Narendra Modi

করোনা-মঞ্চেও কাশ্মীর প্রসঙ্গ তুলল পাকিস্তান

সার্ক-এর নেতাদের সামনে ফের চলে এল ভারত-পাকিস্তান দ্বিপাক্ষিক সংঘাতের বিষয়টি।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ১৬ মার্চ ২০২০ ০২:৫৫
Share:

নরেন্দ্র মোদী ও পাক প্রতিনিধি জাফর মির্জা। পিটিআই ও ফাইল চিত্র

করোনাভাইরাসের প্রকোপ ঠেকানোর কৌশল তৈরি করতে সার্কভুক্ত রাষ্ট্রনেতাদের এক মঞ্চে এনে ভিডিয়ো সম্ম‌েলন করলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। সেখানেই করোনা-মোকাবিলায় একটি যৌথ তহবিল গড়ার প্রস্তাব দিলেন তিনি। জানালেন, সার্কভুক্ত দেশগুলি প্রয়োজন মতো করোনা-মোকাবিলায় এই তহবিলের টাকা ব্যবহার করতে পারবে। কিন্তু এমন একটি মঞ্চেও কাশ্মীর প্রসঙ্গ তুলে তাল কাটল পাকিস্তান। সার্ক-এর নেতাদের সামনে ফের চলে এল ভারত-পাকিস্তান দ্বিপাক্ষিক সংঘাতের বিষয়টি।

Advertisement

আজ সম্মেলনের প্রায় শেষ লগ্নে বৈঠকে উপস্থিত পাক প্রতিনিধি, সে দেশের প্রধানমন্ত্রীর স্বাস্থ্য বিষয়ক বিশেষ উপদেষ্টা জাফর মির্জা বলেন, ‘‘ভারত অধিকৃত জম্মু ও কাশ্মীরে যে-নিষেধাজ্ঞা রয়েছে, তা অবিলম্বে তুলে নেওয়া জরুরি। করোনাভাইরাসের মোকাবিলা করার জন্যও এর প্রয়োজন অনস্বীকার্য। তা না-হলে সেখানে ওষুধপত্র পৌঁছনো, ত্রাণ বণ্টনের ক্ষেত্রে সমস্যা হচ্ছে।’’

স্বাভাবিক ভাবেই সম্মেলনের শেষতম বক্তা জাফরের এই মন্তব্যকে প্রকাশ্যে গুরুত্ব দেননি প্রধানমন্ত্রী। কূটনৈতিক সূত্রের বক্তব্য, এই পরিস্থিতি যে ভারতের জন্য অপ্রত্যাশিত, তা-ও নয়। বরং তা ভারত-পাক সম্পর্কের ধারাবাহিকতাকেই প্রমাণ করল। সার্ক-এর অন্য দেশগুলির প্রত্যেক নেতা আজ তাঁদের বক্তৃতার গোড়াতেই মোদীকে ধন্যবাদ দিয়েছেন এই উদ্যোগের জন্য। ব্যতিক্রম পাক প্রতিনিধি। তিনি তাঁর বক্তৃতা শুরুই করেছেন অসুস্থতা কাটিয়ে ফিরে আসা নেপালের প্রধানমন্ত্রী কে পি ওলির স্বাস্থ্য কামনা করে। তাঁর বক্তৃতায় প্রচ্ছন্ন থেকেছে দীর্ঘদিন সার্ক সম্মেলন হতে না-দেওয়ার জন্য ভারতের প্রতি অভিযোগ।

Advertisement

জাফর মির্জার কথায়, ‘‘শেষ বারের মতো সার্ক সম্মেলন হয়েছিল ২০১৪ সালে, নেপালে। গোটা বিশ্বে এই সার্ক অঞ্চলের দেশগুলিই ঐক্যের অভাবে ভোগে। স্বাস্থ্য এবং আঞ্চলিক মেকানিজমগুলিও বহুবিভক্ত হয়ে রয়েছে। জনস্বাস্থ্যের খাতিরেই এ বার একটা সুযোগ দেওয়া হোক একত্র হওয়ার।’’ ভারতের নেতৃত্বকে কার্যত অগ্রাহ্য করে জাফর আজ একাধিক বার আবেদন করেছেন বন্ধ থাকা সার্ক

সচিবালয়কে ফের জাগিয়ে তুলতে। তাঁর কথায়, ‘‘আমরা জানি সার্ক সচিবালয় এই অঞ্চলের অত্যন্ত প্রয়োজনীয় একটি মঞ্চ। তাকে আবার কাজে লাগানো উচিত।’’

কূটনীতিকদের মতে, আজকের সম্মেলনে পাকিস্তানের সঙ্গে বাগযুদ্ধে যাওয়া সম্ভব ছিল না মোদীর। তা তিনি যানওনি। কিন্তু পাকিস্তানকে সঙ্গে নিয়ে অদূর ভবিষ্যতে এই যৌথ প্রয়াস কত দূর সফল হবে, তা নিয়ে সংশয় রয়েছে সাউথ ব্লকের। প্রধানমন্ত্রী যখন দু’দিন আগে সার্কগোষ্ঠীভুক্ত দেশগুলিকে আমন্ত্রণ জানিয়েছিলেন, তখনই বোঝা গিয়েছিল, এই বিপর্যয় মোকাবিলার ডাকে ইসলামাবাদ সাড়া হয়তো দেবে, কিন্তু একে কাজে লাগিয়ে কাশ্মীর প্রসঙ্গ তুলে দিল্লিকে অস্বস্তিতে ফেলতেও ছাড়বে না। এই প্রশ্নও ওঠে যে, অতীতে পাকিস্তানকে এড়িয়ে এই অঞ্চলে যৌথ পদক্ষেপ করতে বিমস্টেকভুক্ত দেশগুলিকে বেছেছেন মোদী (ওই গোষ্ঠীতে পাকিস্তান নেই)। তা হলে কেন এ ক্ষেত্রে ইমরান সরকারকে আমন্ত্রণ? সরকারের তরফে বলা হচ্ছে, ভারত যে রাজনীতির ঊর্ধ্বে উঠতে চায়, সেটা বোঝাতে চেয়েছেন মোদী। তাই করোনা মোকাবিলায় একটি তহবিল গড়ার প্রস্তাব এবং তাতে প্রাথমিক ভাবে ১ কোটি মার্কিন ডলার দেওয়ার কথাও জানান তিনি।

গত ছ’বছর সার্ক সম্মেলন স্থগিত হয়ে রয়েছে ভারত-পাক সম্পর্কের কারণেই। গত অগস্টে জম্মু ও কাশ্মীর থেকে ৩৭০ অনুচ্ছেদ প্রত্যাহার করার পর থেকে পাকিস্তান অতি আক্রমণাত্মক হয়ে বিভিন্ন মঞ্চে বিষয়টি নিয়ে সরব হচ্ছে। যে হেতু পরবর্তী সার্ক সম্মেলন ইসলামাবাদে হওয়ার কথা, তাই তারা এখন মরিয়া।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন