দ্বিপাক্ষিক আলোচনার মধ্যেই ফের উত্তপ্ত পাক-আফগান সীমান্ত। —প্রতিনিধিত্বমূলক চিত্র।
সীমান্তে উত্তেজনা প্রশমন করতে পারস্পরিক আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছে পাকিস্তান এবং আফগানিস্তান। শনিবার তুরস্কের ইস্তানবুলে দুই দেশের প্রতিনিধিরা দ্বিতীয় দফার বৈঠকে বসেছিলেন। তার মধ্যে ফের আফগান সীমান্তে পাক সেনা এবং জঙ্গিদের মধ্য সংঘর্ষ হয়েছে বলে রবিবার দাবি করল ইসলামাবাদ। পাক সেনার তরফে জানানো হয়েছে, শুক্র এবং শনিবার পাকিস্তানের কুররম এবং উত্তর ওয়াজ়িরিস্তান জেলায় আফগান সীমান্ত পেরিয়ে অনুপ্রবেশের চেষ্টা করে জঙ্গিরা। পাক সেনা বাধা দিতে গেলে দু’পক্ষের সংঘর্ষ হয়। এই সংঘর্ষে পাঁচ পাক সেনা এবং ২৫ জন জঙ্গির মৃত্যু হয়েছে বলে জানিয়েছে পাকিস্তান।
এই ঘটনার কথা উল্লেখ করে সন্ত্রাসবাদ দমনে আফগানিস্তানের তালিবান সরকারের সদিচ্ছা এবং অভিপ্রায় নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে পাকিস্তান। তবে এখনও এই বিষয়ে তালিবানের তরফে মুখ খোলা হয়নি। তবে আফগানিস্তানের বিরুদ্ধে জঙ্গিদের আশ্রয় দেওয়ার যে অভিযোগ পাকিস্তান তুলেছে, তা বার বার খারিজ করে দিয়েছে তালিবান সরকার।
পাকিস্তানে দীর্ঘ দিন ধরে সক্রিয় তেহরিক-ই-তালিবান পাকিস্তান বা টিটিপি। আফগানিস্তানে যে তালিবান ক্ষমতাসীন, তাদেরই একটি শাখা পাকিস্তানি তালিবান। ইসলামাবাদের দাবি, আফগানিস্তান এবং ভারতের মদতে এই গোষ্ঠী পাকিস্তানের মাটিতে সন্ত্রাসবাদী কার্যকলাপ চালায়। কাবুল এবং নয়াদিল্লি বার বার এই দাবি অস্বীকার করেছে। চলতি মাসের শুরুতে আফগানিস্তানের সঙ্গে সীমান্তে পাকিস্তানি সেনার যে সংঘর্ষ শুরু হয়েছিল, তার নেপথ্যেও ছিল এই গোষ্ঠী। সম্প্রতি একটি ভিডিয়োবার্তায় টিটিপি-র অন্যতম শীর্ষনেতা আহমদ কাজ়িম হুঁশিয়ারি দেন পাক সেনাপ্রধান আসিম মুনিরকে। পাক সেনাপ্রধানের উদ্দেশে তাঁকে বলতে শোনা যায়, ‘‘জওয়ানদের ভেড়ার মতো মরতে পাঠাচ্ছেন। আপনি যদি সত্যিকারের মানুষ হন, আমাদের সামনে এসে দাঁড়ান।’’ গত ৮ অক্টোবর পাকিস্তানের সেনাঘাঁটিতে একটি জঙ্গিহামলায় ১১ জনের মৃত্যু হয়েছিল। এই ভিডিয়োয় সেই ফুটেজ দেখিয়ে হামলার দায় স্বীকারও করেছে টিটিপি।
আফগানিস্তানের রাজধানী কাবুলে পাকিস্তানের বিমান হামলা এবং তার পরবর্তী সময়ে তালিবান সরকারের জবাব দুই দেশের সীমান্তকে উত্তপ্ত করে তুলেছিল। বর্তমানে দুই দেশের মধ্যে সংঘর্ষবিরতি নিয়ে সমঝোতা হয়েছে। তবে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক এখনও তলানিতে। গত ১৮ অক্টোবর কাতারের রাজধানী দোহাতে প্রথম দফার বৈঠকে বসেছিল পাকিস্তান এবং আফগানিস্তান। ওই বৈঠকের নেতৃত্বে ছিলেন আফগানিস্তান ও পাকিস্তান দুই দেশের প্রতিরক্ষামন্ত্রী মৌলবি মহম্মদ ইয়াকুব মুজাহিদ ও খোয়াজা আসিফ। তবে দীর্ঘ বৈঠকের পরেও কোনও সিদ্ধান্তে পৌঁছোতে পারেনি কাবুল এবং ইসলামাবাদ।