মায়ের ফোন কেন যে কেটে দিয়েছিলাম!

যুবরানি ডায়ানাকে নিয়ে তৈরি একটি তথ্যচিত্র ‘আওয়ার মাদার: হার লাইফ অ্যান্ড লেগ্যাসি’-তে এ ভাবেই মাকে হারানোর কষ্ট, সেই কষ্টের সঙ্গে মানিয়ে নেওয়ার লড়াইয়ের গল্প উঠে এসেছে ডায়ানার দুই ছেলের কথায়। ১৯৯৭ সালের ৩১ অগস্ট প্যারিসে গাড়ি দুর্ঘটনায় মারা যান ডায়ানা।

Advertisement

শ্রাবণী বসু

লন্ডন শেষ আপডেট: ২৪ জুলাই ২০১৭ ০৪:২২
Share:

যুবরানি ডায়ানার সঙ্গে উইলিয়াম এবং হ্যারি

তুতো ভাইবোনদের সঙ্গে তখন দস্যিপানায় মজে দুই ভাই। সেই সময়ে প্যারিস থেকে আসে মায়ের ফোন। খেলায় ব্যস্ত খুদেদের কি আর মায়ের সঙ্গে কথা বলতে ভাল লাগে? তড়িঘড়ি ফোন ছেড়ে ছুটেছিল তারা। সেই ছিল মা ডায়ানার সঙ্গে তাদের শেষ কথোপকথন। যার জন্য আজও আক্ষেপ করেন তাঁর দুই ছেলে উইলিয়াম ও হ্যারি।

Advertisement

যুবরানি ডায়ানাকে নিয়ে তৈরি একটি তথ্যচিত্র ‘আওয়ার মাদার: হার লাইফ অ্যান্ড লেগ্যাসি’-তে এ ভাবেই মাকে হারানোর কষ্ট, সেই কষ্টের সঙ্গে মানিয়ে নেওয়ার লড়াইয়ের গল্প উঠে এসেছে ডায়ানার দুই ছেলের কথায়। ১৯৯৭ সালের ৩১ অগস্ট প্যারিসে গাড়ি দুর্ঘটনায় মারা যান ডায়ানা। বড় উইলিয়ামের বয়স তখন ১৫। ছোট হ্যারি মাত্র ১২। ফোনটা ডায়ানা করেছিলেন মৃত্যুর কয়েক ঘণ্টা আগে।

উইলিয়াম জানান, সে দিন স্কটল্যান্ডের বালমোরাল দুর্গে তুতো ভাইবোনদের সঙ্গে দারুণ সময় কাটাচ্ছিলেন দুই ভাই। তখনই প্যারিস থেকে ফোন আসে মায়ের। উইলিয়ামের মনে পড়ে যায়, ‘‘গুড বাই, পরে দেখা হবে, এই বলে কোনও মতে ফোন রেখে দিয়েছিলাম। মায়ের সঙ্গে ওই শেষ কথাগুলো সারা জীবন আমার মনে রয়ে যাবে।’’ ‘‘খুব অল্প কথা হয়েছিল সে দিন। যদি ফোনটা না ছাড়তাম... এই আক্ষেপ রয়েই যাবে,’’ একই বিষাদের সুর হ্যারির গলাতেও।

Advertisement

আগামিকাল ইংল্যান্ডের একটি চ্যানেলে দেখানো হবে তথ্যচিত্রটি। যেখানে দুই ভাই বলেছেন, মা যা কিছু করতেন, তা-ই যেন তাজা হাওয়ার ঝাপটা এনে দিত। তিনি ছিলেন শিশুর মতো। বাচ্চাদের সব রকম দুষ্টুমিতে যাঁর সায় ছিল। হ্যারি বলেছেন, ‘‘যখন কেউ আমায় প্রশ্ন করেন, ‘মা খুব মজার ছিল বুঝি?’— আমি যেন তখন কানের পাশে মায়ের হাসিটা শুনতে পাই। মায়ের জড়িয়ে ধরাটা অনুভব করতে পারি।’’ ফুটবল খেলা থেকে মিষ্টি চুরি, ছেলেদের সব দস্যিপানায় উৎসাহ দিতেন ডায়ানা। বলতেন, ‘‘যত ইচ্ছে দুষ্টুমি করো, ধরা না পড়লেই হলো।’’ সে দিন মা কী বলেছিলেন, মনে আছে? উইলিয়াম বলেছেন, ‘‘আছে।’’ আর ভেঙে বলেননি তিনি।

দুই ভাইকে চমক দেওয়ার জন্য নাকি এক দিন বাড়িতে তিন-তিন জন সুপারমডেলকে ডেকে বসেন ডায়ানা। স্কুল থেকে বাড়িতে পা দিতেই থ উইলিয়াম। সিড়িতে দাঁড়িয়ে নাওমি ক্যাম্পবেল, সিন্ডি ক্রফোর্ড, ক্রিস্টি টারলিংটন! উইলিয়াম বলেন, ‘‘আমার তখন ১২-১৩ বছর বয়স হবে। দেওয়ালে ওই মডেলদের ছবি টাঙিয়ে রাখি। মায়ের কাণ্ড দেখে চোখ-মুখ লাল হয়ে যায়। মনে হচ্ছিল, সিঁড়িতেই বসে পড়ব। এই মজার স্মৃতিটা সারা জীবন সঙ্গে রয়ে যাবে।’’

মাকে ঘিরে বিতর্কের আঁচ টের পেলেও তা পুরোপুরি বোঝার বয়স তখনও হয়নি দুই ভাইয়ের। সেই সময়েই আসে ডায়ানার মৃত্যুসংবাদ। শুধু দুই ভাই নয়, গোটা বাড়িটাকে যেন ভূমিকম্পের মতো কাঁপিয়ে দিয়েছিল সেই খবর। হ্যারি জানান, ‘মা না থাকাটাই স্বাভাবিক’, এই ভাবনা নিয়েই বড় হয়েছেন তিনি। তাই মনে হতো, তাঁর মাকে কোনও দিনও দেখেননি এমন মানুষও কী ভাবে ওই মানুষটার মৃত্যুতে কাঁদতে পারে? হ্যারি বলেছেন, ‘‘দুঃখের সঙ্গে যুঝতে সবাই নিজেদের মতো করে উপায় বার করে। আমরা সেই দুঃখের দরজাটাই তালা দিয়ে রেখেছি এত দিন।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন