Tehrik-i-Taliban

Taliban: কয়েক ঘণ্টার মধ্যে দু’টি প্রাদেশিক রাজধানী দখল, আফগানিস্তানে জোর বাড়াচ্ছে তালিবান

দু’দশক আগে এ দেশে তালিবানের পতনের পরেও উত্তর-পূর্ব আফগানিস্তানের সব চেয়ে বড় এই শহরটি স্বল্প সময়ের জন্য হাতছাড়া হয়েছিল আফগান সরকারের।

Advertisement

সংবাদ সংস্থা

কুন্দুজ় শেষ আপডেট: ০৯ অগস্ট ২০২১ ০৬:৪৫
Share:

ফাইল চিত্র।

এ বার কুন্দুজ় এবং সর-ই-পুল। আজ কয়েক ঘণ্টার ব্যবধানে উত্তর আফগানিস্তানের দু’টি প্রাদেশিক রাজধানী দখল করে নিল তালিবান। বিশেষত, কুন্দুজ় হাতছাড়া হয়ে যাওয়াটা আফগান বাহিনীর কাছে সাম্প্রতিক কালে সব চেয়ে বড় ধাক্কা। তবে আফগান প্রতিরক্ষা মন্ত্রক জানিয়েছে, হারানো এলাকা পুনরুদ্ধারে কম্যান্ডো বাহিনী পাল্টা অভিযান চালাচ্ছে। গত ২৪ ঘণ্টায় অন্তত ১৮টি প্রদেশে আফগান বাহিনীর প্রত্যাঘাতে ৫৭২ জন তালিবান জঙ্গি নিহত এবং ৩০৯ জন আহত হয়েছে বলে সরকারের দাবি।

Advertisement

টানা লড়াইয়ের পরে গত শুক্রবার থেকে এই নিয়ে চারটি প্রাদেশিক রাজধানী দখল করল তালিবান। শুক্রবার তালিবান দখল করেছিল ইরান সীমান্ত লাগোয়া নিমরোজ় প্রদেশের রাজধানী জ়ারাঞ্জ। শনিবার উত্তরের জোজ়ান প্রদেশের রাজধানী শেবেরগানও কব্জা করে নেয় তারা। শেবেরগানের জেল ভেঙে প্রায় সাতশো বন্দিকে ছাড়িয়ে নিয়ে গিয়েছে তালিবান। স্থানীয়রা জানাচ্ছেন, এই বন্দিরা সকলেই তালিবান যোদ্ধা। শীঘ্রই তারা আবার বাহিনীতে যোগ দেবে। তবে আজই শেবেরগানের তালিবান ঘাঁটিতে বোমাবর্ষণ করেছে আমেরিকান বায়ুসেনার বি-৫২ বিমান। তাতে দু’শোরও বেশি তালিবান যোদ্ধা নিহত হয়েছে বলে আফগান সরকারের দাবি।

আমেরিকা এবং ন্যাটোর বাহিনী সরতে শুরু করার সঙ্গে সঙ্গেই আফগানিস্তানের বিভিন্ন প্রদেশে হামলা শুরু করেছে তালিবান। পশ্চিমে হেরাট থেকে দক্ষিণে লস্কর গা কিংবা কন্দহরের উপকণ্ঠে তীব্র হচ্ছে লড়াই। আমেরিকা গত কাল তাদের সমস্ত নাগরিককে অবিলম্বে যে কোনও বিমান ধরে আফগানিস্তান ছাড়তে বলেছে। কাবুলের আমেরিকান দূতাবাস জানিয়েই দিয়েছে, বর্তমান নিরাপত্তা পরিস্থিতিতে আফগানিস্তানে থাকা আমেরিকানদের সাহায্য করার ক্ষেত্রে তাদের ক্ষমতা খুবই সীমিত। কাজেই প্রয়োজনে আমেরিকায় ফেরার বিমানের টিকিটের টাকাও ঋণ হিসেবে দিতে রাজি দূতাবাস।

