(বাঁ দিক থেকে) বাংলাদেশের সেনাপ্রধান ওয়াকার-উজ-জামান, বাংলাদেশের প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং বাংলাদেশের প্রাক্তন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল। —ফাইল চিত্র।
মার্কিন গুপ্তচর সংস্থা সিআইএ-র নির্দেশেই বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী পদ থেকে আওয়ামী লীগের নেত্রী শেখ হাসিনাকে উৎখাত করার ষড়যন্ত্র হয়েছিল। আর তাতে মুখ্য ভূমিকা নিয়েছিলেন, বাংলাদেশের সেনাপ্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান। হাসিনা জমানায় বাংলাদেশের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী তথা আওয়ামী লীগের প্রথম সারির নেতা আসাদুজ্জামান খান কামাল একটি বইয়ে এমনই দাবি করেছেন বলে নিউজ১৮ প্রকাশিত একটি খবরে দাবি।
এখনও আনুষ্ঠানিক ভাবে সাংবাদিক সহিদুল হাসান খোকন, দীপ হালদার এবং জয়দীপ মজুমদারের লেখা ‘ইনশাআল্লা বাংলাদেশ: দ্য স্টোরি অব অ্যান আনফিনিশড রেভলিউশন’ শীর্ষক বইটি প্রকাশিত হয়নি। তবে জাগারনট পাবলিশার্সের প্রেসে প্রকাশিতব্য বইয়ের অংশবিশেষ ইতিমধ্যেই ফাঁস হয়েছে সংবাদমাধ্যমে। তাতে রয়েছে কামালের সাক্ষাৎ। সেখানে তিনি বলেছেন, ‘‘হাসিনার আত্মীয় ওয়াকার আদতে সিআইএ-র চর। তিনিই হাসিনার পিঠে ছুরি মেরেছিলেন।’’
ঘটনাচক্রে, ২০২৪ সালের ২৩ জুন বাংলাদেশের সেনাপ্রধান পদে ওয়াকারকে নিযুক্ত করেছিলেন তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী হাসিনাই। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ঘিরে তৈরি হওয়া হিংসাত্মক গণবিক্ষোভের জেরে গত বছরের ৫ অগস্ট প্রধানমন্ত্রী পদে ইস্তফা দিয়ে বাংলাদেশ ছেড়েছিলেন হাসিনা। সে সময় সে দেশের বিভিন্ন সংবাদমাধ্যম দাবি করেছিল, জেনারেল ওয়াকারই দ্রুত ইস্তফা দিতে চাপ দিয়েছিলেন হাসিনাকে। তাৎপর্যপূর্ণ ভাবে এর পরে মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তী সরকার একাধিক সামরিক-অসামরিক আধিকারিকের উপর পদক্ষেপ করলেও সেই তালিকায় জেনারেল নেই।
প্রকাশিত খবরে দাবি, বইয়ের লেখকদের আসাদুজ্জামান বলেছেন, “সিআইএ দীর্ঘ সময় ধরে করা পরিকল্পনা করেছিল হাসিনাকে ক্ষমতাচ্যুত করার। আমরা জানতাম না যে সিআইএ-র পকেটে ওয়াকার-ও রয়েছেন। আমাদের প্রতিরক্ষা গোয়েন্দা বাহিনী (ডিজিএফআই), বাংলাদেশ গোয়েন্দা বিভাগের ডিরেক্টর জেনারেল ও বাংলাদেশের প্রিন্সিপাল সিভিলিয়ান ইন্টেলিজেন্স এজেন্সি, জাতীয় নিরাপত্তা বিভাগ কেউই প্রধানমন্ত্রীকে সতর্ক করেননি যে ওয়াকার তাঁর সঙ্গে বিশ্বাসঘাকতা করবেন। হয়তো ওদের শীর্ষকর্তারাও এই ষড়যন্ত্রে শামিল ছিলেন।’’
কিন্তু কেন হঠাৎ আমেরিকা গুপ্তচর বাহিনী বাংলাদেশে পালাবদল ঘটাতে সক্রিয় হল? আসাদুজ্জামানের দাবি, ‘‘মূলত দু’টি কারণে— প্রথমত, দক্ষিণ এশিয়ায় যাতে একাধিক শক্তিশালী রাষ্ট্রনেতা না থাকেন। মোদী, শি জিনপিং, হাসিনার মতো শক্তিধর নেতারা থাকলে সিআইএ কী ভাবে কাজ করবে? দুর্বল সরকার হলেই আমেরিকার স্বার্থপূরণে সুবিধা হয়। দ্বিতীয়ত, সেন্ট মার্টিন দ্বীপ হাতে পাওয়ার জন্য।” প্রসঙ্গত, বাংলাদেশের টেকনাফ থেকে ৯ কিলোমিটার দক্ষিণে এবং মায়ানমার থেকে ৮ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত বঙ্গোপসাগরের এই দ্বীপ তার ভৌগোলিক অবস্থানের জন্যই বিশেষ ভাবে তাৎপর্যপূর্ণ। যে ভাবে চিন ভারত মহাসাগরে নিজেদের প্রভাব বিস্তার করছে, তাতে সেন্ট মার্টিন দ্বীপ আমেরিকার অস্ত্র হয়ে উঠতে পারে। ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পরে হাসিনা অভিযোগ করেছিলেন, ওয়াশিংটনের তরফে তাঁকে বার্তা দেওয়া হয়েছিল, যদি সেন্ট মার্টিন দ্বীপ আমেরিকার হাতে তুলে দেন, তা হলে ঢাকায় ক্ষমতায় থাকতে পারবেন। কিন্তু দেশের সার্বভৌমত্ব রক্ষার জন্য সেই প্রস্তাবে তিনি রাজি হননি।