পর্তুগালের মেষপালক ভাইবোন সন্ত

মেষ চরিয়ে বেড়াত ছেলেমেয়েগুলো। পেটে তেমন বিদ্যেবুদ্ধি নেই। পর্তুগালের ফতিমা শহরে তারা চাক্ষুষ দেখেছিল যিশু-জননী মেরিকে। এক বার নয়, অন্তত ছ’বার— এমনটাই দাবি করা হচ্ছে। ঘটনাটি একশো বছর আগেকার। শনিবার সেই ঘটনার কথা মনে করেই ওই দুই শিশুকে সন্ত ঘোষণা করলেন পোপ ফ্রান্সিস।

Advertisement

সংবাদ সংস্থা

লিসবন শেষ আপডেট: ১৪ মে ২০১৭ ১৪:২৭
Share:

ফ্রান্সিসকো এবং ইয়াসিন্তা মার্তো

মেষ চরিয়ে বেড়াত ছেলেমেয়েগুলো। পেটে তেমন বিদ্যেবুদ্ধি নেই। পর্তুগালের ফতিমা শহরে তারা চাক্ষুষ দেখেছিল যিশু-জননী মেরিকে। এক বার নয়, অন্তত ছ’বার— এমনটাই দাবি করা হচ্ছে। ঘটনাটি একশো বছর আগেকার। শনিবার সেই ঘটনার কথা মনে করেই ওই দুই শিশুকে সন্ত ঘোষণা করলেন পোপ ফ্রান্সিস।

Advertisement

বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে ক্যাথলিকরা ভিড় জমিয়েছেন ফতিমা শহরে। সন্তায়ন দেখার জন্য ‘স্যাঙ্কচুয়ারি অব আওয়ার লেডি অব ফতিমা’র সামনে অন্তত চার লক্ষ মানুষের ভিড়। যাঁরা স্যাঙ্কচুয়ারির সামনে জায়গা পাননি, তাঁরা আশপাশের অলিগলিতে দাঁড়িয়ে পড়েছেন। অনেকের চোখেই জল। যে সাদা ব্যাসিলিকার সামনে শায়িত রয়েছে সেই দুই ভাই-বোন অর্থাৎ ফ্রান্সিসকো এবং ইয়াসিন্তা মার্তোর দেহ, সেখানে দাঁড়িয়ে শনিবার পোপ ফ্রান্সিস বললেন, ‘‘ওঁদের সন্ত ঘোষণা করা হচ্ছে।’’ পিছনে টাঙানো দুই ভাইবোনের বিরাট দু’টি প্রতিকৃতি।

ফতিমার বিশ্বাস অনুযায়ী, মেষ চরাতে গিয়ে সাত বছরের ইয়াসিন্তা আর তার ন’বছরের দাদা ফ্রান্সিসকো দর্শন পেয়েছিলেন মেরির। সঙ্গে ছিলেন সম্পর্কিত বোন লুসিয়া (১০)। ওঁরা যেখানে মেরিকে দেখতে পেয়েছিলেন বলে কথিত, সেইখানেই গড়ে ওঠে স্যাঙ্কচুয়ারি। যে দিন এই ঘটনা ঘটেছিল বলা হয়, তার একশো বছর পরে সন্তায়ন হচ্ছে ওঁদের।

Advertisement

সন্তায়ন: পোপ ফ্রান্সিসের ঘোষণার আগে প্রার্থনাগৃহের দিকে যাত্রা। শনিবার পর্তুগালের ফতিমা শহরে। ছবি: রয়টার্স।

তিন দরিদ্র-অশিক্ষিত-মেষপালক শিশুকে ১৯১৭ সালের মে মাস থেকে অক্টোবর মাসের মধ্যে ছ’বার দর্শন দিয়েছিলেন মেরি— জনশ্রুতি এমনটাই। প্রথম বিশ্বযুদ্ধে ধ্বস্ত সেই সময়ের পৃথিবী। বলা হয়, ওই তিন শিশুকে তিনটি ভবিষ্যদ্বাণীও শুনিয়েছিলেন মেরি। তার মধ্যে একটি যুদ্ধ নিয়ে। মানুষ যে একটি বিশ্বযুদ্ধেই থেমে থাকবে না— মেরি ওই শিশুদের সে কথা জানিয়েছিলেন বলে কথিত। ওই ঘটনার দু’বছর পরেই মারা যান ফ্রান্সিসকো। ১৯২০-তে মৃত্যু হয় ইয়াসিন্তার। প্রথম বিশ্বযুদ্ধোত্তর ইউরোপে মহামারির আকার নিয়েছিল স্প্যানিশ ইনফ্লুয়েঞ্জা। তাতে আক্রান্ত হয়েই মারা যায় দু’ভাই-বোন। তাঁদের সম্পর্কিত বোন লুসিয়া অবশ্য ২০০৫ সাল পর্যন্ত জীবিত ছিলেন। পরে তিনি সন্ন্যাসিনীও হন। দ্বিতীয় জন পল-সহ বিভিন্ন পোপের সঙ্গে দেখাও করেন তিনি। যে হেতু তিনিও ফ্রান্সিসকো আর ইয়াসিন্তার সঙ্গে ছিলেন, তাই পরবর্তী কালে তাঁরও সন্তায়ন হতে পারে বলে ভ্যাটিকান সূত্রে খবর।

ফতিমার ওই ঘটনা নিয়ে ধারাবাহিক বিতর্কের পরে ২০০০ সালে তদানীন্তন পোপ দ্বিতীয় জন পল ভাইবোন ফ্রান্সিসকো এবং ইয়াসিন্তার ‘বিয়েটিফিকেশন’ করেন। এর পরে দু’টি ‘মির‌্যাকল’ বা অলৌকিক ঘটনা তাঁদের নামের সঙ্গে জুড়ে যাওয়ার পরে শনিবার তাঁদের আনুষ্ঠানিক ভাবে সন্তায়ন হলো। প্রথম ‘মির‌্যাকল’: মারিয়া এমিলিয়া সান্তোস নামে এক মহিলার দাবি, ১৯৮৯ সালের ২০ ফেব্রুয়ারি তিনি হাঁটাচলার ক্ষমতা ফিরে পান। তার আগে পর্যন্ত হুইলচেয়ার-বন্দি ছিল তাঁর জীবন। ফেব্রুয়ারির ওই দিনটি ইয়াসিন্তার মৃত্যুদিন। সে দিন তাঁর জন্য প্রার্থনা করেছিলেন মারিয়া এমিলিয়া। তার পরেই জীবন পাল্টে যায় তাঁর। দ্বিতীয় ‘মির‌্যাকল’: ২০১৩ সালে পড়ে গিয়ে জখম হয়েছিল ব্রাজিলের এক কিশোর। তার বাবা-মায়ের দাবি, ইয়াসিন্তা-ফ্রান্সিসকোর কাছে প্রার্থনা করার পরেই আশ্চর্য ভাবে দ্রুত গতিতে সেরে ওঠে ছেলে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন