বেহরাউজ় বুচানি
ঢুকতেই দেয়নি যে দেশ, ‘আটক’ করে পাঠিয়েছে দূর দ্বীপের জেলে, সেই দেশই দিল শ্রেষ্ঠ সাহিত্যিকের পুরস্কার। সেই সাহিত্য, যার জন্ম কারাগারেই।
বেহরাউজ় বুচানি আদতে ইরানের নাগরিক। গত ছ’বছর ধরে প্রশান্ত মহাসাগরীয় দ্বীপরাষ্ট্র পাপুয়া নিউগিনির এক প্রত্যন্ত উদ্বাস্তু শিবির তাঁর ঠিকানা। নামেই শিবির, আসলে অস্ট্রেলিয়া সরকার পরিচালিত জেল। সেখানে বসেই বই লিখেছেন বুচানি। কলম নয়, মোবাইল হাতে। ফারসি ভাষায় এক-একটা অধ্যায় লিখে হোয়াটসঅ্যাপে পাঠিয়ে দিতেন অস্ট্রেলীয় এক অনুবাদককে। সেই অধ্যায়গুলো জোড়া লেগেই তৈরি হয়েছে বুচানির বই— ‘নো ফ্রেন্ড বাট দ্য মাউন্টেন্স’। অস্ট্রেলিয়ার সর্বোচ্চ সাহিত্য সম্মান ‘ভিক্টোরিয়ান প্রাইজ় ফর লিটারেচার’ পেয়েছে বইটি।
পুরস্কারের অর্থমূল্য ৭২,৩৯০ ডলার। যদিও বৃহস্পতিবার পুরস্কার ঘোষণা হওয়ার পরে বুচানি বলেছেন, ‘‘এই ক্যাম্পগুলোতে আমার আশেপাশে যে ভাবে নির্দোষেরা দিনের পর দিন কষ্ট পাচ্ছেন, তা দেখার পরে আমি এই সাফল্য উদ্যাপনের কোনও কারণ দেখি না।’’ বরং পুরস্কারটি যাতে অস্ট্রেলিয়ার হাতে বন্দি তাঁর মতো হাজারখানেক উদ্বাস্তুর কষ্টের দিকে বিশ্বের নজর টানতে পারে, সেই আশাতেই রয়েছেন তিনি।
আরও পড়ুন: ফের জরুরি অবস্থার হুমকি
ছ’বছর আগে অস্ট্রেলিয়ার দিকে আসা উদ্বাস্তুদের একটি নৌকা থেকে নামিয়ে আনা হয়েছিল বুচানিকে। সেই থেকেই মানুস নামে একটি দ্বীপের ‘ক্যাম্পে’ বন্দি রয়েছেন তিনি। অস্ট্রেলিয়ার অভিবাসন নীতির কট্টর সমালোচক বুচানি। তাঁর কথায়, ‘‘আশ্রয়প্রার্থীদের অস্ট্রেলিয়ায় পা ফেলার আগে সমুদ্রেই আটকে দেওয়া হয়। তার পর ‘প্রসেসিং’য়ের জন্য নিয়ে আসা হয় ক্যাম্পগুলিতে।’’ কেমন ছিল বই লেখার সময়টা? বুচানি বলছেন, ‘‘এক অফিসারকে বলেছিলাম, আমি লেখক। তিনি হেসে উঠেছিলেন। অর্ধনগ্ন অবস্থায় ক্যাম্পের বেড়ার ধারে যখন কাজ করতে হত, তখন সেই ছবিগুলো মনে ভাসত। দ্বীপান্তরে বন্দি এক লেখককে দেখতে পেতাম।’’
আরও পড়ুন: বরফরাজ্যে ‘বন্ধু’র আশ্রয়ে ঘরহারারা
সরকারি নিষেধাজ্ঞার মুখে পড়ে আইফোন দিয়ে সিনেমা বানিয়েছিলেন পরিচালক জ়াফর পানাহি। মোবাইলে বই লিখে সেরার শিরোপা পাওয়া বুচানি কি না তাঁরই দেশের মানুষ! ভয়ে কাঁটা হয়ে থাকতেন বুচানি। যদি ক্যাম্পের রক্ষীরা কখনও তাঁর ফোনটা কেড়ে নেয়! পুরস্কার ঘোষণা হওয়ার পরে যখন উল্লাসে ফেটে পড়ছে দর্শকাসন, তখন ভিডিয়ো-বক্তৃতায় বুচানি বলেছেন, ‘‘শব্দের এখনও ক্ষমতা আছে অমানবিক ব্যবস্থাকে পাল্টে দেওয়ার। সাহিত্যের ক্ষমতা আছে স্বাধীনতা এনে দেওয়ার। আজ সাহিত্যেরই জয়ের দিন!’’