বরিস জনসন। ছবি: এএফপি।
ব্রেক্সিটের জেরে বিদায় নিতে হচ্ছে ডেভিড ক্যামেরনকে। পরবর্তী ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী কে হচ্ছেন, তা নিয়ে দেশে এখন জল্পনার শেষ নেই। এই অবস্থায় আজ একটা বড়সড় বোমা ফাটালেন লন্ডনের প্রাক্তন মেয়র বরিস জনসন।
কনজারভেটিভ পার্টির এই ‘লিভ’পন্থী নেতা সাফ জানিয়ে দিয়েছেন, প্রধানমন্ত্রীর দৌড়ে তিনি একেবারেই নেই। অথচ নতুন প্রধানমন্ত্রী হিসেবে বেশির ভাগ ব্রিটেনবাসীই কিন্তু বরিসের ছবি নিজেদের মনে আঁকতে শুরু করেছিলেন। আজ সেই স্বপ্নে নিজেই জল ঢেলে দিয়েছেন বরিস। ব্রেক্সিটের পরে ব্রিটেনের সামগ্রিক ভবিষ্যৎ আর পরবর্তী প্রধানমন্ত্রীর নাম নিয়ে আজ একটি সাংবাদিক বৈঠক করছিলেন বরিস। সেখানেই সব শেষে তিনি বলেন, ‘‘আপনারা হয়তো অনেক ক্ষণ ধরে এই বক্তৃতার শেষ অংশটা শোনার জন্য অপেক্ষা করছেন। সহকর্মীদের সঙ্গে আলোচনা করে আর পার্লামেন্টের বর্তমান পরিস্থিতি বিচার করে আমি বুঝেছি যে, আমি ওই ব্যক্তি (নয়া প্রধানমন্ত্রী) হতেই পারি না।’’ ঘরে তখন অদ্ভূত নৈঃশব্দ্য। বরিসের এই বিবৃতির কিছু ক্ষণের মধ্যেই অবশ্য ছবিটা আস্তে আস্তে পরিষ্কার হতে শুরু করে।
কারণ তত ক্ষণে প্রধানমন্ত্রিত্বের দৌড়ে নিজের নাম ঘোষণা করে দিয়েছেন আর এক ‘লিভ’পন্থী নেতা, তথা বিচারসচিব মাইকেল গোভ। এই গোভ আর বরিস মিলেই গণভোটের আগে ব্রিটেনের ইইউ ছেড়ে যাওয়া উচিত বলে জোর সওয়াল করেছিলেন। তাই ক্যামেরনের বিদায়ের পরে এঁদের জোটই দেশকে নেতৃত্ব দেবে বলে মনে করা হচ্ছিল। সে ক্ষেত্রে বরিস প্রধানমন্ত্রী আর গোভ অর্থমন্ত্রীর (চ্যান্সেলর অব দ্য এক্সচেকার) গুরুভার সামলাবেন বলে ভাবা হচ্ছিল। কিন্তু বরিস নিজেই সেই সব হিসেব গোলমাল করে দিয়েছেন।
প্রধানমন্ত্রী পদপ্রার্থী হিসেবে নিজের নাম ঘোষণা করার পরে গোভ অবশ্য আজ বলেছেন, ‘‘বারবারই বলছিলাম যে আমি প্রধানমন্ত্রী হতে চাই না। বরিসকে সামনে রেখে আমি পিছনে থেকেই কাজ করতে চাই।
কিন্তু পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে এই সিদ্ধান্ত নিতে বাধ্য হলাম। বরিস গোটা টিমকে নেতৃত্ব দিতে পারবেন না। তাই আমাকেই এই পদের জন্য দাঁড়াতে হচ্ছে।’’ তবে নিজে সরে দাঁড়ালেও দেশকে উজ্জ্বল ভবিষ্যৎ দেওয়ার প্রশ্নে তিনি পিছপা হবেন না বলেই জানিয়েছেন বরিস জনসন। বলেছেন, ‘‘নতুন প্রশাসনকে সব রকমের সাহায্য করাই হবে আমার পরবর্তী পদক্ষেপ।’’
তবে গোভের পক্ষেও এই রাস্তা খুব একটা মসৃণ হবে না। কারণ আজই তাঁর প্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবে নিজের নাম ঘোষণা করেছেন প্রাক্তন স্বরাষ্ট্র সচিব টেরিজা মে। ক্যামেরনের মতোই ইইউ-তে থাকার পক্ষপাতী ছিলেন কনজারভেটিভ নেত্রী টেরিজা। গোভকে হঠাতে পারলে মার্গারেট থ্যাচারের পরে তিনিই হবেন দেশের দ্বিতীয় মহিলা প্রধানমন্ত্রী।
তবে থেরেসাই একা নন। ব্রিটেনের রাজনীতির আকাশে ধীরে ধীরে উজ্জ্বল হচ্ছে আর এক মহিলা রাজনীতিকের নাম। অ্যাঞ্জেলা ইগল। বিরোধী নেত্রী হিসেবে এখন উঠে আসছে তাঁর নামই। পার্লামেন্টে দলের সহকর্মীদের কাছে আস্থা ভোটে হারার পরেও পদত্যাগ করতে রাজি নন জেরেমি করবিন। এই অবস্থায় অ্যাঞ্জেলাই তাঁর দিকে চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিতে পারেন বলে মনে করছে ওয়েস্টমিনস্টার।