ভাঙল ধাতব মিনারের চূড়া

জ্বলছে নোত্র দাম ক্যাথিড্রাল, কাঁদছে প্যারিস

প্যারিসের এই নোত্র দাম ক্যাথিড্রালটি ত্রয়োদশ শতাব্দীতে নির্মিত, মধ্যযুগীয় ক্যাথিড্রালটিকে স্থাপত্য ধর্মের প্রতীক হিসেবে গণ্য করা হয়। 

Advertisement

শ্রেয়স সরকার, গবেষক

প্যারিস শেষ আপডেট: ১৬ এপ্রিল ২০১৯ ০৪:৪২
Share:

লেলিহান: দুপুরে আগুন লাগে প্যারিসের নোত্র দাম ক্যাথিড্রালে।

আজ এক অদ্ভুত দম বন্ধ করা অন্ধকার গোটা শহরটার গলা জড়িয়ে ধরেছে। প্যারিসের বুকে হুহু করে ধোঁয়ার তমস-ছায়া নেমে এসেছে, প্রিয় উপাসনার মন্দিরে। ‘নোত্র দাম’-এর গায়ে বহ্নির কোপ! লেলিহান অগ্নিশিখার আগ্রাসন থেকে তাদের প্রার্থনাকে বাঁচানোর জন্য প্যারিসের অগ্নি-নিয়ন্ত্রণ বিভাগ ভেঙে পড়েছে, প্রাণপণ চেষ্টা চালাচ্ছে। চেষ্টার মধ্যেও সূচ্যগ্র মিনারের অকস্মাৎ পতন। সিয়েন নদীর স্রোতে তার ভয়াবহ ছায়া। অন্য দিকে তার পাশেই প্যারিসবাসীর জনস্রোতে যেন কী এক হাহাকার জাগানো রোদন!

Advertisement

সপ্তাহের প্রথম দিন। বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বাড়ি ফিরছিলাম। নোত্র দাম ক্যাথিড্রাল আমার রোজকার যাত্রাপথের খুব কাছেই। হঠাৎ আকাশে ধোঁয়ার কুণ্ডলী। তার কিছু ক্ষণের মধ্যেই আগুনের লকলকে শিখা। কয়েক মিনিটের মধ্যে পাল্টে গেল প্যারিসের আকাশ।

প্যারিসের এই নোত্র দাম ক্যাথিড্রালটি ত্রয়োদশ শতাব্দীতে নির্মিত, মধ্যযুগীয় ক্যাথিড্রালটিকে স্থাপত্য ধর্মের প্রতীক হিসেবে গণ্য করা হয়। এটি প্যারিসের সব চেয়ে জনপ্রিয় আকর্ষণগুলির মধ্যে একটি, আনুমানিক এক কোটি ত্রিশ লক্ষ দর্শক আসেন প্রতি বছর।

Advertisement

দিল্লি দখলের লড়াই, লোকসভা নির্বাচন ২০১৯

অতীত: নোত্র দাম ক্যাথিড্রালের চূড়া। এএফপি-র ফাইল চিত্র

সাড়ে আটশো বছরেরও বেশি পুরনো গির্জাটিতে কিছু দিন ধরে সংস্কারের কাজ চলছিল। প্রাথমিক ভাবে অনুমান, সেই কাজের সময়েই কোনও ভাবে আগুন লাগে। গির্জা খালি করে দিয়ে আগুন নেভানোর কাজ শুরু হয়েছে। কিন্তু সন্ধে পর্যন্ত আগুন নিয়ন্ত্রণে আসেনি। ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল মাকরঁ-র আজ জাতির উদ্দেশে বক্তৃতা দেওয়ার কথা ছিল। শুনলাম, সেটি বাতিল করে দিয়েছেন তিনি।

আগুন লাগার কিছু ক্ষণের মধ্যেই ভাঙতে শুরু করে ধাতব মিনারের চূড়াটি।

মধ্য প্যারিসের এই এলাকাটি সব সময়ে স্থানীয় মানুষ ও পর্যটকে থিকথিক করে। এলাকাটি যতটা সম্ভব খালি করে দিয়ে যুদ্ধকালীন তৎপরতায় আগুন নেভানোর কাজে নেমেছেন দমকলকর্মীরা। বেশ কিছু ক্ষণ আগুন জ্বলার পরে ভাঙতে শুরু করে প্রাচীন স্থাপত্যের অংশবিশেষ। খবর পেলাম, ভেঙে পড়েছে ক্যাথিড্রালের ধাতব মিনারের চূড়ার পুরো উপরের অংশটি। প্যারিসের মেয়র আন হিদালগো টুইটারে আর্জি জানিয়েছেন, গির্জার কাছাকাছি যাওয়ার কোনও রকম চেষ্টা না-করতে। রাত দশটা পর্যন্ত আগুন আয়ত্তে আসেনি। দমকল প্রধান জঁ ক্লদ গালে আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন, এর পর গির্জার বিশাল ঘণ্টাগুলি ভেঙে পড়তে পারে। তাঁর কথায়, ‘‘আমাদের মূল লক্ষ্য, আগুন যাতে আর ছড়িয়ে না পড়ে, সেটা দেখা। আমরা প্রাণপণ চেষ্টা চালাচ্ছি, যাতে আগুন গির্জার উত্তর অংশে ছড়িয়ে না পড়ে।’’

প্যারিসের স্থানীয় সময় সন্ধে পর্যন্ত আগুন নেভানোর চেষ্টা করছেন দমকলকর্মীরা।

টুইটারে দেখলাম, আগুন লাগার খবর জানাজানি হওয়ার কয়েক মিনিটের মধ্যে টুইট করেছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প-ও। তিনি আবার নিদান দিয়েছেন, ‘‘বিশেষ হেলিকপ্টার থেকে জল ছড়ানো শুরু করুক দমকলবাহিনী।’’

সমগ্র প্যারিসের মনে, এ কেবল ইঁট-পাথর বালির ইমারত নয়, এ হল মনের মন্দির। তাই ভাঙা মনে, ভাঙা দেউলের পাশে দাঁড়িয়ে, সবাই উৎসাহ দিচ্ছে, আশা হারাচ্ছে না কেউ! ডেপুটি স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী লর‌্যাঁ নুনেজ় যদিও মন্তব্য করেছেন ‘গথিক’ স্মৃতিস্তম্ভটি কতটা সংরক্ষণ করা যাবে সে বিষয়ে এখন নিশ্চিত ভাবে আর কিছু বলা যাচ্ছে না।

‘নোত্র দাম’-এ আগুন লাগার খবর জানাজানি হওয়ার কয়েক মিনিটের মধ্যে টুইট করেছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প-ও।

তবুও আশার আলো কি অগ্নির অন্ধকারকে নির্বাপিত করবে না? যে ক্যাথিড্রালের অপরূপ বর্ণনা দিয়েছিলেন ফরাসি কবি ও ঔপন্যাসিক ভিক্তোর উগো, সেই ক্যাথিড্রালকে কি আর ফিরে পাব না আমরা!

ছবি: এপি এবং এফপি

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন