ভারতে ভোট মরসুম শুরু। কী ভাবছেন প্রবাসীরা?

ইভিএম কারচুপি দেখাতে পারলে পুরস্কার 

অগত্যা সরকারের তরফ থেকে ঘোষণা করা হয়েছে, ২৪ ফেব্রুয়ারি থেকে ২৪ মার্চের মধ্যে কোনও ব্যক্তি বা সংগঠন যদি প্রমাণ করতে পারেন যে, ইভিএমে কারচুপি করা সম্ভব, তা হলে কেন্দ্রীয় সরকারের তরফ থেকে তাঁকে ৫০ হাজার সুইস  ফ্রাঁ (প্রায় ৩৫ লক্ষ টাকা) পুরস্কার দেওয়া হবে।

Advertisement

অনিন্দ্য মুখোপাধ্যায়

জ়ুরিখ (সুইৎজ়ারল্যান্ড) শেষ আপডেট: ২৬ মার্চ ২০১৯ ০২:৪৪
Share:

সুইৎজ়ারল্যান্ডে এখন চলছে ইভিএম নিয়ে জোর বিতর্ক। কেন্দ্রীয় সরকারের প্রস্তাব— আসন্ন অক্টোবরের নির্বাচনে ২৬টি রাজ্যের অন্তত দুই-তৃতীয়াংশ রাজ্যে ব্যবহৃত হোক ইভিএম। কিন্তু অনেকেই ইভিএমের বিশ্বাসযোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন। অগত্যা সরকারের তরফ থেকে ঘোষণা করা হয়েছে, ২৪ ফেব্রুয়ারি থেকে ২৪ মার্চের মধ্যে কোনও ব্যক্তি বা সংগঠন যদি প্রমাণ করতে পারেন যে, ইভিএমে কারচুপি করা সম্ভব, তা হলে কেন্দ্রীয় সরকারের তরফ থেকে তাঁকে ৫০ হাজার সুইস ফ্রাঁ (প্রায় ৩৫ লক্ষ টাকা) পুরস্কার দেওয়া হবে। একে বলা হচ্ছে ‘পাবলিক ইনটিউশন টেস্ট’। যত দিন না এই বিতর্ক মিটছে, তত দিন এ দেশের ভোট মূলত কাগজের ব্যালটেই।

Advertisement

এ দেশে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল ভারতবর্ষের বহু আগে, সেই ১৮৪৮-তে। তবে মহিলাদের ভোটাধিকারের ক্ষেত্রে সুইৎজ়ারল্যান্ড অনেকটাই পিছিয়ে। ১৯৭১ সালে সুইৎজ়ারল্যান্ডে মহিলারা প্রথম ভোটাধিকার পান। ইন্দিরা গাঁধী তত দিনে ভারতের প্রধানমন্ত্রী হয়ে গিয়েছেন!

ভারতের মতো সুইৎজ়ারল্যান্ডও যুক্তরাষ্ট্রীয় কাঠামোর দেশ। তবে রাজ্যগুলোর হাতে বেশ অনেকটাই ক্ষমতা। প্রত্যেক রাজ্যেরই আছে নিজস্ব সংবিধান, আইনসভা, আদালত, এমনকি পতাকাও। কেন্দ্রীয় সরকারের নীতি প্রণয়নের ক্ষমতা মূলত মুদ্রানীতি, বিদেশনীতি, প্রতিরক্ষা, সামাজিক নিরাপত্তার মতো বিষয়গুলোতে সীমাবদ্ধ। প্রতি চার বছরে হয় কেন্দ্রীয় নির্বাচন। যেখানে জনগণ বেছে নেন ২৪৬ জন জনপ্রতিনিধিকে। তাঁরা নির্বাচন করেন সাত সদস্যের এক কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভা। আর এই কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভার সদস্যদের মধ্যে প্রত্যেক বছর এক জন করে সামলান প্রেসিডেন্ট অর্থাৎ আলঙ্কারিক রাষ্ট্রনেতা পদটির দায়িত্ব। এ দেশে ভিআইপি সংস্কৃতি নেই। ফলে নেতাদের বিশেষ কোনও কনভয় নেই। কেউই নিরাপত্তারক্ষী নিয়ে চলাফেরা করেন না। এবং ট্রেনে বা বাসে কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভার সদস্যদের সঙ্গে দেখা হয়ে যাওয়াটা এ দেশে আদপেই অস্বাভাবিক নয়।

Advertisement

দিল্লি দখলের লড়াই, লোকসভা নির্বাচন ২০১৯

এই দেশের আরও একটি অভিনব বিষয় হচ্ছে— ‘ডিরেক্ট ডেমোক্র্যাসি’ অর্থাৎ প্রত্যক্ষ গণতন্ত্র। যে কোনও নীতি প্রণয়নের ক্ষেত্রে জনগণের অনুমোদন বাধ্যতামূলক। অর্থাৎ গণভোট আবশ্যিক। সরকার প্রণোদিত নীতির বিরুদ্ধে যদি ১০০ দিনের মধ্যে ৫০ হাজার স্বাক্ষর সংগ্রহ হয়, তা হলেই গণভোট হবে। স্বাভাবিক ভাবেই ভোটের বিষয়েরও অভাব নেই এই দেশে। ধর্মস্থানে গম্বুজ থাকবে কি না, বোরখা পরা যাবে কি না, ঘরে বন্দুক রাখা যাবে কি না, রেস্তরাঁয় সিগারেট খাওয়া যাবে কি না, রবিবার দোকান খোলা থাকবে কি না— ইত্যাদি হরেক রকম বিষয়। গত বছর এ রকমই একটি আপাত অদ্ভুত এক প্রস্তাব নিয়ে ভোট হল। যে সব কৃষকের শিংওয়ালা গবাদি পশু আছে, তাঁদের সরকারের তরফ থেকে ভর্তুকি দিতে হবে। ৪৫ শতাংশ ভোট পেয়ে হেরে যান প্রস্তাবকারীরা।

এত বিষয়, এত ভোট, অথচ নির্বাচনের কোনও উত্তাপ নেই। মিছিল, মিটিং, সমাবেশ, দেওয়াল-লিখন, মাইক লাগিয়ে জনসভা প্রায় নেই বললেই চলে। সাধারণ নির্বাচন মানে, হোর্ডিংয়ে প্রার্থীর নাম ও পরিচিতি টেলিভিশন বিতর্ক, পোস্টবক্সে বিভিন্ন দলের লিফলেট, জনবহুল এলাকায় ছোটখাটো সভা, ওইটুকুই। বিজয় মিছিলও কোনও দিন দেখিনি। না বোঝা যায়, জেতার উচ্ছ্বাস, না ধরা পড়ে হারের হতাশা!

লেখক জ়ুরিখে আর্থিক প্রযুক্তিকর্মী

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন