বিলেতে নয়া ব্যবসা নীরবের! প্রশ্নের মুখে অবশ্য তিনি ছিলেন নীরবই

রাস্তার ধারে দাঁড়িয়ে গোটা পাঁচ-ছয় প্রশ্ন। কয়েকটা আবার একাধিক বার করা হল। কোনওটা তিনি নির্লিপ্ত মুখে শুনলেন, কোনওটায় মুচকি হাসলেন।

Advertisement

নিজস্ব প্রতিবেদন

শেষ আপডেট: ১০ মার্চ ২০১৯ ০২:৫৪
Share:

পলাতক: লন্ডনের রাস্তায় শুক্রবার হঠাৎ দেখা মিলল নীরব মোদীর।

রাস্তার ধারে দাঁড়িয়ে গোটা পাঁচ-ছয় প্রশ্ন। কয়েকটা আবার একাধিক বার করা হল। কোনওটা তিনি নির্লিপ্ত মুখে শুনলেন, কোনওটায় মুচকি হাসলেন। কিন্তু সব ক’টা প্রশ্নের একই উত্তর দিলেন— ‘নো কমেন্ট’। প্রশ্নকর্তা সাংবাদিক বলেও ফেললেন, ‘‘আপনি তা হলে সবেতেই ‘মন্তব্য করতে চাই না’ বলে যাবেন!’’ থোড়াই কেয়ার ভাব করে একটা ট্যাক্সি ধরলেন পিএনবি প্রতারণা মামলার প্রধান অভিযুক্ত নীরব মোদী।

Advertisement

পলাতক গয়না ব্যবসায়ীর এই ‘একতরফা’ সাক্ষাৎকারের ২ মিনিট ১৩ সেকেন্ডের ভিডিয়ো আজ প্রকাশ করেছে একটি ব্রিটিশ সংবাদপত্র। সঙ্গে সবিস্তার প্রতিবেদনও। যার জেরে ভোটের মুখে নতুন করে তোলপাড় শুরু হয়েছে ভারতীয় রাজনীতিতে। নীরব, তাঁর মামা মেহুল চোক্সী, বিজয় মাল্যের মতো ঋণখেলাপিদের নরেন্দ্র মোদী সরকারই পালাতে সাহায্য করেছে বলে বরাবরের অভিযোগ বিরোধীদের। আজকের ভিডিয়োয় লন্ডনের অক্সফোর্ড স্ট্রিটে নীরবকে বহাল তবিয়তে দেখার পরে কংগ্রেসের কটাক্ষ, ‘জালিয়াত পুনর্বাসন যোজনা’ চালাচ্ছেন প্রধানমন্ত্রী। কংগ্রেস সভাপতি রাহুল গাঁধীর টুইট, ‘‘পলাতক নীরব মোদীর সঙ্গে তাঁর ভাই পিএম মোদীর অদ্ভুত মিল দেখা যাচ্ছে। দু’জনেই দেশকে লুটেছেন, দু’জনেই ‘মোদী’, দু’জনেই কোনও প্রশ্নের উত্তর দিতে চান না। দু’জনেই মনে করেন তাঁরা আইনের ঊর্ধ্বে, দু’জনেরই বিচার হবে।’’

ব্রিটিশ সংবাদপত্রটির দাবি, লন্ডনে নতুন করে হিরের ব্যবসা ফেঁদে বসেছেন নীরব। শহরের প্রাণকেন্দ্রে অক্সফোর্ড স্ট্রিট আর টটেনহ্যাম কোর্ট রোডের কাছে ‘সেন্টার পয়েন্ট’ নামে এক বহুতলে তিন বেডরুমের একটি ফ্ল্যাটে তিনি থাকেন। একটা তলার প্রায় আধখানা জোড়া সেই ফ্ল্যাটের দাম প্রায় ৭৫ কোটি টাকা। এক মাসের ভাড়া ১৫ লক্ষ টাকারও বেশি। বাড়ির কাছের রাস্তায় কুকুর নিয়ে রোজ হাঁটতেও বেরোন প্রায় ১৪ হাজার কোটি টাকা ঋণখেলাপে অভিযুক্ত ৪৮ বছরের ব্যবসায়ী।

Advertisement

ভিডিয়োয় দেখা যাচ্ছে, ওজন বেড়েছে নীরবের। এক কালের ছবিতে-দেখা চকচকে মুখে এখন কাঁচাপাকা দাড়ি, সঙ্গে পাকানো গোঁফ। কালো ট্রাউজার্স-গোলাপি জামার উপরে কালো জ্যাকেট। এই জ্যাকেট নিয়েই ইন্টারনেট এখন সরগরম। কারণ সংবাদপত্রটি জানিয়েছে, ৯ লক্ষ টাকা দামের ওই জ্যাকেট উটপাখির চামড়ার তৈরি! তার পর থেকে সামাজিক মাধ্যমে বা ঘরোয়া আলোচনায় কেউ কেউ বলছেন, ‘‘বসে খাওয়ার মতো টাকা এখনও রয়েছে নীরবের।’’ কারও আবার রসিকতা, ‘‘ন’লাখি জ্যাকেট পরেও ট্যাক্সি ধরতে হচ্ছে!’’

আরও পড়ুন: ব্রিটেনে রাজনৈতিক আশ্রয়ের আবেদন করেছেন? নীরব মোদী বললেন…

গত কাল ব্রিটিশ সাংবাদিকের প্রশ্ন এড়ানোর ফাঁকে ফাঁকেই ট্যাক্সি খুঁজছিলেন নীরব। সাংবাদিক তাঁকে প্রশ্ন করেছিলেন, তিনি ব্রিটেনে রাজনৈতিক আশ্রয় চেয়েছেন কি না, কত দিন থাকবেন, কোথায় আছেন, তাঁকে প্রত্যর্পণের প্রক্রিয়া চলছে কি না, তিনি হিরের ব্যবসা করছেন কি না। আগাগোড়া শান্ত থেকে নীরব বেশির ভাগ সময়েই ‘নো কমেন্ট’ বলেছেন। কখনও আবার প্রশ্নকর্তাকে উপেক্ষা করে রাস্তা পেরিয়ে ট্যাক্সি খুঁজতে দেখা গিয়েছে তাঁকে।

নীরব ‘নীরব’ থাকলেও ওই সংবাদপত্রের দাবি, ঘড়ি ও গয়নার খুচরো এবং পাইকারি বিক্রেতা হিসেবে ব্রিটেনে নতুন ব্যবসা নথিভুক্ত করেছেন নীরব। বাড়ির অদূরে সোহো-তে তাঁর অফিস। ব্রিটেনে কাজকর্ম, পেনশন এবং অনলাইন ব্যাঙ্কিংয়ের চাবিকাঠি যে ন্যাশনাল ইনশিওরেন্স নম্বর— সেটিও জোগাড় করে ফেলেছেন তিনি। ধনী বিদেশিদের পরামর্শ দেওয়া একটি আর্থিক সংস্থার সঙ্গেও তাঁর যোগাযোগ।

ইন্টারপোলের রেড কর্নার নোটিস মাথায় নিয়েও কি নিশ্চিন্তে ‘দ্বিতীয় ইনিংস’ খেলে যাবেন নীরব? বিদেশ মন্ত্রকের মুখপাত্র রভীশ কুমার বলেই দিয়েছেন, ‘‘নীরবকে দেখা গিয়েছে মানেই তাঁকে পত্রপাঠ ভারতে ফিরিয়ে আনা যাবে না। একটা প্রক্রিয়া চলছে। সিবিআই এবং ইডি প্রত্যর্পণের দাবি জানিয়েছে। প্রয়োজনীয় সমস্ত ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। আমরা যে ব্রিটিশ সরকারের কাছে প্রত্যর্পণ চেয়েছি, তার মানেই তো আমরা জানতাম যে নীরব মোদী ব্রিটেনে রয়েছেন।’’

ভারতের অনুরোধ ব্রিটেন এখনও বিবেচনা করে দেখছে বলে জানিয়েছে বিদেশ মন্ত্রক। ইডি-র বক্তব্য, ২০১৮ সালের জুলাইতেই নীরবকে প্রত্যর্পণের অনুরোধ জানানো হয়েছিল ব্রিটেনের কাছে। ব্রিটিশ স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক বলেছে, সেই অনুরোধ ওয়েস্টমিনস্টারের ম্যাজিস্ট্রেট কোর্টে পাঠানো হয়েছে। সেখানেই পরবর্তী প্রক্রিয়া শুরু হবে। সিবিআইয়ের মুখপাত্র নিতিন ওয়াকাঙ্কর বলেছেন, ‘‘প্রত্যর্পণের ব্যাপারে বিদেশ মন্ত্রকের মাধ্যমে ব্রিটিশ সরকারকে সব রকম সাহায্য করতে চাই আমরা।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন