(বাঁ দিক থেকে) মুহাম্মদ ইউনূস, শেখ হাসিনা এবং সজীব ওয়াজেদ জয়। গ্রাফিক: আনন্দবাজার ডট কম।
বাংলাদেশের আদালত যে এমন কিছু রায় দিতে পারে, তা আগেই আঁচ করেছিলেন শেখ হাসিনার পুত্র সাজীব ওয়াজ়েদ জয়। রায় ঘোষণার পরে ফের তার প্রতিবাদে সরব হলেন তিনি। হাসিনা-পুত্রের দাবি, এটি কোনও বৈধ বিচার প্রক্রিয়াই নয়। পুরো বিষয়টিকেই ‘রাজনৈতিক প্রতিহিংসা’ হিসাবেই ব্যাখ্যা করছেন তিনি।
গত সোমবার বাংলাদেশের প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী হাসিনাকে ‘মানবতাবিরোধী অপরাধে’ (গত বছর ছাত্রজনতার বিক্ষোভের সময় গণহত্যা সংক্রান্ত অভিযোগ) দোষী সাব্যস্ত করেছে সে দেশের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইবুনাল। তাঁর মৃত্যুদণ্ডের আদেশ দিয়েছে ট্রাইবুনাল। মায়ের ফাঁসির সাজা শোনার পরে সংবাদমাধ্যম ‘ইন্ডিয়া টুডে’কে দেওয়া সাক্ষাৎকারে জয়ের দাবি, ‘বিচারের নামে প্রহসন’ হয়েছে।
জয় বর্তমানে কর্মসূত্রে আমেরিকায় থাকেন। সেখান থেকেই ওই সাক্ষাৎকারে হাসিনা-পুত্রের দাবি, বিচার প্রক্রিয়ায় ভীষণ ত্রুটি ছিল। তিনি বলেন, “এই সাজা যে আগে থেকেই স্থির করা ছিল, তা সকলেই জানতেন। তাড়াহুড়ো করে বিচার করা হয়েছে… ১০০-১৪০ দিনের মধ্যে (বিচারপর্ব) শেষ করে দেওয়া হয়েছে।” মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারকেও নিশানা করছেন তিনি। জয়ের বক্তব্য, “একটি অনির্বাচিত, অসাংবিধানিক এবং অগণতান্ত্রিক সরকার আইন সংশোধন করেছে। সংসদ ছাড়া এই প্রক্রিয়া সম্ভব নয়।”
বস্তুত, গত বছরের ৫ অগস্ট বাংলাদেশে আওয়ামী লীগের সরকারের পতনের পর হাসিনা ভারতে চলে আসেন। তার পর থেকে ভারতেই সাময়িক আশ্রয়ে রয়েছেন তিনি। হাসিনার অনুপস্থিতিতেই তাঁর বিরুদ্ধে মামলার বিচারপ্রক্রিয়া চলেছে ঢাকার ট্রাইবুনালে। জয়ের দাবি, হাসিনাকে তাঁর পছন্দের আইনজীবী বেছে নেওয়ার সুযোগ দেওয়া হয়নি। আদালতই আইনজীবী ঠিক করে দিয়েছে। হাসিনা-পুত্র বলেন, “তাঁকে (হাসিনাকে) নিজের জন্য আইনজীবী বেছে নেওয়ার অনুমতি দেওয়া হয়নি… এটি বিচারের নামে উপহাস ছাড়া আর কিছুই নয়।”
ওই সাক্ষাৎকারে জয় আরও বলেন, “বর্তমানে বাংলাদেশে আইনের শাসন নেই। আইনের শাসন না ফেরা পর্যন্ত যে কোনও আইনি আপিলের জন্য অপেক্ষা করতে হবে। তখন এই রায় বাতিল হয়ে যাবে।” তাঁর দাবি, ন্যায়বিচারের জন্য মৃত্যুদণ্ডের আদেশ দেওয়া হয়নি। বরং ‘প্রতিশোধ’ নেওয়ার জন্যই এমনটা করা হয়েছে। জয়ের বক্তব্য, ওই অস্থিরতার সময়ে আওয়ামী লীগের শয়ে-শয়ে কর্মীকে আটক করা হয়েছিল। অশান্তির সময়ে অনেক পুলিশকর্মীও নিহত হন। কিন্তু মামলা হয়েছে শুধু হাসিনাদের বিরুদ্ধে। ইউনূস সরকারকে ‘অনির্বাচিত’ এবং ‘অবৈধ’ বলে নিশানা করে জয় বলেন, “ওরা এমন একটি আইন পাশ করেছে, যা পুলিশকর্মী এবং আমাদের (আওয়ামী লীগের) দলীয় কর্মীদের হত্যার জন্য দায়মুক্তি দেবে। এক পক্ষ ন্যায়বিচার পাবে, অন্য পক্ষ পাবে না— এটা কেমন করে হয়? এটা তো ন্যায়বিচার নয়।”