সিন্ধু জলচুক্তি স্থগিত হওয়ায় উদ্বেগ পাকিস্তানে। —ফাইল চিত্র।
ভারত সিন্ধু জলচুক্তি স্থগিত করতেই দৃশ্যত মাথায় হাত পড়েছে পাকিস্তানের। ইসলামাবাদের দাবি, প্রতিটি জলবিন্দুতে তাদের ‘অধিকার’ রয়েছে! ভারতের সিদ্ধান্তকে ‘জল-যুদ্ধ’ হিসাবে দেখতে শুরু করেছে পাকিস্তান সরকার। সে দেশের বিদ্যুৎমন্ত্রী আওয়াইস লেখরি সমাজমাধ্যমে এমনটাই দাবি করেছেন। একই সুর শোনা গিয়েছে পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ় শরিফের বিদেশ উপদেষ্টা সরতাজ আজ়িজ়ের গলাতেও। তাঁরও দাবি, সিন্ধু জলচুক্তি প্রত্যাহার হলে তা ‘যুদ্ধের পদক্ষেপ’ বা পাকিস্তানের বিরুদ্ধে ‘শত্রুতামূলক পদক্ষেপ’ হিসাবে বিবেচনা করা যেতে পারে। সিন্ধুচুক্তি স্থগিত হওয়ার ধাক্কায় জলপ্রবাহ বাধা পেলে কী পরিস্থিতি তৈরি হতে পারে, সেই নিয়ে উদ্বেগ দানা বেঁধেছে ইসলামাবাদে।
বুধবার রাতে পাকিস্তানের বিদ্যুৎমন্ত্রী দাবি করেছেন, “ভারত সিন্ধু জলচুক্তি স্থগিত করা জল-যুদ্ধের শামিল... প্রতিটি জলবিন্দুর উপর আমাদের অধিকার রয়েছে এবং আমরা তা পূর্ণ শক্তিতে রক্ষা করব— আইনত, রাজনৈতিক ভাবে এবং বৈশ্বিক ভাবে।” সিন্ধু জলচুক্তিকে দুই দেশের মধ্যে অন্যতম সফল জলচুক্তি হিসেবে উল্লেখ করেছেন শাহবাজ়ের বিদেশ উপদেষ্টা সরতাজ। তাঁর বক্তব্য, “এই চুক্তি প্রত্যাহার করা হলে তা যুদ্ধের পদক্ষেপ বা পাকিস্তানের বিরুদ্ধে শত্রুতামূলক পদক্ষেপ হিসেবে বিবেচনা করা যেতে পারে।” পাল্টা হুঁশিয়ারির সুরে তিনি জানিয়েছেন, সিন্ধু জলচুক্তি লঙ্ঘন হলে তা একটি আন্তর্জাতিক দৃষ্টান্ত হিসাবে উঠে আসতে পারে। সে ক্ষেত্রে ব্রহ্মপুত্র নদীর জল আটকানোর জন্য চিনও একটি যুক্তিযুক্ত কারণ পেয়ে যাবে বলে মত পাক প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টার।
বস্তুত, ১৯৬০ সালে ভারতের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী জওহরলাল নেহরুর আমলে নয়াদিল্লি এবং ইসলামাবাদের মধ্যে সিন্ধু জলচুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছিল। ওই সময়ে পাকিস্তানের প্রেসিডেন্ট ছিলেন জেনারেল আয়ুব খান। চুক্তি অনুসারে, সিন্ধু এবং তার দুই উপনদী, বিতস্তা (ঝিলম) ও চন্দ্রভাগার (চেনাব) জলের উপরে অধিকার ও কর্তৃত্ব থাকবে পাকিস্তানের। ভারতের নিয়ন্ত্রণে থাকবে সিন্ধুর তিন উপনদী— বিপাশা (বিয়াস), শতদ্রু (সাতলেজ়) এবং ইরাবতীর (রাভি) জলের উপর। সামগ্রিক ভাবে সিন্ধু এবং তার উপনদীগুলির মোট জলের উপর পাকিস্তানের অধিকার ৮০ শতাংশ এবং ভারতের মাত্র ২০ শতাংশ। চুক্তির অন্যতম শর্ত ছিল, ভারত বা পাকিস্তান নিজেদের প্রয়োজনে ওই জল ব্যবহার করলেও কোনও অবস্থাতেই জলপ্রবাহ আটকে রাখতে পারবে না। এই অবস্থায় ভারত সিন্ধুচুক্তি স্থগিত রাখার সিদ্ধান্ত নিতেই পাল্টা ব্রহ্মপুত্রের কথা বলতে শুরু করেছে পাকিস্তান। বস্তুত, ভারতের মোট মিষ্টি জলের ৩০ শতাংশ আসে ব্রহ্মপুত্র থেকে, যা এই অববাহিকা অঞ্চলের কাছে অতি গুরুত্বপূর্ণ।
এই পরিস্থিতিতে বৃহস্পতিবার পাক প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ় শরিফের উপস্থিতিতে বৈঠকে বসতে চলেছে সে দেশের জাতীয় নিরাপত্তা কমিটি। ভারত বুধবার রাতে পাকিস্তানের উপর প্রত্যাঘাত করার কিছু ক্ষণ পরেই এই বৈঠকের সিদ্ধান্ত নেয় পাকিস্তান। নয়াদিল্লির প্রত্যাঘাতের পরবর্তী পদক্ষেপের বিষয়ে ওই বৈঠকে আলোচনা করতে পারে পাকিস্তানের প্রশাসন। জাতীয় নিরাপত্তা কমিটির বৈঠক প্রসঙ্গে পাক উপপ্রধানমন্ত্রী মহম্মদ ইশক দার বৃহস্পতিবার বলেন, ‘‘ভারতের প্রতিটি পদক্ষেপের কড়া এবং উপযুক্ত জবাব দেওয়া হবে।’’