Prince Philip

নিজের নকশা করা গাড়িতে শেষযাত্রা প্রিন্স ফিলিপের

জীবনের প্রতিটা মুহূর্ত যিনি নিখুঁত পরিকল্পনায় কাটাতে পছন্দ করতেন, তিনি যে মৃত্যুর পরের ভাবনাও ভেবে রাখবেন, তা বলাই বাহুল্য।

Advertisement

শ্রাবণী বসু

লন্ডন শেষ আপডেট: ১৮ এপ্রিল ২০২১ ০৭:০৭
Share:

উইনসর কাসলের সেন্ট জর্জেস চ্যাপেলে আনা হচ্ছে প্রিন্স ফিলিপের কফিন। এক কোণে একাকী বসে রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথ। শনিবার লন্ডনে। পিটিআই

অন্ত্যেষ্টির সময়ে যে গাড়িতে করে কফিন নিয়ে যাওয়া হল, সেই ল্যান্ড রোভারের নকশা তিনি নিজেই এঁকেছিলেন। রাজকীয় জাঁকজমক নয় বরং ছিমছাম সামরিক রীতিতে নিজের শেষকৃত্য হোক, চেয়েছিলেন প্রিন্স ফিলিপ। সেই অনুষ্ঠানে কোন কোন গান বাজবে, কোন মন্ত্র উচ্চারিত হবে, সবই আগে থেকে বেছে রেখেছিলেন। গত শুক্রবার ব্রিটেনের উইনসর কাসলে মারা গিয়েছেন রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথের স্বামী, প্রিন্স ফিলিপ (৯৯)। আজ ছিল তাঁর শেষকৃত্য।

Advertisement

আসলে জীবনের প্রতিটা মুহূর্ত যিনি নিখুঁত পরিকল্পনায় কাটাতে পছন্দ করতেন, তিনি যে মৃত্যুর পরের ভাবনাও ভেবে রাখবেন, তা বলাই বাহুল্য। ব্রিটিশ নৌ বাহিনীর এই প্রাক্তন আধিকারিকের মর্জি মেনে আজ লন্ডনের উইনসর কাসলে তাঁকে সমাধিস্থ করা হল।

৭৩ বছরের দাম্পত্যে সুখ-দুঃখের ভাগীদার, স্বামী ফিলিপের সমস্ত ইচ্ছাকে সম্মান জানিয়ে তাঁকে শ্রদ্ধা জানিয়েছেন রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথ। আজ ফিলিপের সঙ্গে তোলা একটি ছবি প্রকাশ করেছেন তিনি। ২০০৩ সালে স্কটল্যান্ডের অ্যাবার্ডিনশায়ারে ছবিটা তুলে দিয়েছিলেন এডওয়ার্ডের স্ত্রী, পুত্রবধূ সোফি। চেককাটা টার্টার স্কার্ট আর সবুজ কার্ডিগান পরা রানির পাশে গা এলিয়ে রোদ পোহাচ্ছেন ফিলিপ। হাঁটুর উপরে খুলে রাখা টুপি আর বসার ভঙ্গিতে ধরা পড়েছে তাঁর ফুরফুরে মেজাজ।

Advertisement

আজ সকাল ১১টা নাগাদ উইনসর কাসলে শুরু হয় শেষকৃত্যের অনুষ্ঠান। নৌ বাহিনীর টুপি, তলোয়ার, আর ফুল-মালায় সাজানো কফিন প্রথমে নিয়ে আসা হয় ‘ইনার হল’-এ। সেখান থেকে বাহকদের কাঁধে চেপে কফিন পৌঁছয় ল্যান্ড রোভারে। যে গাড়ির নকশা আগেই এঁকে রেখেছিলেন ডিউক অব এডিনবরা, প্রিন্স ফিলিপ। গন্তব্য সেন্ট জর্জেস চ্যাপেল। আট মিনিটের এই যাত্রায় গাড়ির পিছনে ছিলেন রানি ও রাজপরিবারের সদস্যেরা। রানি অবশ্য একাই ছিলেন তাঁর গাড়িতে। বাকিরা পায়ে হেঁটে। সব মিলিয়ে সাকুল্যে ৩০ জন। প্রত্যেকের মুখেই মাস্ক ছিল। কোভিড পরিস্থিতির কথা মাথায় রেখে অতিথি সংখ্যা সীমিত রাখা হয়েছিল। রোভারের পিছনে ছিলেন রানির চার ছেলে-মেয়ে ও নাতি-নাতনিরা। প্রিন্স উইলিয়াম ও হ্যারিও ছিলেন। তবে তাঁদের মা, প্রয়াত প্রাক্তন যুবরানি ডায়ানার শেষযাত্রায় যেমন পাশাপাশি দেখা গিয়েছিল দুই ভাইকে, তেমনটা নয়। আজ তাঁদের মাঝে হেঁটেছেন পিসতুতো ভাই, রাজকুমারী অ্যানের ছেলে পিটার ফিলিপ।

রাজকীয় দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি নিয়ে বছর খানের আগে ব্রিটেন ছেড়েছিলেন হ্যারি ও তাঁর স্ত্রী মেগান। সম্প্রতি ওপরা উইনফ্রের শোয়ে এসে রাজবাড়ির বিরুদ্ধে হ্যারিরা ক্ষোভ উগরে দেওয়ায় কম জলঘোলা হয়নি। আজ উইলিয়াম-হ্যারির পারস্পরিক দূরত্বে সেই ঘটনারই প্রতিফলন ঘটেছে বলে মনে করছেন অনেকে। অন্তেষ্ট্যির শেষে অবশ্য দাদা উইলিয়াম ও ভাতৃবধূ কেটের সঙ্গে হ্যারিকে কথা বলতে দেখে গিয়েছে। শোকের আবহেই কি তবে সম্পর্কের বরফ গলবে, প্রশ্ন রাজবাড়ির ভিতরে-বাইরে।

সেন্ট জর্জেস চ্যাপেলে স্থানীয় সময় দুপুর তিনটে নাগাদ ফিলিপকে সমাধিস্থ করা হয়। পৌরহিত্য করেন ক্যান্টারবেরির আর্চবিশপ। পুরো সময় ধরে বেজেছে ফিলিপের বেছে রাখা গান। মামা লুই মাউন্টব্যাটেনের পছন্দের কিছু গানও ছিল তার মধ্যে। চ্যাপেলের এক কোণে একাই বসেছিলেন রানি। কার্যত নিঃসঙ্গ। সামলাতে পারেননি চোখের জল। অনুষ্ঠানের মাঝেই তাঁকে কাঁদতে দেখা যায়। টেলিভিশন লাইভে সম্প্রচারিত হয়েছে সেই অনুষ্ঠান।

করোনা রুখতে ব্রিটেনবাসীকে উইনসরের বাইরে আজ ভিড় জমাতে নিষেধ করা হয়েছিল। তবু ফুলের তোড়া কাসলের বাইরে রেখে এসেছেন অনেকেই। শেষ শ্রদ্ধা জানিয়েছেন প্রিয় প্রিন্সকে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন