পোস্টার হাতে মুশফিকুর রহিম। ছবি সৌজন্য ফেসবুক।
দু’হাতে পোস্টার ধরা। তাতে লেখা: ‘একটি নিষ্পাপ শিশুকে নির্যাতন করে মেরে ফেলার মতো বড় অপরাধ মনে হয় আর নেই। শিশু নির্যাতনকে না বলুন!’ যাঁর হাতে এই পোস্টার, তিনি বাংলাদেশ টেস্ট ক্রিকেট দলের অধিনায়ক মুশফিকুর রহিম। আর সেই ছবি তিনি পোস্ট করেছেন নিজের ফেসবুক ওয়ালে।
তেরো বছরের সামিউল আলম রাজনকে পিটিয়ে মারার প্রতিবাদে শুধু মুশফিকুর নন সরব হয়েছে গোটা বাংলাদেশ। ময়নাতদন্তে সামিউলের গোটা দেহে মোট ৬৪টি জায়গায় আঘাতের চিহ্ন মিলেছে। টানা মারধরের কারণে মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণ হয়েই তার মৃত্যু হয়েছে বলে ময়নাতদন্ত রিপোর্টে জানানো হয়েছে।
যে সোশ্যাল নেটওয়ার্কিং সাইটে মুশফিকুর তাঁর প্রতিবাদ জানিয়েছেন, সেই ফেসবুকেই ছড়িয়ে পড়েছিল সামিউলকে হত্যার লাইভ ভিডিওটি। ২৮ মিনিট ৫২ সেকেন্ডের ভিডিওটি যদিও ইতিমধ্যে ইউটিউব থেকে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে। তবু, তার রেশ রয়ে গিয়েছে গোটা বাংলাদেশে। এ ভাবে নির্মম ভাবে পিটিয়ে হত্যার ঘটনায় সারা দেশ ক্ষুব্ধ এবং হতবাক। ফেসবুক-সহ বিভিন্ন সোশ্যাল নেটওয়ার্কিং সাইটে উগরে দিচ্ছেন তাঁদের ক্ষোভ। প্রতিবাদ এবং লজ্জার কথা জানানো সেই সব পোস্টে সমর্থন করছেন হাজার হাজার মানুষ।
পুলিশ সূত্রে খবর, ওই ঘটনায় প্রধান অভিযুক্ত কামরুল ইসলাম নাকি সৌদি আরবে পালিয়ে যান। যদিও সোমবার জেদ্দায় তাকে আটক করা হয়। গত ৮ জুলাই ওই ঘটনার পর পরই মুহিত আলম নামের এক জনকে ধরে ফেলে স্থানীয় জনতা। তাকে পুলিশের হাতে তুলে দেওয়া হয়। মুহিতকে আদালতে হাজির করানো হলে তাকে পাঁচ দিন পুলিশ হেফাজতে রাখার নির্দেশ দেন বিচারক। এই ঘটনায় অন্য জড়িতদের সন্ধান পেতে মুহিতের এক আত্মীয় ইসমাইল হোসেনকে আটক করা হয়। এ ছাড়া মুহিতের স্ত্রীকে সোমবার রাতেই গ্রেফতার করেছে পুলিশ। ওই ঘটনার তদন্তে পাঁচ সদস্যের একটি কমিটিও গঠন করা হয়েছে।
সিলেটের কুমারগাঁওয়ের শেখপাড়ার বাসিন্দা মুহিত পেশায় ব্যবসায়ী। কামরুল ইসলাম সম্পর্কে তার ভাই হয়। সম্প্রতি সে সৌদি আরব থেকে ফিরেছিল। এ ছাড়া হায়দার আলি ওরফে আলি এবং চৌকিদার ময়না ওরফে বড় ময়নার বিরুদ্ধেও মামলা দায়ের করেছে পুলিশ।
এই ঘটনার প্রতিবাদে রাজধানী ঢাকা-সহ দেশের বিভিন্ন জায়গায় প্রতিবাদ সভার আয়োজন করা হয়। গণজাগরণ মঞ্চ, মানুষের জন্য ফাউন্ডেশন, জাতীয় মহিলা আইনজীবী সমিতি-সহ বেশ কিছু সংগঠন ঘটনার সঙ্গে জড়িতদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করেছে।
স্থানীয় সূত্রে খবর, দুই ভাইয়ের মধ্যে বড় সামিউল। সব্জি বিক্রি করত সে। তার বাবা শেখ মহম্মদ আজিজুর রহমান বাস চালান। এ দিন আজিজুর বলেন, ‘‘আমার ছেলেকে যারা এ ভাবে কষ্ট দিয়ে মেরেছে, তাদের আমি শাস্তি চাই।’’