রানি হওয়ার আরাম যেমন, হ্যাপাও তেমন। বাকিংহাম রাজপ্রাসাদে সর্বক্ষণই চোখে চোখে রাখা হয় রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথকে। কিন্তু সেই নজরদারির ঠেলায় আর একটু হলেই ঘটে যাচ্ছিল বড় অঘটন!
রাতবিরেতে মাঝে মধ্যে একটু হেঁটে বেড়াতে ভালবাসেন রানি। অনেক দিনের অভ্যেস। বয়স হয়েছে। সব সময় ঘুম আসে না ঠিকমতো। তাই প্রাসাদ চত্বরে একটু হাঁটাহাঁটি করে আসেন। বেশ কয়েক বছর আগে সেই রকমই এক রাতে তিনটে নাগাদ গায়ে কোট চাপিয়ে বেরিয়ে পড়েছিলেন রানি। এই অবধি সব ঠিকই ছিল। বাদ সাধল নজরদারি। এক ব্রিটিশ দৈনিকের দাবি, রানির নজরদারির দায়িত্বে থাকা প্রাক্তন এক রক্ষীর মুখ থেকে শোনা গিয়েছে এই অদ্ভুত ঘটনা। তিনি বলেছেন, ‘‘এক রাতে বাকিংহাম প্যালেসের চৌহদ্দির মধ্যে ঘোরাঘুরি করছিলাম। সব দিকে খেয়াল রাখতে রাখতে হঠাৎ অন্ধকারে কী যেন একটা দেখতে পেলাম বলে মনে হলো!’’
রক্ষীর সহজাত প্রবৃত্তি থেকে সঙ্গে সঙ্গে তিনি চেঁচিয়ে উঠে বলেছিলেন, ‘‘কে ওখানে?’’ নিজের মনে মনে তখন তিনি প্রায় নিশ্চিত রাজপ্রাসাদে কোনও অনুপ্রবেশকারীর উদয় হয়েছে, যাকে অবিলম্বে কাবু করতে হবে। সেই ভেবে কোমর বেঁধে তৈরি হয়ে বন্দুক নিয়ে এগিয়েও যাচ্ছিলেন। তার পরে রানিকে দেখে চক্ষু চড়কগাছ। মেপেজুপে কথা বলা ভুলে আবেগবশে রানিকে ওই রক্ষী বলে বসেন ‘‘হে ভগবান! আপনি এখানে! আর একটু হলে আমি তো আপনার উপরে গুলি চালিয়ে ফেলতাম।’’
হড়বড়িয়ে এত সব বলে রক্ষীর খেয়াল হয়, রানির সঙ্গে এ ভাবে কথা বলা একেবারেই ঠিক হয়নি। ভেবেছিলেন, রানি বুঝি তিরস্কার করবেন। ও মা, কোথায় কী! রানি উল্টে ঠাট্টা করে রক্ষীকে বলেন, ‘‘ঠিক আছে। ঠিক আছে। এর পরে আমি হাঁটতে বেরোলে আগে থেকে ফোন করে জানিয়ে দেব। তা হলে আপনাকে আর আমায় মারতে হবে না!’’
শুধু রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথ নন, ২০১৩ সালে প্রিন্স অ্যান্ড্রুকেও অনুপ্রবেশকারী ভেবে বসেছিলেন কিছু রক্ষী। তিনিও সে বার বাগানে ঘুরছিলেন। তবে গুলি চালানোর চেষ্টা করেনি কেউ। অ্যান্ড্রুর কাছে পরে ওই রক্ষীরা ক্ষমা চেয়ে নেন।
নিন্দুকদের দাবি, এগুলো হাল্কা ঘটনা বলে উড়িয়ে দিলেও বাকিংহাম প্রাসাদে নিরাপত্তায় ফাঁকফোকর মাঝেমধ্যেই ধরা পড়ে। এ বছরের অগস্টেই এক দিন ভোর চারটে নাগাদ নিরাপত্তার বেড়া টপকে প্রাসাদে ঢোকার চেষ্টা করছিলেন বছর বাইশের এক যুবক। সিসিটিভি ফুটেজ থেকে তাঁর খোঁজ মেলে। মে মাসে আবার ডেনিস হেনেসি নামে ৪১ বছরের এক ব্যক্তি তার টপকে প্রাসাদ চত্বরে ঢুকে সবার নজর এড়িয়ে প্রায় ১০ মিনিট হেঁটে বেড়ান। রানি, তাঁর স্বামী প্রিন্স ফিলিপ, ছেলে প্রিন্স অ্যান্ড্রু— সকলেই তখন প্রাসাদে রয়েছেন। নিরাপত্তা অফিসাররা শেষমেশ তাঁকে ধরার পরে ডেনিস বার বার বলেন,
‘‘রানির সঙ্গে কি একবার দেখা করা যায় না!’’