দেশের সব প্রদেশকে ভেঙে টুকরো করতে চায় পাকিস্তান। গ্রাফিক: আনন্দবাজার ডট কম।
‘সুশাসনে’র লক্ষ্যে প্রদেশের সংখ্যা বৃদ্ধি করতে চাইছে পাকিস্তান! রবিবার রাতে পাকিস্তানের শেখপুরার একটি সভায় সে দেশের যোগাযোগমন্ত্রী আব্দুল আলিম খান বলেন, “পাকিস্তানে ছোট ছোট প্রদেশ অবশ্যই তৈরি করা হবে।” এর ফলে প্রদেশগুলিতে প্রশাসনিক কার্যকারিতা আরও বৃদ্ধি পাবে বলে জানান তিনি। নাগরিকেরাও আরও ভাল পরিষেবা পাবেন বলে দাবি করেন পাক মন্ত্রী।
১৯৪৭ সালে স্বাধীনতার পর পাকিস্তানে পাঁচটি প্রদেশ ছিল। পূর্ব বঙ্গ (১৯৫৬ সালের পর পূর্ব পাকিস্তান), পশ্চিম পঞ্জাব, সিন্ধ, বালোচিস্তান এবং নর্থ-ওয়েস্ট ফ্রন্টিয়ার প্রভিন্স। ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের পর পূর্ব বঙ্গ স্বাধীন বাংলাদেশ হিসাবে স্বীকৃতি পায়। তার পর থেকে পাকিস্তানে চারটি প্রদেশ রয়েছে। মাঝে কেবল পশ্চিম পঞ্জাবের নাম বদলে পঞ্জাব হয়েছে আর নর্থ-ওয়েস্ট ফ্রন্টিয়ার প্রভিন্সের নতুন নামকরণ হয়েছে খাইবার পাখতুনখোয়া।
পাকিস্তানের যোগাযোগমন্ত্রী চারটি প্রদেশ ভেঙেই প্রতিটিতে তিনটি করে নতুন প্রদেশ গঠনের কথা বলেছেন। মন্ত্রীর দাবি মোতাবেক, অদূর ভবিষ্যতে পাকিস্তানে ১২টি প্রদেশ তৈরি হতে চলেছে। পাক সংবাদসংস্থা জিও টিভি-কে মন্ত্রী বলেছেন, “প্রতিবেশী দেশগুলিতে অনেক ছোট প্রদেশ রয়েছে।”
তবে শাহবাজ় শরিফ সরকারের মন্ত্রী কেন নতুন প্রদেশ গঠনের কথা বলছেন, তা অবশ্য স্পষ্ট নয়। সে দেশের একাংশের দাবি, ‘বিদ্রোহী’ দুই প্রদেশ বালোচিস্তান এবং খাইবার পাখতুনখোয়াকে ‘জব্দ’ করতেই এই পন্থা নিচ্ছে ইসলামাবাদ। গত কয়েক বছর ধরেই বালোচ বিদ্রোহীদের কার্যকলাপে বালোচিস্তানে কোণঠাসা পাক সেনা। তা ছাড়া বালোচিস্তান এবং খাইবার পাখতুনখোয়া— দুই প্রদেশেই সক্রিয় জঙ্গি সংগঠন তেহরিক-ই-তালিবান পাকিস্তান (টিটিপি)। বিদ্রোহীদের দমন করতেই পাক সেনা এবং শাহবাজ়ের সরকার নতুন প্রদেশ গঠনের পথে হাঁটতে পারে বলে মনে করছেন অনেকে। আর একটি অংশের মত, এই সিদ্ধান্তের নেপথ্যে যতটা না সরকারের হাত রয়েছে, তার চেয়ে বেশি রয়েছে আসিম মুনিরের নেতৃত্বাধীন পাক সেনার হাত।
যদিও এই সিদ্ধান্ত কার্যকর করা খুব একটা সহজ হবে না বলেই মনে করা হচ্ছে। পাকিস্তানের শাসকজোটের গুরুত্বপূর্ণ শরিক পাকিস্তান পিপল্স পার্টি (পিপিপি) ইতিমধ্যেই জানিয়ে দিয়েছে তারা সিন্ধ প্রদেশ ভেঙে ছোট প্রদেশ গঠনের বিপক্ষে। সিন্ধ প্রদেশে পিপিপি-ই সবচেয়ে শক্তিশালী দল। এই প্রদেশের মুখ্যমন্ত্রীও ওই দলের। এই পরিস্থিতিতে ক্ষমতার বণ্টন চাইছে না বিলাবল ভুট্টো জ়ারদারির দল পিপিপি। গত মাসেই সিন্ধের মুখ্যমন্ত্রী মুরাদ আলি শাহ হুঁশিয়ারির সুরে জানিয়েছেন, পঞ্জাব বা পাকিস্তানের স্বার্থবিরোধী কোনও কাজ বরদাস্ত করবেন না তাঁরা।