ব্রিটেনের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী পাকিস্তানি বংশোদ্ভূত সাজিদ

অভিবাসন বিতর্কের জেরে ক্ষমতাবদল টেরেসা মে-র মন্ত্রিসভায়। ‘উইন্ডরাশ বিতর্কে’ কাল রাতে পদত্যাগ করেছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যাম্বার রুড। আজ নয়া স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী পদে বসলেন পাক বংশোদ্ভূত সাজিদ জাভিদ।

Advertisement

শ্রাবণী বসু

শেষ আপডেট: ০১ মে ২০১৮ ০৪:১৬
Share:

পাক বংশোদ্ভূত সাজিদ জাভিদ।

অভিবাসন বিতর্কের জেরে ক্ষমতাবদল টেরেসা মে-র মন্ত্রিসভায়। ‘উইন্ডরাশ বিতর্কে’ কাল রাতে পদত্যাগ করেছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যাম্বার রুড। আজ নয়া স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী পদে বসলেন পাক বংশোদ্ভূত সাজিদ জাভিদ। বাসচালকের ছেলে, ৪৮ বছরের সাজিদের আগে ব্রিটেনের মন্ত্রিসভার এত গুরুত্বপূর্ণ পদে বসেননি কোনও এশীয়। নিজেকে সংখ্যালঘু অভিবাসী সম্প্রদায়ের প্রতিনিধি হিসেবে উল্লেখ করে সাজিদ বলেছেন, ‘‘আমাদের নীতি হবে স্বচ্ছ। প্রতিটি মানুষের প্রতি সম্মান ও সৌজন্য যাতে বজায় থাকে, তা নজর রাখাই আমার সবচেয়ে বড় কাজ।’’

Advertisement

ডেভিড ক্যামেরনের আমলে সংস্কৃতিমন্ত্রী ছিলেন সাজিদ। তাঁর উদ্যোগেই পার্লামেন্ট স্কোয়ারে গাঁধীমূর্তি বসে। মূর্তির উন্মোচনেও হাজির ছিলেন তিনি। মে-র আমলে তিনি জনকল্যাণমন্ত্রী হন। তাঁকে অভিনন্দন জানিয়ে লন্ডনের মেয়র সাদিক খানের টুইট করেছেন, ‘‘অভিবাসন-বিতর্ক বা সন্ত্রাসের মতো যে সমস্যাগুলি মাথা তুলেছে ব্রিটেনে, আশা করি একসঙ্গে তার বিরুদ্ধে লড়াই করতে পারব আমরা।’’

‘উইন্ডরাশ বিতর্ক’ নিয়ে গত কয়েক সপ্তাহ ধরেই ব্যাপক টানাপড়েনের মুখে টেরেসার মে-র সরকার। কী এই বিতর্ক? দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের ক্ষয়ক্ষতির পরে ব্রিটেনকে নতুন করে গড়ে তুলতে ক্যারিবীয় দ্বীপপুঞ্জ থেকে প্রচুর লোকজনকে স্বাগত জানানো হয় সে দেশে। ‘এম্পায়ার উইন্ডরাশ’ নামে একটি জাহাজে চড়ে ব্রিটেনে আসেন বহু মানুষ। কোনও আইনি কাগজপত্র ছাড়া স্বাভাবিক ভাবেই তাঁরা ব্রিটেনের নাগরিকত্ব পান। সেই সময় অনেক শিশুই বাবা বা ভাইয়ের পাসপোর্টে ব্রিটেন আসেন। পরবর্তীকালে যাঁরা কখনওই ব্রিটেনের বৈধ নাগরিক হিসেবে নাম নথিভুক্ত করেননি। ২০১৬ সাল থেকে ব্রিটিশ সরকার অভিবাসীদের নিয়ে নড়চড়ে বসলে কোপে পড়েন সেই নাগরিকরা। ব্রিটেনে জন্ম-কর্ম হলেও বৈধ কাগজ না থাকায় বহু বৃদ্ধ-বৃদ্ধাকে তাঁদের বাড়িঘর ছাড়তে বাধ্য করা হয়। এই ঘটনায় সমালোচনার মুখে পড়েন টেরেসা মে। চাপ বাড়ে রুডের উপরও। শুধুমাত্র ক্ষমা চেয়ে এ যাত্রায় পার পাননি রুড। জবাবদিহি করতে হয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের সিলেক্ট কমিটির কাছে। সেখানে রু়ড জানান, উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ভাবে কোনও অভিবাসীকে উচ্ছেদ করা হয়নি। যদিও পরে টেরেসা মে-কে লেখা রুডের একটি চিঠি প্রকাশ্যে এসেছে। যেখানে কয়েক বছরের মধ্যে ১০ শতাংশ অভিবাসী উচ্ছেদের কথা লেখা রয়েছে।

Advertisement

এই সংক্রান্ত বেশ কিছু সরকারি নথিও পাওয়া যায়। এর পরেই রুডের পদত্যাগের দাবি তোলেন বিরোধীরা। কাল রাতে টেলিফোন করে মে-কে পদত্যাগের সিদ্ধান্ত জানান রুড। এই সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়েছে বিরোধী লেবার পার্টি। যদিও তারা বলছে, টেরেসা মে-কে আড়াল করতে ‘মানবঢাল’ করা হচ্ছে রুডকে।

সাজিদ জানান, ১৯৬০ সালে লন্ডনে আসেন তাঁর বাস চালক বাবা। তাঁর কথায়, ‘‘উইন্ডরাশ-বিতর্ক খুব ব্যক্তিগত ভাবে আঘাত করেছে আমাকে। কারণ, আমি নিজে অভিবাসী পরিবারের সন্তান। ওদের জায়গায় আমি, আমার মা বা বাবাও থাকতে পারতেন।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন