পার্লামেন্ট ভাঙা ‘স্বৈরাচার’, কোর্টে যাবেন রনিল

তাঁর দল ইউনাইটেড ন্যাশনাল পার্টি (ইউএনপি) বিবৃতি দিয়ে জানিয়েছে, আইনের শাসন জারি রাখতে ও দেশের সংবিধানকে রক্ষা করতে আদালতের হস্তক্ষেপ চায় তারা। তাই সুপ্রিম কোর্টে যাওয়ার কথা ভাবা হচ্ছে। 

Advertisement

সংবাদ সংস্থা

কলম্বো শেষ আপডেট: ১১ নভেম্বর ২০১৮ ০১:৫৫
Share:

পার্লামেন্ট ভাঙার খবরে নজর কলম্বোর এক বাসিন্দার। শনিবার। ছবি: এপি।

নির্ধারিত সময়ের আগেই, শুক্রবার মাঝরাতে বিজ্ঞপ্তি জারি করে শ্রীলঙ্কার পার্লামেন্ট ভেঙে দিয়েছেন প্রেসিডেন্ট মৈত্রীপালা সিরিসেনা। ৫ জানুয়ারি দেশ জুড়ে ফের নির্বাচনের ঘোষণাও করে দিয়েছেন তিনি। জানিয়েছেন, ১৭ জানুয়ারি বসবে নতুন পার্লামেন্টের অধিবেশন। এই সিদ্ধান্তকে ‘বেআইনি’, ‘সংবিধানবিরোধী’ এবং ‘স্বৈরাচারী’ বলে দাবি করে আদালতের দ্বারস্থ হচ্ছেন সদ্য-গদিচ্যুত প্রধানমন্ত্রী রনিল বিক্রমসিঙ্ঘে। তাঁর দল ইউনাইটেড ন্যাশনাল পার্টি (ইউএনপি) বিবৃতি দিয়ে জানিয়েছে, আইনের শাসন জারি রাখতে ও দেশের সংবিধানকে রক্ষা করতে আদালতের হস্তক্ষেপ চায় তারা। তাই সুপ্রিম কোর্টে যাওয়ার কথা ভাবা হচ্ছে।

Advertisement

সিরিসেনা ও বিক্রমসিঙ্ঘে— দু’পক্ষের রেষারেষিতে শ্রীলঙ্কার রাজনীতি বেশ কিছু দিন ধরেই টালমাটাল। বিক্রমসিঙ্ঘের ‘অতি-উদার’ বিদেশনীতি দেশবাসীর ভাবাবেগকে আঘাত করেছে বলে অতীতে বারবার ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন সিরিসেনা। শেষমেশ গত ২৬ অক্টোবর নির্বাচিত প্রধানমন্ত্রী বিক্রমসিঙ্ঘেকে বরখাস্ত করে নিজের পছন্দের মাহিন্দা রাজাপক্ষেকে সেই পদে বসান তিনি।

কিন্তু পার্লামেন্টে সংখ্যাগরিষ্ঠ সদস্যের সমর্থন সঙ্গে থাকায় প্রধানমন্ত্রী পদ ছাড়তে নারাজ ছিলেন বিক্রমসিঙ্ঘে। প্রধানমন্ত্রীর জন্য নির্দিষ্ট সরকারি বাসভবন থেকেও তাঁকে বার করতে পারেননি প্রেসিডেন্ট সিরিসেনা। ২২৫ সদস্যের পার্লামেন্টে বিক্রমসিঙ্ঘের সঙ্গে আছেন ১২০ জন সদস্য। অন্য দিকে, দু’সপ্তাহ সময় পেয়েও নিজের পাশে মাত্র ১০৪ জন সদস্যকে পেয়েছেন রাজাপক্ষে। হাল ছেড়ে দিয়ে শুক্রবার রাজাপক্ষে জানিয়ে দেন, তাঁর সঙ্গে প্রয়োজনীয় সদস্যের সমর্থন নেই। এর পরেই পার্লামেন্ট ভেঙে নতুন করে নির্বাচনের ঘোষণা করেন সিরিসেনা।

Advertisement

শ্রীলঙ্কার আইন অনুযায়ী, পার্লামেন্ট গঠনের সাড়ে চার বছরের মধ্যে তা ভাঙা যায় না। বর্তমান পার্লামেন্টের সময়সীমা ছিল ২০২০ সাল পর্যন্ত। তার আগে তা ভাঙতে চাইলে পার্লামেন্টের দুই-তৃতীয়াংশ সদস্যের সম্মতি প্রয়োজন। অথবা গণভোটই শেষ পথ। কিসের ভিত্তিতে সিরিসেনা শুক্রবার পার্লামেন্ট ভাঙলেন, তা এখনও স্পষ্ট নয়। যদিও তাঁর আইনি বিশেষজ্ঞদের দাবি, নিয়ম মেনেই এই পদক্ষেপ।

বিক্রমসিঙ্ঘেকে বরখাস্ত করার পরেই পার্লামেন্ট স্থগিত করে দিয়েছিলেন সিরিসেনা। ফের অধিবেশন ডাকার দিনক্ষণ নিয়ে গোড়া থেকেই টালবাহানা করছিলেন তিনি। পার্লামেন্টে ভোটাভুটির মাধ্যমে নতুন প্রধানমন্ত্রী নির্বাচন করতে শ্রীলঙ্কাকে চাপ দিচ্ছিল রাষ্ট্রপুঞ্জ, আমেরিকা ও ইউরোপীয় ইউনিয়ন। বিক্রমসিঙ্ঘে শিবিরের দাবি, যথেষ্ট সংখ্যা নেই বলেই সিরিসেনার এই টালবাহানা। বিপক্ষের এমপি ভাঙিয়ে নেওয়ার যাবতীয় চেষ্টা চালিয়ে শেষ পর্যন্ত ব্যর্থ হওয়ার পরেই পার্লামেন্ট ভেঙে দিলেন তিনি। আশা করছেন, নতুন নির্বাচনে তাঁর পছন্দের প্রার্থীই প্রধানমন্ত্রী হবেন।

তবু এই পদক্ষেপে গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র হিসেবে আন্তর্জাতিক মহলে শ্রীলঙ্কার ভাবমূর্তিই ক্ষুণ্ণ হবে বলে মত বিশেষজ্ঞদের। দ্বীপরাষ্ট্রের রাজনৈতিক পরিস্থিতি আরও জটিল হতে পারে বলে শনিবার নতুন করে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে আমেরিকা, ব্রিটেন, কানাডা, অস্ট্রেলিয়া।

কিন্তু কেন এতটা বেপরোয়া সিরিসেনা?

ঘুরেফিরে চিনা মদতের কথাই উঠে আসছে। ২০০৫ থেকে ২০১৫ পর্যন্ত প্রেসিডেন্ট থাকাকালীন রাজাপক্ষে চিন থেকে বিপুল অর্থ ঋণ নিয়েছিলেন। পরিকাঠামো উন্নয়নের নামে শ্রীলঙ্কাকে চিনা ঋণের জালে জড়িয়ে ফেলেছিলেন তিনি। সম্প্রতি নবনিযুক্ত রাজাপক্ষে সরকারকে পৃথিবীর অন্য কোনও দেশ স্বীকৃতি না দিলেও আগ বাড়িয়ে তাঁকে অভিনন্দন জানিয়েছিল সেই বেজিংই। তাই সিরিসেনার সিদ্ধান্তে পশ্চিমী দুনিয়ার পাশাপাশি উদ্বিগ্ন ভারতও।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন