আবারও চ্যালেঞ্জ আমেরিকাকে। শক্তির পরীক্ষায় তারা যে কোনও অংশে কম যায় না তা প্রমাণ করতে পঞ্চমবার পরমাণু পরীক্ষা করল উত্তর কোরিয়া। আজ সকাল ন’টা নাগাদ। উত্তর কোরিয়ার দাবি, গত পরমাণু বিস্ফোরণগুলির চেয়েও শক্তিশালী এ বারের বিস্ফোরণ। ক্ষমতায় হিরোশিমা বিস্ফোরণের চেয়ে একটুও কম নয়।
আন্তর্জাতিক বিধিনিষেধ, রাষ্ট্রপুঞ্জের চোখ রাঙানি, কোনও কিছুকেই আর পাত্তা দেন না কিম জন উং। আজ ফের সেটাই দেখিয়ে দিলেন তিনি। ‘‘শত্রুপক্ষের কাছে এটা আমাদের জবাব। যদি কেউ আমাদের আক্রমণ করতে আসে, আমরাও পাল্টা আক্রমণ করতে পারি। সেই বার্তাই আজ দিলাম’’, পরমাণু বিস্ফোরণের পর উত্তর কোরিয়ার সরকারি টিভি চ্যানেল আজ এমনটাই বলেছে।
সোমবার চিনে যখন বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে জি-২০ বৈঠকে যোগ দিতে এসেছিলেন নেতারা, তখনই পরীক্ষামূলক ভাবে তিনটি মিসাইল ছুড়ে আন্তর্জাতিক মহলকে চ্যালেঞ্জ জানিয়েছিলেন কিম। সে দিনই বলেছিলেন, এখানেই শেষ নয়। আরও বড় কিছু অপেক্ষা করছে। আর সেই ‘বড় কিছু’ প্রদর্শনের জন্য উত্তর কোরিয়ার জাতীয় দিবস, ৯ সেপ্টেম্বরকেই বেছে নিলেন কিম। গত বছরের শেষ দিকে কিম জানান, তাঁদের কাছে হাইড্রোজেন বোমা রয়েছে। শত্রুরা সাবধান! তার পরেই ২০১৬-র জানুয়ারিতে হাইড্রোজেন বোমা বিস্ফোরণ করে, কিম প্রমাণ করলেন তাঁর দাবি মিথ্যে নয়।
আজকের পরমাণু বিস্ফোরণের দাবির সত্যতা এখনও তেমন ভাবে যাচাই করা যায়নি। তবে মার্কিন ভূতাত্ত্বিক সর্বেক্ষণ জানিয়েছে, পরীক্ষাকেন্দ্রের কাছেপিঠে ‘কৃত্রিম’ ভূমিকম্প অনুভূত হয়েছে। রিখটার স্কেলে যার মাত্রা ছিল ৫.৩। নিশ্চিত হতে আমেরিকাও নজরদারি বিমান পাঠিয়েছে। তারা জানিয়েছে, সেখানকার বাতাসের নমুনা সংগ্রহ করার পরই বোঝা যাবে আসল ঘটনাটা ঠিক কী! জাপানের প্রধানমন্ত্রী সিনজো আবে বলেছেন, ‘‘উত্তর কোরিয়া যদি সত্যি সত্যিই পরমাণু বিস্ফোরণ ঘটিয়ে থাকে, সেটা কোনও ভাবেই মেনে নেওয়া হবে না।’’ যদিও পূর্ব এশিয়ার পরমাণু প্রসার স্টাডি়জের অধিকর্তা জেকরি লুইস বলেছেন, ‘‘এটা যে পরমাণু বিস্ফোরণ তা বেশ স্পষ্ট।’’ এবং তাঁর মতে এর শক্তি ১০ থেকে ২০ কিলোটনের মধ্যে। আশঙ্কা, যে কোনও দিন কিম শত্রু দেশে পরমাণু আঘাতও আনতে পারে।
তবে ওবামাও আজ সুর চড়িয়েছেন। তিনি বলেছেন, ‘‘আমেরিকা কখনওই উত্তর কোরিয়াকে পরমাণু শক্তিধর রাষ্ট্র হিসেবে মেনে নেয়নি। এবং ভবিষ্যতে নেবেও না।’’ উত্তর কোরিয়ার উপর আর্থিক নিষেধাজ্ঞা জারিরও প্রস্তাব করেছেন তিনি। দক্ষিণ কোরিয়ার প্রেসিডেন্ট পার্ক গিউন-হেই এক বিবৃতিতে কিমের এই কাজের নিন্দা করে বলেন, ‘‘নিজের ধ্বংস নিজেই ডেকে আনছে উত্তর কোরিয়া।’’ এমনকী উত্তর কোরিয়ার ‘মিত্র দেশ’ চিনও এর বিরোধিতা করেছে। ঘটনার পর পরই জরুরি বৈঠক ডাকে রাষ্ট্রপুঞ্জ।
তবে এতে কিমের কিছুই যায় আসে না। উত্তর কোরিয়ায় হাসি-ঠাট্টা বন্ধের নির্দেশিকা জারি হয়েছিল কিছু দিন আগেই। এখন ‘গোমড়া মুখে’ কিমের পাখির চোখ একটাই। আরও ক্ষমতা মুষ্টিগত করা।