অন্য ভূমিকায়: মেয়েকে নিয়ে টিভির পর্দায় উপস্থাপিকা। ছবি: টুইটার।
প্রতিবাদের মাত্রা বাড়ছে ক্রমশ। থমথম করছে পাক পঞ্জাব প্রদেশের কসুর জেলা। এখানকার আট বছরের শিশু জাইনাবকে ধর্ষণ করে খুনের ঘটনায় শুরু হয়েছে তীব্র বিক্ষোভ। ‘জাস্টিস ফর জাইনাব’ দাবিতে মুখর গোটা দেশ। বুধবার পাকিস্তানের সমা টিভি চ্যানেলের উপস্থাপিকা কিরন নাজ খবর পাঠ করার সময়ে নিজের শিশুকন্যাকে কোলে নিয়ে পর্দায় হাজির হন। সে দৃশ্য ভাইরাল হয়েছে।
আজ খবরের বুলেটিন শুরুর আগে মেয়েকে কোলে নিয়ে তিনি বলেন, ‘‘আজ আমি কিরন নাজ নই। আজ আমি এক জন মা। তাই এখানে আমার মেয়েকে নিয়ে বসে আছি।’’ দেড় মিনিটের বয়ানে কিরান বোঝান, এই ঘটনায় তিনি বিধ্বস্ত। তাঁর কথায়, ‘‘কেউ যখন বলেন, ছোট্ট কফিনগুলোই সব চেয়ে ভারী, ঠিকই বলেন। গোটা পাকিস্তান ভারাক্রান্ত সেই ছোট্ট মেয়েটির কফিনের ভারে।’’
কিরন বলেন, ‘‘জাইনাবের মা-বাবা যখন কন্যার দীর্ঘজীবন চেয়ে সৌদি আরবে প্রার্থনা করছেন, তখন পাকিস্তানে একটা দৈত্য ধর্ষণ করে তার দেহ ছুড়ে ফেলছে আবর্জনার স্তূপে। এর চেয়ে ভাগ্যের পরিহাস আর কী-ই বা হতে পারে! এটা শুধু একটা বাচ্চার ধর্ষণ ও খুন নয়, আমাদের সমাজ, মানবতাই খুন হয়েছে।’’
জাইনাবের বাবা মহম্মদ আমিন ক্ষুব্ধ পুলিশের অপদার্থতায়। প্রথম থেকেই প্রশ্ন উঠেছে সিসিটিভি ফুটেজে মেয়েটিকে অজ্ঞাতপরিচয় এক ব্যক্তির সঙ্গে দেখা গেলেও পুলিশ কিছু করতে পারছে না কেন? ময়নাতদন্তের রিপোর্টে জানা গিয়েছে, জাইনাবকে বেশ কয়েক বার ধর্ষণ করা হয়েছিল। তার পরে গলা টিপে মেরে ফেলা হয়। তার মুখে নির্যাতনের স্পষ্ট চিহ্ন।
আমিন বলছেন, ‘‘মেয়েকে যখন অপহরণ করা হল, তখনই যদি পুলিশ কিছু করত, তা হলে হয়তো ওকে মরতে হতো না।’’ পুলিশে আস্থা নেই জানিয়ে মেয়ের বাবা বলছেন, ‘‘ঘটনার প্রতিবাদ করছে যারা, তাদের উপরে গুলি চালাতে দেরি করেনি পুলিশ। কিন্তু অপহরণকারীকে খুঁজে পেল না।’’ পাক সেনাপ্রধান এবং প্রধান বিচারপতির কাছে জাইনাবের খুনের বিচার চান তিনি। মেয়ের মা-ও বলেছেন, ‘‘বিচার চাই। আর কিছু বলার নেই।’’ এর পরেই নড়ে বসে প্রশাসন। লাহৌর হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতি মনসুর আলি শাহ শাহবাজ বিষয়টি নজরে রাখছেন। আইএসআই এবং সামরিক গোয়েন্দাদের সেনাপ্রধান বলেছেন অপরাধীকে খোঁজার কাজে পুলিশকে সহায়তা করতে। অপরাধীর খোঁজ দিলে ১ কোটি টাকা পুরস্কার ঘোষণা করেছেন পঞ্জাবের মুখ্যমন্ত্রী শাহবাজ শরিফ।
সিনিয়র পুলিশ অফিসার জুলফিকার হামিদ বলেন, ‘‘এর পিছনে এক সিরিয়াল কিলার-এর হাত আছে বলে মনে হচ্ছে। আমাদের ধারণা, কাসুরে এমন আরও আটটি খুনে এই অপরাধীর হাত আছে।’’ স্থানীয় সংবাদমাধ্যমে দাবি, এই নিয়ে গত এক বছরে কাসুরে এই রকম ১২টি খুনের ঘটনা ঘটেছে। ২০১৫ সালেও কাসুর শিরোনামে এসেছিল। তখন শিশু যৌন চক্র চালানোর অভিযোগে ধরা প়ড়ে বিকৃতকামী এক দল।
বই পড়তে, লিখতে ভালবাসত ছোট্ট জাইনাব। অপহরণের আগে তার উর্দু খাতায় কচি হাতে লেখা প্রকাশ করেছে একটি পাক চ্যানেল। জাইনাব নিজের পরিচয় দিয়ে সেখানে লিখেছে, ‘‘আমি আম ভালবাসি।’’ জাইনাবের দিদি বলছেন, ‘‘ওর সঙ্গে যা হয়েছে, কারও সঙ্গে যেন না হয়। বিচার না পেলে আমাদের লড়াই থামবে না।’’