নেটোর ধাঁচে আরব-ইসলামিক জোট তৈরির প্রস্তাব পাকিস্তানের। গ্রাফিক: আনন্দবাজার ডট কম।
৪০টির বেশি আরব এবং ইসমালিক দেশের নেতাদের দোহা সম্মেলন কি ভারতের কাছে পরোক্ষ ভাবে কোনও বিপদের সঙ্কেত? না কি শুধু ইজ়রায়েলি হামলা প্রতিরোধই উদ্দেশ্য? এমনই নানা প্রশ্ন ঘুরছে। শোনা যাচ্ছে, ইসলামিক এবং আরব দেশগুলি নেটোর ধাঁচে সামরিক জোট তৈরি করতে চাইছে। এই জোটে পাকিস্তানের উপস্থিতি কি ভারতের চিন্তা বাড়াল?
কাতারের রাজধানী দোহায় যে সম্মেলনের আয়োজন করা হয়েছিল তাতে যোগ দিয়েছিল পাকিস্তান। শুধু তা-ই নয়, ছিল নেটোর সদস্য তুরস্কও। ভারত-পাক সাম্প্রতিক সামরিক সংঘাতের সময় বার বার ইসলামাবাদকে সমর্থনকে করে নয়াদিল্লির বিরুদ্ধে সুর চড়িয়েছিল তারা। ফলে এই দুই দেশের উপস্থিতি আরব-ইসলামিক দেশের নেটো তৈরির সম্ভাবনা ভারতের কাছে বিপদ হতে পারে বলে ধারণা অনেকের।
দোহার সম্মেলনের মূল উদ্দেশ্যই ছিল ইজ়রায়েল হামলার নিন্দা করা। সেই সম্মেলনে উপস্থিত হয়ে পাক বিদেশমন্ত্রী তথা উপ-প্রধানমন্ত্রী ইশাক দার বলেন, ‘‘ইসলামিক দেশগুলিতে আক্রমণ এবং মানুষ হত্যা করার পর কোনও ভাবেই পার পেতে পারে না ইজ়রায়েল।’’ শুধু তা-ই নয়, ‘ইজ়রায়েলি নকশা’ পর্যবেক্ষণের জন্য ‘আরব-ইসলামিক টাস্ক ফোর্স’ গঠনের কথাও তোলে পাকিস্তান। পাশাপাশি, রাষ্ট্রপুঞ্জের নিরাপত্তা পরিষদে সৌদি আরবকে সমর্থন করার কথাও জানায় তারা।
ওই সম্মেলনে ইজ়রায়েল-বিরোধী স্লোগান তুলেও থেমে যায় তুরস্ক। উল্টে তারা ইজ়রায়েলের উপর আর্থিক চাপ তৈরি করার পথে হাঁটার দাবি তোলে। দোহার সম্মেলন ইজ়রায়েল হামলার বিরুদ্ধে হলেও তা ভারতের উদ্বেগের কারণ হতে পারে বলেই মত অনেকের। তাঁদের মতে, পাকিস্তানের সক্রিয় অবস্থান কেবল আলোচনার মধ্যে সীমাবদ্ধ না-ও থাকতে পারে। ইসলামাবাদ এই জোটকে নিজেদের স্বার্থে ব্যবহার করতে পারে। রাষ্ট্রপুঞ্জের নিরাপত্তা পরিষদ-সহ বিভিন্ন জায়গায় কাশ্মীর সমস্যাকে আন্তর্জাতিককরণ করার চেষ্টা করবে, এমন আশঙ্কাও করা হচ্ছে।
নেটো হল এমন সামরিক জোট, যেখানে কোনও সদস্যের উপর আক্রমণ বা হামলাকে জোটের উপর হামলা হিসাবে দেখা হয়। অনেকের মতে, আরব-ইসলামিকও যদি এ ধরনের কোনও জোট তৈরি করে তবে তা থেকে সুবিধা নেওয়া চেষ্টা করবে পাকিস্তান। কারণ, কাশ্মীর সমস্যা বা পাকিস্তানের মাটিতে জঙ্গিদমনের মতো ভারতের পদক্ষেপকে ‘হামলা’ হিসাবে আন্তর্জাতিক মহলে তুলে ধরার চেষ্টা অব্যাহত রাখবে ইসলামাবাদ।
এ ছাড়াও, তেল আভিভের সঙ্গে নয়াদিল্লির সুসম্পর্ক বজায় রাখার পদক্ষেপকে ভারতের বিরুদ্ধেই কাজে লাগানোর প্রয়াস করতে পারে ইসলামাবাদ, এমন আশঙ্কাও উড়িয়ে দিচ্ছে না ওয়াকিবহাল মহল। তবে আশার আলো রয়েছে। সৌদি আরব, সংযুক্ত আরব আমিরশাহি বা মিশরের মতো দেশগুলি সঙ্গে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক নয়াদিল্লির কাছে ‘তুরুপের তাস’ হতে পারে। তাই আরব-ইসলামিক দেশের জোট কেবল ইজ়রায়েলি হামলার দিকে কেন্দ্রীভূত থাকবে বলে মনে করছেন কেউ কেউ।