওর নাম মুখে আনতে দেখবেন না। ও এক জন জঙ্গি। ও অপরাধী। ও উগ্রপন্থী। কিন্তু আমি যখন কথা বলব, ও নামহীন। আপনাদের কাছে বিনীত অনুরোধ, যে ওঁদের প্রাণ নিয়েছে, সে নয়। তার পরিবর্তে ওর জন্য যাঁরা প্রাণ হারিয়েছেন, তাঁদের নাম বলুন।’’

Advertisement

দিল্লি দখলের লড়াই, লোকসভা নির্বাচন ২০১৯

বিশ্বের সব মুসলিমদের প্রতি তাঁর বার্তা, ‘‘শান্তি, ক্ষমা আর আল্লার আশীর্বাদ আপনাদের সঙ্গে থাকুক।’’ বক্তৃতা শেষে জেসিন্ডার মন্তব্য, ‘‘আগামী শুক্রবার হামলার ঘটনা এক সপ্তাহে পড়বে। ওই দিন সবাই আবার প্রার্থনার জন্য জড়ো হবেন। আসুন, ওঁদের কষ্ট আমরাও ভাগ করে নিই।’’

ক্রাইস্টচার্চে গণহত্যার জেরে দেশে অস্ত্র আইন পাল্টানোর দাবিও জোরালো হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন, অস্ত্র আইন সংস্কার হবে। সরকারি আবেদনে সাড়া দিয়ে কাজটা শুরু করে দিয়েছেন সাধারণ মানুষও। এখানকার গ্রিন পার্টির প্রাক্তন সদস্য এবং পেশায় কৃষক, জন হার্ট নিজের সেমি-অটোম্যাটিক রাইফেল পুলিশের কাছে জমা দিয়েছেন। জন বলেছেন, রাইফেল জমা দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিতে দু’বার ভাবেননি তিনি। পরে টুইটে লিখেছেন, ‘‘কোনও কোনও সময় খেতে কাজ করতে গিয়ে এগুলো (অস্ত্র) দরকার হয় বটে। তবে আমার সুবিধে হয় বলে এর অপব্যবহারের আশঙ্কা উড়িয়ে দিতে পারি না। আমাদের দেশে এগুলোর কোনও প্রয়োজন নেই।’’ যদিও জন-এর টুইটে বিদ্বেষমূলক মন্তব্য করেছেন অনেকই। যার বেশির ভাগ এসেছে মার্কিন নাগরিকদের কাছ থেকে। বহু হামলার পরেও যাঁদের অনেকেই অস্ত্র ছাড়তে নারাজ। তবে নিউজ়িল্যান্ডে গত শুক্রবার থেকে এ ভাবে রাইফেল জমা করেছেন বহু মানুষ। পুলিশ এখনই সে হিসেব দিতে পারছে না। তবে পুলিশের তরফে বিবৃতি দিয়ে বলা হচ্ছে, ‘‘নিরাপত্তার কড়াকড়ির মধ্যে বর্তমান পরিস্থিতিতে যাঁরা আগ্নেয়াস্ত্র ফেরাতে ইচ্ছুক, তাঁরা আগে আমাদের ফোন করুন।’’ অস্ত্র আইনে ঠিক কী কী পরিবর্তন হচ্ছে, তা বিস্তারিত ভাবে আগামী সপ্তাহে ঘোষণা করা হবে বলে জানিয়েছেন জেসিন্ডা।

ইতিমধ্যে স্বজনের শেষকৃত্যের জন্য বিশ্বের নানা প্রান্ত থেকে নিউজ়িল্যান্ড এসে পৌঁছচ্ছেন অনেকেই। ইসলামি নিয়ম অনুযায়ী, মৃত্যুর পরে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে

শেষকৃত্য সম্পন্ন হওয়ার কথা। কিন্তু শনাক্তকরণ এবং ফরেন্সিক পরীক্ষার জন্য অনেকটাই দেরি হয়ে গিয়েছে সমাহিত করার কাজ। এতে অনেকে কিছুটা ক্ষুব্ধ।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন