(বাঁ দিকে) শেখ হাসিনা এবং মুহাম্মদ ইউনূস (ডান দিকে)। —ফাইল চিত্র।
শেখ হাসিনার বক্তব্য প্রকাশ করবেন না! বাংলাদেশের সমস্ত সংবাদমাধ্যমকে এই মর্মে সতর্ক করল সে দেশের অন্তর্বর্তী সরকার। সোমবার জুলাই হত্যাকাণ্ডের মামলায় বাংলাদেশের প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী হাসিনাকে ফাঁসির সাজা শুনিয়েছে সে দেশের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইবুনাল। আর সে দিনই বাংলাদেশের জাতীয় সাইবার সুরক্ষা এজেন্সি (এনসিএসএ) একটি প্রেস বিবৃতি দিয়ে জানিয়েছে, হাসিনার বক্তব্য প্রকাশ করা থেকে বিরত থাকুক দেশের সমস্ত গণমাধ্যম।
বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ‘অপরাধী’ এবং ‘পলাতক’ হাসিনার বক্তব্য হিংসায় প্ররোচনা দিতে পারে। সেই বক্তব্য ছড়িয়ে পড়লে অপরাধমূলক কাজকর্ম বৃদ্ধি পাওয়া ছাড়াও বাংলাদেশের সামাজিক সম্প্রীতি নষ্ট হতে পারে বলে আশঙ্কা করা হয়। তাই বাংলাদেশের জাতীয় নিরাপত্তা এবং শৃঙ্খলা রক্ষায় এই ধরনের কাজ থেকে বিরত থাকার কথা বলা হয়েছে।
ওই বিবৃতিতে এ-ও বলা হয়েছে যে, যে ভাবে কয়েকটি সংবাদমাধ্যম হাসিনার বক্তব্য প্রকাশ বা প্রচার করছে, তাতে জাতীয় সাইবার সুরক্ষা এজেন্সি উদ্বিগ্ন। একই সঙ্গে সরকারের নিয়ন্ত্রণাধীন ওই সংস্থা সাইবার সুরক্ষা সংক্রান্ত অধ্যাদেশের কথা উল্লেখ করে জানিয়েছে, জাতীয় সুরক্ষা, সম্প্রীতি ক্ষতি করে কিংবা ধর্ম বা জাতিগত বিদ্বেষে উস্কানি দেয়— এমন বিষয়বস্তুকে ‘ব্লক’ বা মুছে দেওয়া হতে পারে। মিথ্যা পরিচয় দিয়ে কিংবা অবৈধ ভাবে ঘৃণাভাষণ ছড়ালে দু’বছরের জেল কিংবা ১০ লক্ষ টাকা (বাংলাদেশের মুদ্রায়) পর্যন্ত জরিমানা হতে পারে বলেও সতর্ক করা হয়েছে।
বাংলাদেশের জাতীয় সাইবার সুরক্ষা এজেন্সি এজেন্সি অবশ্য জানিয়েছে, তারা মতপ্রকাশ এবং গণমাধ্যমের স্বাধীনতায় বিশ্বাসী। তবে জাতীয় সুরক্ষার প্রসঙ্গ টেনে আদতে ইউনূস সরকার গণমাধ্যমগুলির উপর নজরদারি চালাতে চাইছে কি না, তা নিয়ে প্রশ্ন উঠছে।
অবশ্য এই প্রথম নয়, এর আগেও গত অগস্ট মাসে মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তী সরকার জানিয়েছিল, হাসিনার বক্তব্য কেউ ভবিষ্যতে প্রকাশ করলে তৎক্ষণাৎ আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে। সেই সময়েও একটি বিবৃতি দিয়ে বলা হয়েছিল, বাংলাদেশের টেলিভিশন, সংবাদপত্র এবং অনলাইন সংবাদমাধ্যমগুলি যদি ফৌজদারি অপরাধ, গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী কার্যকলাপে অভিযুক্ত পলাতক আসামি তথা ‘নিষিদ্ধ সংগঠন’ আওয়ামী লীগের নেত্রী শেখ হাসিনার অডিয়ো সম্প্রচার করে, তবে তা ২০০৯ সালের সন্ত্রাসবিরোধী আইনের গুরুতর লঙ্ঘন বলে বিবেচনা করা হবে। সম্প্রতি বেশ কয়েকটি সংবাদসংস্থা এবং ভারতীয় সংবাদমাধ্যমকে সাক্ষাৎকার দেন হাসিনা। তা নিয়েও নিজেদের আপত্তির কথা জানিয়েছিল ইউনূস সরকার। এমনকি এই বিষয়ে নিজেদের উদ্বেগের কথা জানাতে বাংলাদেশ বিদেশ মন্ত্রক গত বুধবার তলব করেছিল বাংলাদেশে ভারতের ডেপুটি হাইকমিশনার পবন ভাদেকে।