প্রাক্তন সহকর্মীর গুলিতে নিহত ২ টিভি সাংবাদিক

সকাল সকাল হাসিমুখে শহরের ব্রিজওয়াটার প্লাজায় পর্যটন নিয়ে এক মহিলার সাক্ষাৎকার নিচ্ছিলেন ডব্লিউডিবিজে চ্যানেলের তরুণী সাংবাদিক। ক্যামেরা অন থাকা অবস্থাতেই হঠাৎ তাঁকে লক্ষ্য করে ধেয়ে এল গুলি। শুধু তিনি নন, রেহাই পেলেন না তাঁর সহকর্মী চিত্রসাংবাদিকও। সঙ্গে সঙ্গে ক্যামেরা লুটিয়ে পড়ল মাটিতে। যাঁর সাক্ষাৎকার নিচ্ছিলেন ওই তরুণী, গুলি লেগে জখম হয়েছেন সেই মহিলাও। ঘটনার জেরে স্টুডিওতে বসা উপস্থাপক বাকরুদ্ধ!

Advertisement

সংবাদসংস্থা

মনেটা (ভার্জিনিয়া) শেষ আপডেট: ২৬ অগস্ট ২০১৫ ২০:২১
Share:

অ্যালিসন পার্কার এবং অ্যাডাম ওয়ার্ড।

সকাল সকাল হাসিমুখে শহরের ব্রিজওয়াটার প্লাজায় পর্যটন নিয়ে এক মহিলার সাক্ষাৎকার নিচ্ছিলেন ডব্লিউডিবিজে চ্যানেলের তরুণী সাংবাদিক। ক্যামেরা অন থাকা অবস্থাতেই হঠাৎ তাঁকে লক্ষ্য করে ধেয়ে এল গুলি। শুধু তিনি নন, রেহাই পেলেন না তাঁর সহকর্মী চিত্রসাংবাদিকও। সঙ্গে সঙ্গে ক্যামেরা লুটিয়ে পড়ল মাটিতে। যাঁর সাক্ষাৎকার নিচ্ছিলেন ওই তরুণী, গুলি লেগে জখম হয়েছেন সেই মহিলাও। ঘটনার জেরে স্টুডিওতে বসা উপস্থাপক বাকরুদ্ধ!

Advertisement

তদন্তে পুলিশ জেনেছে, বন্দুকবাজ স্থানীয় ওই চ্যানেলেরই এক প্রাক্তন রিপোর্টার। তার নাম ভেস্টার ফ্ল্যানাগান (৪১)। পুলিশের দাবি, কোনও কারণে ওই সংস্থার প্রতি ক্ষোভ তৈরি হয়েছিল ভেস্টারের। তাকে এক ঝলক দেখা গিয়েছে ভিডিও ফুটেজে। চিত্রসাংবাদিকের দিকে বন্দুক তাক করে এগিয়ে আসছে সে। ওই ফুটেজ থেকেই ভেস্টারকে খুঁজে বের করা হয়। যখন পুলিশের হাতে প্রায় ধরা পড়ার উপক্রম, তখন সে নিজেকে গুলি করে। পরে হাসপাতালে ভেস্টার মারা যায়। বুধবার সকালের এই ঘটনায় স্তম্ভিত হয়ে গিয়েছেন ভার্জিনিয়ার মনেটার বাসিন্দারাও। প্রাথমিক ভাবে পুলিশ জানিয়েছে, এই ঘটনার সঙ্গে সন্ত্রাসের সম্পর্ক নেই। কিন্তু কেন এই হামলা তা এখনও স্পষ্ট নয়। সংশ্লিষ্ট চ্যানেল জানিয়েছে, তরুণী সাংবাদিকের নাম অ্যালিসন পার্কার (২৪) এবং চিত্রসাংবাদিকের নাম অ্যাডাম ওয়ার্ড। কাঁপতে থাকা ভিডিও ফুটেজে দেখা যাচ্ছে, অ্যালিসন সাক্ষাৎকার নিতে নিতেই মারাত্মক চিৎকার করে মাটিতে লুটিয়ে পড়লেন। কয়েক সেকেন্ডের মধ্যে একই দশা হয় তাঁর সহকর্মী অ্যাডামের। পর পর অন্তত ছ’-সাতটি গুলি ছুটে আসে তাঁদের লক্ষ্য করে। শুধু প্রাক্তন সহকর্মীদের গুলি করা নয়, ওই ঘটনার ভিডিও শ্যুট করে টুইটার এবং ফেসবুকে দিয়েছিল ভেস্টার। পরে অবশ্য সেই ফুটেজ সরিয়ে নেওয়া হয়।

চ্যানেলের তরফে দুই কর্মীর আকস্মিক মৃত্যুতে শোক প্রকাশ করা হয়েছে। টুইটারে জানানো হয়েছে, ‘উই লাভ ইউ, অ্যালিসন অ্যান্ড অ্যাডাম।’ সহকর্মীরা জানাচ্ছেন, অ্যালিস যে কোনও ঘটনা কভার করার জন্য ঝাঁপিয়ে পড়ত। অ্যালিসের প্রেমিক ক্রিস হার্স্টও ডব্লিউডিবিজে-র রিপোর্টার। অ্যালিসকে হারিয়ে টুইটারে তিনি জানিয়েছেন, ‘‘এত দিন কাউকে বলিনি... অ্যালিসকে ভীষণ ভালবাসতাম আমি। ন’মাস ডেট করার পরে সবে একসঙ্গে থাকতে শুরু করেছিলাম। আমার আর কোনও ভাষা নেই।’’ ক্রিসের আক্ষেপ, ‘‘যুদ্ধক্ষেত্রে বা বিপজ্জনক কোনও পরিস্থিতিতে বা দাঙ্গার মতো কোনও ঘটনা কেউ কভার করতে গেলে আগে থেকেই মনে হয়, হয়তো তার আঘাত লাগবে। কিন্তু পর্যটন নিয়ে খবর করতে গিয়েও এ রকম ঘটে যেতে পারে, সেটা কি ভাবা যায়?’’

Advertisement

চিত্রসাংবাদিক অ্যাডামের জন্যও সহকর্মীরা ব্যথিত। ভার্জিনিয়া টেক থেকে স্নাতক পড়ার পরে ২০১১ সালে এই চ্যানেলে যোগ দিয়েছিলেন তিনি। অ্যাডাম যে বছর ভার্জিনিয়া টেকে পড়তে আসেন, সেই ২০০৭ সালেই ওই বিশ্ববিদ্যালয়ে বন্দুকবাজের হানায় প্রাণ গিয়েছিল ৩২ জনের। ডব্লিউডিবিজে চ্যানেলেরই মহিলা প্রযোজক মেলিসা ওটের সঙ্গে প্রেমের সম্পর্ক ছিল অ্যাডামের। কিছু দিনের মধ্যে তিনি বিয়ে করবেন ভেবেছিলেন। প্রেমিকাকে বলেছিলেন, ‘‘সাংবাদিকতার জগৎ থেকে বেরিয়ে যেতে চাই। অন্য কিছু করতে চাই।’’

অ্যালিসন যাঁর সাক্ষাৎকার নিচ্ছিলেন, গুলিতে জখম সেই মহিলা ভিকি গার্ডনার চিকিৎসাধীন। তাঁর পিঠে গুলি লেগেছিল।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন