করাচিতে ৪ বালোচ জঙ্গি-সহ হত ১১
Terrorism

পণবন্দির ছক! হামলা বানচাল স্টক এক্সচেঞ্জে

প্রায় আধ ঘণ্টা পরে যখন গুলিবৃষ্টি থামল, দেখা  গেল দুই জঙ্গি লুটিয়ে পড়ে আছে গেটের ঠিক মুখে।

Advertisement

সংবাদ সংস্থা

করাচি শেষ আপডেট: ৩০ জুন ২০২০ ০২:১৬
Share:

করাচির ঘটনাস্থলে পড়ে এক জঙ্গির মৃতদেহ। পাশে বিপুল অস্ত্র ও খাবার। রয়টার্স

সকালে ঘড়ির কাঁটা তখন সবে ১০টা ছুঁয়েছে। আধ ঘণ্টা আগেই খুলে গিয়েছে স্টক এক্সচেঞ্জ ভবন। সপ্তাহের প্রথম দিনে সবে একটু একটু করে সরগরম হচ্ছে পাকিস্তানের ‘ওয়াল স্ট্রিট।’ লোক চলাচল শুরু হয়েছে আশপাশে পাকিস্তান স্টেট ব্যাঙ্ক-সহ বেশ কয়েকটি দেশি-বিদেশি ব্যাঙ্কের সদর দফতরে। একটা রুপোলি করোলা এসে দাঁড়াল স্টক এক্সচেঞ্জ ভবনের মূল ফটকের ঠিক গা ঘেঁষে। ব্যাকপ্যাক আর একে-৪৭, রকেট লঞ্চার নিয়ে নেমে এল চার জন। কেউ কিছু আঁচ করার আগেই পর-পর গ্রেনেড বিস্ফোরণ। সঙ্গে গুলিবৃষ্টি।

Advertisement

আজ সাতসকালে এ ভাবেই ফের জঙ্গি হামলার সাক্ষী করাচির ‘হাই সিকিউরিটি জ়োন’। মুহূর্তের মধ্যেই পাল্টা জবাব দিতে শুরু করলেন নিরাপত্তারক্ষীরা। দ্রুত ভবন ঘিরে ফেলল সিন্ধ পুলিশ ও পাক রেঞ্জার্স বাহিনীও বড় অংশ। প্রায় আধ ঘণ্টা পরে যখন গুলিবৃষ্টি থামল, দেখা গেল দুই জঙ্গি লুটিয়ে পড়ে আছে গেটের ঠিক মুখে। আরও দু’জন নিথর কয়েক পা ভিতরে।

আজকের সংঘর্ষে ওই চার জঙ্গি ছাড়াও, চার নিরাপত্তা রক্ষী, এক পুলিশ কর্মী ও দুই সাধারণ নাগরিকের প্রাণ গিয়েছে। আহত অন্তত সাত জন। তবে এক বারের জন্যও ট্রেডিং বন্ধ হয়নি বলে দাবি করেছেন পাকিস্তান স্টক এক্সচেঞ্জের চেয়ারম্যান সুলেমান এস মেহদি। কিন্তু জঙ্গিদের ব্যাকপ্যাক থেকে যেহেতু প্রচুর গোলাগুলি এবং খাবার উদ্ধার হয়েছে, তাই পুলিশের অনুমান, পণবন্দি করার ছক নিয়েই হামলা করতে এসেছিল জঙ্গিরা।

Advertisement

সন্ত্রাসের সূত্রপাত

• ‘বালোচ লিবারেশন আর্মি’ বা ‘বিএলএ’ পাকিস্তানের বালুচিস্তানের অন্যতম পুরনো জঙ্গি সংগঠন।

• পাকিস্তান থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে স্বতন্ত্র দেশ ‘গ্রেটার বালুচিস্তান’ গড়তে চায়।

• অন্তত ৬ হাজার সদস্য । বেশির ভাগই ‘মারি’ ও ‘বুগতি’ জনজাতি।

• সক্রিয়তা সব চেয়ে বেশি বালুচিস্তান ও আফগান-সীমান্তবর্তী এলাকায়।

• ২০০০ সালে তৈরি। তবে অনেকেরই দাবি, আগের ‘ইন্ডিপেনডেন্ট বালুচিস্তান মুভমেন্ট’-এর নাম বদলে এদের জন্ম। বহু হামলার দায় স্বীকার করেছে এরা।

• আমেরিকা ও ব্রিটেনের তৈরি জঙ্গি-তালিকাতেও রয়েছে এদের নাম।

গোয়েন্দা-ব্যর্থতার জেরেই কি এমনটা ঘটে গেল? মানতে নারাজ পাক রেঞ্জার্স। প্রত্যক্ষদর্শীদের একাংশের দাবি, অফ-ডিউটিতে থাকার সময়ে সিন্ধ পুলিশ যে পোশাক পরে, তা পরেই এ দিন হামলা করতে এসেছিল বালোচ জঙ্গিরা। সিন্ধ পুলিশের সন্ত্রাস-দমন শাখা সূত্রের দাবি, নিহত চার জঙ্গির মধ্যে এক জনকে চিহ্নিত করা গিয়েছে। সলমন নামের ওই জঙ্গিটি বালুচিস্তানের বাসিন্দা বলেও মনে করা হচ্ছে। হামলার দায় ওনিয়েছে নিষিদ্ধ জঙ্গি সংগঠন বালোচ লিবারেশন আর্মির শাখা সংগঠন মজিদ ব্রিগেড।

