মে মাসে সেখানেই নিলামে উঠবে— ‘ফারনেসে ব্লু’। ৬.১৬ ক্যারাটের নীল হিরে।
তিনশো বছরের ইতিহাসের সাক্ষী, নিজে তার চরিত্রও। অথচ রাজপরিবারের ভিতরের লোক আর তাঁদের নিজস্ব অলঙ্কারশিল্পী ছাড়া তার কথা কেউ জানতই না। এত দিনে পর্দা সরিয়ে তার বাইরে আসার পালা।
বৃহস্পতিবার থেকে হংকংয়ের প্রদর্শনীতে দেখা যাবে তাকে। সেখান থেকে লন্ডন, নিউ ইয়র্ক, সিঙ্গাপুর, তাইপেই ঘুরে জেনিভা। মে মাসে সেখানেই নিলামে উঠবে— ‘ফারনেসে ব্লু’। ৬.১৬ ক্যারাটের নীল হিরে। গাঢ় ধূসর ঘেঁষা নীল, আকৃতি নাশপাতির মতো। দেখলে বোঝা যায়, কেন নীল রাজকীয়তার রং! সোদবির কর্তা ফিলিপ হারজগ নিজেই উত্তেজনায় কাঁপছেন, ‘‘তাকিয়ে আমারই চোখ সরছে না। অদ্ভুত একটা জাদু ঠিকরে বেরোচ্ছে!’’
এ জাদুর জন্ম কিন্তু ভারতে। প্রসিদ্ধিতে হোপ বা উইটেলসবাখ-এর মতো হিরের পাশেই তার স্থান। ১৭২০-র দশকে ব্রাজিলে হিরের খনি আবিষ্কারের আগে অবধি রাজারাজড়াদের হিরে মানেই ভারতের হিরে। অষ্টাদশ শতকে গোলকুন্ডা খনি থেকে তোলা হয়েছিল ফারনেসে-কে। বেশি দিন ভারতে থাকা হয়নি। ফারনেসে পরিবার তখন ইতালির অভিজাত রেনেসাঁস পরিবারগুলির অন্যতম। তাদের মেয়ে এলিজাবেথের সঙ্গে ১৭১৪ সালে বিয়ে হল স্পেনের রাজা পঞ্চম ফিলিপের। পরের বছরই এলিজাবেথ উপহার পেলেন হিরেটা। সেই থেকে এলিজাবেথের বংশধরদের মধ্যেই পেটিকায় বন্দি হয়ে প্রজন্ম থেকে প্রজন্মে ঘুরেছে সে। স্পেন থেকে ফ্রান্স, ফ্রান্স থেকে ইতালি, ইতালি থেকে অস্ট্রিয়া। ফরাসি বিপ্লবের সময়ে ফ্রান্সের রানি যে মারি আঁতোয়ানেত, তাঁর মুকুটেও কিছু দিন শোভা পেয়েছিল সে। স্পেনে উত্তরাধিকারের যুদ্ধ, অস্ট্রিয়ায় হ্যাবসবার্গ সাম্রাজ্যের পতন সব তার চোখের সামনে দেখা।
কত দাম উঠতে পারে? সোদবির আশা, ৫০ লক্ষ সুইস ফ্রাঁ। মানে সাড়ে ৩৪ কোটি টাকার মতো। সে দামও যে ছাড়িয়ে যাবে না, কে বলতে পারে! অতীত বলছে, সে সম্ভাবনাই বেশি!