Advertisement

কুন্দুজ় প্রদেশের রাজধানী শহরের নামও কুন্দুজ়। দু’দশক আগে এ দেশে তালিবানের পতনের পরেও উত্তর-পূর্ব আফগানিস্তানের সব চেয়ে বড় এই শহরটি স্বল্প সময়ের জন্য হাতছাড়া হয়েছিল আফগান সরকারের। ২০১৫ সালের সেপ্টেম্বরে কুন্দুজ় দখল করে সেখানে পতাকাও তুলে ফেলেছিল তালিবান। দিন পনেরোর মধ্যে আফগান সেনা শহরটি পুনরুদ্ধার করে। তার পরেও মাঝেমধ্যেই কুন্দুজ় দখলের চেষ্টা চালিয়েছে তালিবান। চলেছে চোরাগোপ্তা হামলা।

আর আজ সরাসরি বিবৃতি দিয়েই তালিবান বলেছে, ‘‘তীব্র যুদ্ধের পরে মুজাহিদরা কুন্দুজ়ের রাজধানী দখল করেছে। সর-ই-পুল শহর, সেখানকার সমস্ত সরকারি ভবন ও পরিকাঠামো দখল করে নিয়েছে তারা।’’ তবে আফগান প্রতিরক্ষা মন্ত্রক পাল্টা বিবৃতিতে বলেছে, ‘‘প্রধান পরিকাঠামোগুলিকে মুক্ত করার অভিযানে নেমেছে কম্যান্ডো বাহিনী। টিভি ও বেতার কেন্দ্রের মতো কিছু পরিকাঠামো ইতিমধ্যেই জঙ্গি তালিবানের হাত থেকে পুনরুদ্ধার করা হয়েছে।’’ গুলাম রাবানি নামে কুন্দুজ়ের প্রাদেশিক পরিষদের এক সদস্য জানিয়েছেন, রাজধানী শহরের ‘অধিকাংশ এলাকা’ এখন তালিবানের দখলে। এখানেও জেল ভেঙেছে তারা। লড়াই চলছে গভর্নরের বাসভবন ও পুলিশের সদর দফতর সংলগ্ন এলাকায়। সর-ই-পুলে (এখানেও রাজধানী ও প্রদেশের একই নাম)।

নারীদের অধিকার নিয়ে কাজ করেন পরভিনা আজ়িমি। সংবাদ সংস্থাকে তিনি জানান, শহর ছেড়ে তিন কিলোমিটার দূরে ব্যারাকে আশ্রয় নিয়েছেন সরকারি অফিসার ও সেনারা। একটি বিমান এসেছিল, কিন্তু নামতে পারেনি।

আজ সন্ধ্যা সাড়ে ৬টা নাগাদ শেবেরগানে বোমা ফেলে আমেরিকান বোমারু বিমান। আফগান প্রতিরক্ষা মন্ত্রকের কর্তা ফওয়াদ আমন টুইটারে লেখেন, ‘‘শহরের জঙ্গি ঘাঁটিগুলিতে বিমান হানার পরে দু’শোরও বেশি তালিবান নিহত। তাদের একশোরও বেশি গাড়ি ও প্রচুর অস্ত্রশস্ত্র ধ্বংস হয়ে গিয়েছে।’’

এর পাশাপাশি হেলমন্দ প্রদেশের রাজধানী লস্কর গা-এর তালিবান অধ্যুষিত এলাকাগুলিতে হামলা চালিয়েছে আফগান বিমান বাহিনী। প্রতিরক্ষা মন্ত্রকের দাবি, এই হামলায় ৫৪ জন তালিবান নিহত হয়েছে, আহত ২৩ জন। তবে হেলমন্দের প্রাদেশিক পরিষদের ডেপুটি চেয়ারম্যান মজিদ আখুন্দ জানিয়েছেন, বিমান হানায় একটি স্কুল এবং একটি স্বাস্থ্যকেন্দ্র ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এক জন নার্স প্রাণ হারিয়েছেন বলে স্থানীয় সূত্রের খবর। লস্কর গা-এর ১০টির মধ্যে ৯টি পুলিশ জেলাই এখন তালিবানের দখলে। তবে সরকারের দাবি, আমেরিকান সাহায্যপ্রাপ্ত আফগান বাহিনী গত কাল থেকে নানগরহর, গজ়নি, কন্দহর, হেরাট, হেলমন্দ, বদখশান-সহ ১৮টি প্রদেশে অভিযান চালাচ্ছে। তাতেই নিহত হয়েছে ৫৭২ তালিবান।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন