যুদ্ধ করলে ভারতের অর্থনীতির ক্ষতি হবে, বলছে পাকিস্তান। কিন্তু নওয়াজ জানেন, তাঁর দেশ যুদ্ধের খরচ বহন করার পরিস্থিতিতেও নেই এখন। —ফাইল চিত্র।
স্নায়ুর লড়াইতে দ্বিমুখী নীতি ইসলামাবাদের। এক দিকে যুদ্ধবিমানের মহড়া শুরু করে ইসলামাবাদ বোঝানোর চেষ্টা করছে, ভারত সামরিক পদক্ষেপ নিলে জবাব দিতে প্রস্তুত পাক বাহিনী। অন্য দিকে, নয়াদিল্লি যাতে কোনও সামরিক পদক্ষেপ না নেয়, তা নিশ্চিত করতে মরিয়া চেষ্টা শুরু করেছেন পাক কূটনীতিকরা। ‘যুদ্ধ করার ঝুঁকি ভারত নেবে না’— পাকিস্তান বিদেশ মন্ত্রকের কর্তারা এখন বার বার এই কথাই বলছেন। নিজেদের অর্থনৈতিক অগ্রগতি ধরে রাখার স্বার্থেই নাকি ভারত যুদ্ধ এড়িয়ে যাবে, দাবি তাঁদের। ভারতীয় কূটনীতিকরা বলছেন, আসলে ভারতকে ঘুরপথে যুদ্ধ না করার বার্তা দিতে চাইছে পাকিস্তান।
মাঝ রাতে ইসলামাবাদের আকাশে এফ-১৬ ওড়ানো বা লাহৌর-ইসলামাবাদ হাইওয়েতে যুদ্ধবিমানের অবতরণ— এমন নানা সামরিক কর্মসূচি চলছে ভারতের পশ্চিম সীমান্তের ও পারে। পাক সংবাদমাধ্যমে গরম গরম বিবৃতিও দিচ্ছেন পাক সরকার ও সেনার কর্তারা। কিন্তু যুদ্ধের জন্য নিজেদের যতই প্রস্তুত বলে দাবি করুক পাকিস্তান, সে দেশের নেতৃত্ব যে আতঙ্কে, তা ক্রমেই স্পষ্ট হচ্ছে। পাকিস্তানের কূটনীতিকরা ভারতের সম্ভাব্য পদক্ষেপ সম্পর্কে কী বলছেন, পাক সংবাদমাধ্যমে তা এখন বড় খবর। পাকিস্তানের ‘ডন’ পত্রিকার ওয়েবসাইটে এ সংক্রান্ত একটি প্রতিবেদনে এক নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক পাক কূটনীতিককে উদ্ধৃত করা হয়েছে। সেই কূটনীতিকের মতে, ভারত নিজেদের অর্থনীতির স্বার্থেই পাকিস্তানের সঙ্গে যুদ্ধে জড়াবে না। কারণ যুদ্ধ হলে ভারতের অর্থনীতি ধ্বংস হয়ে যাবে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ওই পাক কূটনীতিক আরও বলেছেন, ‘‘কোনও যুদ্ধ হবে না। যুদ্ধ শুরু করার কোনও ইচ্ছা আমাদের নেই। আর ভারতও বুঝতে পারছে যে এই পরিস্থিতিতে একটা যুদ্ধ তাদের অর্থনীতিকে ধ্বংস করে দেবে।’’
পাক সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত এই প্রতিবেদনকে বিশেষ তাৎপর্যপূর্ণ বলে মনে করছে নয়াদিল্লি। ইসলামাবাদ যতই রণহুঙ্কার দিক, ভারতের সঙ্গে একক সঙ্ঘাতে জড়াতে হলে ফল কী হতে পারে, তা নিয়ে পাকিস্তানের সরকার এবং সেনা যথেষ্ট চিন্তায়, বলছেন ভারতীয় কূটনীতিকরা। অর্থনৈতিক ভাবে ইতিমধ্যেই বিপর্যস্ত পাকিস্তান আন্তর্জাতিক মহলে ‘ব্যর্থ রাষ্ট্র’ তকমা পেয়ে গিয়েছে। বৈদেশিক অনুদান ছাড়া অচল ইসলামাবাদ। সন্ত্রাসের মদতদাতা হিসেবে পরিচিতি তৈরি হওয়ায় সেই সব অনুদানের উৎসও শুকিয়ে আসছে। এই পরিস্থিতিতে যুদ্ধের খরচ জোগানোও যে পাকিস্তানের পক্ষে খুব কঠিন, তা নওয়াজ শরিফ তো জানেনই, জানেন জেনারেল রাহিল শরিফও। তাই ইসলামাবাদ বার বার যুদ্ধ না করার বার্তা দিচ্ছে, বলছেন আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিশারদরা।
আরও পড়ুন: ‘আমাদের সেনা বেশি কথা বলে না, বীরত্বেই জবাব দেয়’
ভারত যাতে যুদ্ধের পথে না হাঁটে, তা নিশ্চিত পাকিস্তান অবশ্য শনিবার থেকেই সচেষ্ট। ভারত যদি পাকিস্তানকে আক্রমণ করে, তা হলে চিন পাকিস্তানের হয়ে লড়বে, এমন বার্তা দেওয়ার চেষ্টা হয়েছে। গত শনিবার পাকিস্তানের পঞ্জাব প্রদেশের মুখ্যমন্ত্রীর দফতর থেকে প্রকাশিত এক বিবৃতিতে জানানো হয়, চিন পাশে দাঁড়ানোর আশ্বাস দিয়েছে। বহিরাগত আক্রমণ হলে চিন পাকিস্তানের পাশে থাকবে বলে চিনা কনসাল জেনারেল পাক পঞ্জাবের মুখ্যমন্ত্রীকে জানিয়েছেন বলে তাঁরা দাবি করেন।
ভারতীয় কূটনীতিকরা বলছেন, চিনা জুজু দেখিয়ে ভারতের আক্রমণের হাত থেকে রেহাই পাওয়ার চেষ্টায় পাকিস্তান। চিন কিন্তু পাকিস্তানের সমর্থনে এখনও কোনও বিবৃতি প্রকাশ করেনি। পাকিস্তান আগ বাড়িয়ে জানাচ্ছে, যুদ্ধ হলে চিন তাদের পাশে থাকবে। ভারতের সামরিক পদক্ষেপকে ভয় পাচ্ছে বলেই ইসলামাবাদকে এমন নানা কৌশল নিতে হচ্ছে বলে ওয়াকিবহাল মহলের মত।