পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ় শরিফ। —ফাইল চিত্র।
সৌদি আরবের সঙ্গে ‘কৌশলগত এবং পারস্পরিক’ প্রতিরক্ষা চুক্তি স্বাক্ষর করেছে পাকিস্তান। এ বার সেই চুক্তিতেই আরও কয়েকটি দেশকে তারা টানতে চাইছে। পাকিস্তানের প্রতিরক্ষামন্ত্রী খোয়াজা আসিফ জানিয়ে দিলেন, ‘দরজা’ খোলা আছে। সৌদি আরবের সঙ্গে ভারতের সম্পর্ক যথেষ্ট বন্ধুত্বপূর্ণ। পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ় শরিফ সে দেশের যুবরাজ মহম্মদ বিন সলমনের সঙ্গে দেখা করে গত বুধবার যে প্রতিরক্ষা চুক্তিতে স্বাক্ষর করেছেন, তার শর্ত অনুযায়ী, কোনও একটি দেশ অন্য কোনও দেশের আগ্রাসনের শিকার হলে তা উভয় দেশের উপরেই আঘাত হিসাবে বিবেচনা করা হবে। বিশেষজ্ঞদের অনেকে মনে করছেন, এই চুক্তির ফলে ভারতের সমস্যা হতে পারে। আরও দেশ পাকিস্তানের সঙ্গে এই প্রতিরক্ষা চুক্তিতে প্রবেশ করলে তা নয়াদিল্লির উদ্বেগের কারণ হবে বলেই তাঁদের মত।
সৌদি-পাক প্রতিরক্ষা চুক্তির পর পাকিস্তানের প্রতিরক্ষামন্ত্রী সে দেশের সংবাদমাধ্যম জিও নিউজ়-কে একটি সাক্ষাৎকার দিয়েছেন। সেখানে তাঁকে প্রশ্ন করা হয়েছিল, আরও দেশ সৌদি-পাক চুক্তির সঙ্গে যুক্ত হতে পারে কি না। বিশেষত আরব দেশগুলির কথা উল্লেখ করা হয়েছিল। পাক মন্ত্রী বলেন, ‘‘এখনই এই প্রশ্নের উত্তর দিতে পারছি না। তবে এটুকু বলতে পারি, দরজা কারও জন্য বন্ধ নেই।’’ মুসলিমপ্রধান দেশগুলির নিরাপত্তার কথা উল্লেখ করে আসিফ আরও বলেন, ‘‘নিজেদের এলাকা, দেশ এবং জাতিকে রক্ষা করা যে কোনও রাষ্ট্র ও তার জনগণের, বিশেষত মুসলিম জনগোষ্ঠীর মৌলিক অধিকার বলে আমি মনে করি।’’
পাক প্রতিরক্ষামন্ত্রী আলাদা করে কোনও দেশের নাম করেননি। তবে মনে করিয়ে দিয়েছেন, সৌদির সঙ্গে পাকিস্তানের চুক্তিতে এমন কোনও শর্ত ছিল না যাতে বলা হচ্ছে, অন্য কোনও দেশ যোগ দিতে পারবে না। পাকিস্তান অনুরূপ চুক্তি অন্য আর কোনও দেশের সঙ্গে আলাদা করে স্বাক্ষর করতে পারবে না, এমন কথাও কোথাও বলা নেই। ফলে চাইলেই অন্য যে কোনও দেশের সঙ্গে প্রতিরক্ষা চুক্তি স্বাক্ষর করতে পারে ইসলামাবাদ।
পাকিস্তান পরমাণু শক্তিধর দেশ। তাদের সঙ্গে প্রতিরক্ষা চুক্তি স্বাক্ষর করায় আগামী দিনে সঙ্কটের পরিস্থিতিতে কি সৌদিও পরমাণু অস্ত্র ব্যবহার করতে পারবে? প্রশ্নের জবাবে পাক মন্ত্রী বলেন, ‘‘আমাদের কাছে যা আছে, আমাদের যতটা ক্ষমতা, এই চুক্তির অধীনে সবটাই ব্যবহার করা যাবে। কিন্তু পরমাণু অস্ত্রের বিষয়ে পাকিস্তান দায়িত্বশীল। এটাও বলে রাখা প্রয়োজন।’’
পশ্চিম এশিয়ায় যুদ্ধরত ইজ়রায়েলকে বার্তা দিতে পাকিস্তান এবং সৌদি আরব এই প্রতিরক্ষা চুক্তি স্বাক্ষর করেছে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞদের কেউ কেউ। কিছু দিন আগে কাতারে ইজ়রায়েলের হামলার পরে এই চুক্তির তাৎপর্য আরও বেড়ে গিয়েছে। দাবি, পরমাণু শক্তিধর পাকিস্তানকে পাশে নিয়ে ইজ়রায়েলের বিরুদ্ধে শক্তি বৃদ্ধি করবে সৌদি। পাক মন্ত্রীকে সে বিষয়েও প্রশ্ন করা হয়েছিল। তিনি জানান, কোনও নির্দিষ্ট দেশ এই চুক্তির নিশানা নয়। সঙ্কটের পরিস্থিতিতে একে অপরের পাশে থাকাই লক্ষ্য। যৌথ ভাবে যে কোনও আগ্রাসনের মোকাবিলা করা হবে।
সৌদি-পাক চুক্তি নিয়ে বৃহস্পতিবার সকালেই বিবৃতি দিয়ে ভারতের বিদেশ মন্ত্রক জানিয়েছে, এ বিষয়ে তারা অবগত। ভারতের জাতীয় স্বার্থ এবং আঞ্চলিক নিরাপত্তা বিবেচনা করে এই চুক্তির প্রভাব খতিয়ে দেখবে নয়াদিল্লি। প্রাথমিক ভাবে সৌদি-পাক চুক্তির শর্ত শুনে ভারত নিয়ে অনেকে উদ্বিগ্ন হলেও বিশেষজ্ঞদের অনেকেরই ধারণা, ভারতের সঙ্গে এত সহজে বিবাদে জড়াতে চাইবে না সৌদি। সংবাদ সংস্থা রয়টার্সের এই সংক্রান্ত প্রশ্নের উত্তরে সতর্ক জবাব দিয়েছেন সে দেশের আধিকারিক। মেনে নিয়েছেন, ভারত এবং পাকিস্তানের মধ্যে ভারসাম্য বজায় রেখে চলতে হবে তাঁদের। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক সৌদির ওই আধিকারিক বলেছেন, ‘‘নির্দিষ্ট কোনও দেশ বা নির্দিষ্ট কোনও ঘটনার জবাব দিতে সৌদি-পাক প্রতিরক্ষা চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়নি। ভারতের সঙ্গে আমাদের সম্পর্ক অনেক দৃঢ় হয়েছে। আগামী দিনে এই সম্পর্কের বাঁধন যাতে আরও শক্ত হয়, আঞ্চলিক শান্তি যাতে বজায় থাকে, আমরা সেই চেষ্টা করব।’’