জঙ্গি-হানা পাকিস্তানে

সোমবার সকাল ১০টায়

স্টক এক্সচেঞ্জ ভবন চত্বরে

নিহত চার জঙ্গি-সহ ১১

দায় নিল: বালোচ লিবারেশন আর্মি

পাক বিদেশমন্ত্রী: ‘শান্তি সহ্য হয় না ভারতের’

দিল্লির পাল্টা: ঘরোয়া সমস্যা, অন্যায় দোষারোপ

প্রসঙ্গত, ২০১৮-য় করাচির চিনা দূতাবাসে এরাই হামলা চালিয়েছিল। ইসলামাবাদের দাবি, দেশ থেকে আলাদা হতে চাওয়ার পাশাপাশি, বালুচিস্তানে চিনের যে ‘ওয়ান বেল্ট ওয়ান রোড’-এর কাজ চলছে, তা ভেস্তে দেওয়ার লক্ষ্যে নাগাড়ে সন্ত্রাস চালিয়ে আসছে সংগঠনটি। নিহতদের পরিবারের প্রতি সমবেদনা জানিয়েছেন পাক প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান ও প্রেসিডেন্ট আরিফ আলভি। এই হামলা পাকিস্তানের জাতীয় নিরাপত্তা ও অর্থনীতির উপর আঘাত বলে মন্তব্য করেছেন সিন্ধ প্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী মুরাদ আলি শাহ।

দিনের শেষে অবশ্য এই হামলার জন্যও ভারতকে দুষলেন পাক বিদেশমন্ত্রী শাহ মেহমুদ কুরেশি। তাঁর কথায়, ‘‘পাকিস্তানের শান্তি ভারত সহ্য করতে পারে না।’’ বালোচদের আন্দোলনের প্রতি নানা সময়েই সহানুভূতি জানিয়েছে ভারত। কুরেশির ইঙ্গিত সে দিকেই। হামলার পিছনে ভারতীয় গুপ্তচর সংস্থা ‘র’-এর হাত রয়েছে বলে দাবি সিন্ধ রেঞ্জার্সের ডিরেক্টর জেনারেল ওমর আহমেদ বুখারির। ভারতকে নিশানা করেই তাঁর অভিযোগ, পাকিস্তানের অর্থনৈতিক ক্ষতিসাধনের পাশাপাশি বিনিয়োগে বাগড়া দেওয়াই ছিল এই হামলার লক্ষ্য। ইমরানের জাতীয় নিরাপত্তা বিষয়ক বিশেষ সহকারী মঈদ ইউসুফও এ দিন ভারতের নাম না-করেই বলেন, ‘‘করাচিতে এই হামলা নিশ্চিত ভাবেই ভিন্ দেশের মদতে সন্ত্রাস। পাকিস্তানের বিরুদ্ধে এই চক্রান্ত যে হতে চলেছে, সেই আশঙ্কা আমরা আগেই করেছিলাম।’’

আরও পড়ুন: করোনার ভ্যাকসিন তৈরিতে আরও অগ্রগতি, তৃতীয় ধাপের পরীক্ষামূলক প্রয়োগ শুরু

পাকিস্তানের যাবতীয় অভিযোগ ‘ভিত্তিহীন’ বলে উড়িয়ে দিয়েছে দিল্লি। বিদেশ মন্ত্রকের মুখপাত্র অনুরগ শ্রীবাস্তব বলেন, ‘‘নিজেদের ঘরোয়া সমস্যা ধামাচাপা দিতে পাকিস্তান এ ভাবে ভারতকে দোষারোপ করতে পারে না। বিশ্বের কোথাও সন্ত্রাস হামলা হলেই তার নিন্দা করে ভারত। এমনকি করাচিতে হলেও।’’

আরও পড়ুন: অ্যানাকোন্ডার লেজ ধরে বোটে তোলার চেষ্টা পর্যটকের

করোনা-আবহেই স্টক এক্সচেঞ্জ ভবনের অনেক কর্মী এখন বাড়ি থেকে কাজ করছেন। অন্যথায় সাধারণ পাঁচটা সোমবারের মতো এ দিনও প্রায় ছ’হাজার কর্মী ঘটনাস্থলে থাকলে কী হত, এখনও তা ভাবতে গিয়ে শিউরে উঠছেন সাবির আহমেদ। আজ সকাল সাড়ে ৯টাতেই এক্সচেঞ্জ ভবনের তেতলায় নিজের অফিসে ঢুকে পড়েছিলেন সাবির। জানালেন, গোলাগুলির শব্দ শুনেই কেবিনের দরজা এঁটে এক জায়গায় চলে আসেন সবাই। সিন্ধ রেঞ্জার্সের ডিরেক্টর বুখারির দাবি, জঙ্গি-দমনে আট মিনিটেই অভিযান শেষ করেছে সিন্ধ পুলিশ ও তাঁদের বাহিনী। যদিও ভবনের সব তলায় বম্ব স্কোয়াডের তল্লাশি শেষ হতে কেটে যায় আরও ৩০-৩৫ মিনিট।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন