(বাঁ দিকে) শেখ হাসিনা। মুহাম্মদ ইউনূস (ডান দিকে) — ফাইল চিত্র।
ফের দেশবাসীর উদ্দেশে অডিয়ো বার্তা দিলেন শেখ হাসিনা। মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বতিকালীন সরকারের বিরুদ্ধেও সরাসরি আক্রমণ শানালেন বাংলাদেশের প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী। সঙ্গে ইঙ্গিতও দিয়ে রাখলেন, তিনি ফিরবেন। তখন সব হিসেব বুঝে নেবেন কড়ায়গণ্ডায়।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জেলা গোপালগঞ্জে অশান্তির পর বৃহস্পতিবারই দেশবাসীর উদ্দেশে একটি অডিয়ো বার্তা দিয়েছিলেন হাসিনা। আহ্বান জানিয়ে বলেছিলেন, ‘‘যা আছে, তা নিয়েই এখন পথে নেমে পড়ুন। ঘরে বসে থাকার সময় আর নেই।’’ তার তিন দিনের মাথায় আবারও অডিয়ো বার্তা দিলেন তিনি। এ বার নিশানায় ইউনূসের সরকার। হাসিনা বলেন, ‘‘ইউনূসের ক্ষমতা দখল হয়েছিল জঙ্গিদের সহায়তায়। আন্তর্জাতিক ভাবে নিষিদ্ধ যে সব জঙ্গি সংগঠনের অপরাধীদের গ্রেফতার করা হয়েছিল, ক্ষমতায় এসে তাদের সকলকে ছেড়ে দিয়েছে ওরা।’’ হাসিনার দাবি, ইউনূসের আমলে এক সুনিপুণ পরিকল্পনার মাধ্যমে বাংলাদেশের মুক্তচিন্তা, স্বাধীন ভাবে কথা বলা, স্বাধীন ভাবে চলাফেরার পরিসর কেড়ে নেওয়া হয়েছে। নারীদের অধিকার, যুবসমাজের অধিকার কেড়ে নেওয়া হয়েছে। হাসিনার কথায়, ‘‘এক দিনে ৯৩ জন আইনজীবী গ্রেফতার, এটা শেষ বার স্বাধীন বাংলাদেশে কবে ঘটেছে? ঘটেছে ইউনূসের আমলে। অথচ তিনি দাবি করেন, সবাই তাঁর সমালোচনা করতে পারেন, নির্ভয়ে কথা বলতে পারেন। কিন্তু এখন কেউ সমালোচনা করতে গেলেই জঙ্গিবাহিনী গিয়ে তাকে মারধর করে, নির্যাতন করে, ঘরবাড়ি পুড়িয়ে দেয়।’’
বিএনপি, জামাতের ‘বাড়বাড়ন্ত’ নিয়েও বলতে শোনা গিয়েছে বাংলাদেশের প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রীকে। তিনি বলেন, ‘‘এই বিএনপি, জামাত আমাদের উপরে যে অত্যাচার করল, সেই অত্যাচার যদি ২০০৯ সালে সরকার গঠনের পর আমরা করতাম, তা হলে ওদের অস্তিত্বই খুঁজে পাওয়া যেত না। আর আজ এদের হাতে আওয়ামী লীগের অগণিত নেতাকর্মী ও তাদের আত্মীয়-পরিজনদের হত্যা করা হচ্ছে। বাড়িঘরে আগুন দেওয়া হচ্ছে। ৩২ নম্বরে ওরা যখন আগুন দেয়, সেখানেও মিরপুর রোডের উপর তিনটি লাশ পড়ে থাকতে দেখা গিয়েছিল। তাদের নামপরিচয়টুকুও জানা যায়নি। নৃশংস অত্যাচার, নির্যাতন করে একটা পার্টিকে শেষ করতে চাইছে ওরা।’’
হাসিনা আরও বলেন, আওয়ামী লীগ ছিল বলেই বাংলাদেশ স্বাধীন হয়েছিল। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান দেশ স্বাধীন করে দিয়ে গিয়েছিলেন। স্বাধীনতা সংগ্রামে অগ্রণী ভূমিকা পালন করেছিল আওয়ামী লীগ। হাসিনার গলায় ঝরে পড়ে ক্ষোভ, ‘‘আজ এরা সব ধ্বংস করার জন্য উঠে পড়ে লেগেছে। যে মুক্তিযোদ্ধারা দেশ স্বাধীন করল, আজ তাদের গলায় জুতোর মালা! ধৈর্য ধরুন, দিন ফিরবে। এক মাঘে শীত যায়না। সব অপমান মনে থাকবে। কড়ায় গণ্ডায় হিসেব বুঝে নেব! সব কিছুর হিসাব নেওয়া হবে। সে দিন বেশি দূরে নয়।’’
এর পর সরাসরি বাংলাদেশের প্রধান উপদেষ্টা ইউনূসকেও নিশানা করেন তিনি। ইউনূসকে কাঠগড়ায় তুলে তাঁর তোপ, বাংলাদেশের উন্নয়ন ও বঙ্গবন্ধুর ঐতিহ্যকে কলুষিত করার ‘ষড়যন্ত্র’ করা হয়েছে। হাসিনা বলেন, ‘‘এ সব ইউনূসের কারসাজি। হাজার হাজার কোটি টাকা কামিয়ে, বিদেশিদের থেকে টাকা খেয়ে দেশের সর্বনাশ করছেন। যার মধ্যে দেশপ্রেম থাকে, যার মধ্যে মানুষের প্রতি প্রেম, দয়া, ভালবাসা থাকে, সে কি কখনও এটা করতে পারে? ওঁর এ দেশের মানুষের জন্য কোনও দরদ নেই।’’
প্রসঙ্গত, ঠিক এক বছর আগে ২০২৪ সালের জুলাই মাসে ছাত্র বিক্ষোভে অগ্নিগর্ভ হয়ে উঠেছিল বাংলাদেশ। ক্ষমতার হাতবদল হয় সে সময়েই। আগস্টে ক্ষমতাচ্যুত হয়ে বাংলাদেশ ছেড়ে ভারতে এসে আশ্রয় নিতে হয় হাসিনাকে। দেশের দায়িত্ব পান ইউনূস। কিন্তু এক বছরেও সে দেশে পরিস্থিতির বিশেষ উন্নতি হয়নি। গত সপ্তাহেই আওয়ামী লীগের শক্ত ঘাঁটি গোপালগঞ্জে সংঘর্ষের ঘটনায় চার জনের মৃত্যু হয়। জারি হয় কার্ফু। হিংসার এই ঘটনায় অন্তত ১৪ জনকে গ্রেফতার করা হয়। সেই ঘটনার পর থেকে এই নিয়ে দু’বার সরব হতে দেখা গেল বঙ্গবন্ধু-কন্যাকে।