নেই হাসপাতাল, রণক্ষেত্র আলেপ্পোয় মৃত্যুমিছিল

এক দিকে দুই রাষ্ট্রনেতার করমর্দনে সিরিয়ায় শান্তি ফেরানোর বার্তা! আর অন্য দিকে, লাগাতার বাহিনী-বিদ্রোহী লড়াই আর বোমাবর্ষণে ক্ষতবিক্ষত দেশের অন্যতম প্রধান শহর আলেপ্পো!

Advertisement

সংবাদ সংস্থা

দামাস্কাস শেষ আপডেট: ২২ নভেম্বর ২০১৬ ০২:৪৮
Share:

নিরাপদ আশ্রয়ের খোঁজে। ছবি: এএফপি

এক দিকে দুই রাষ্ট্রনেতার করমর্দনে সিরিয়ায় শান্তি ফেরানোর বার্তা! আর অন্য দিকে, লাগাতার বাহিনী-বিদ্রোহী লড়াই আর বোমাবর্ষণে ক্ষতবিক্ষত দেশের অন্যতম প্রধান শহর আলেপ্পো!

Advertisement

রবিবার লিমায় এশিয়া প্যাসিফিক ইকোনমিক কোঅপারেশন (আপেক) শীর্ষ বৈঠকে সিরীয় প্রেসিডেন্ট বাশার আল আসাদের অন্যতম বন্ধু তথা রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের কাছে পশ্চিম এশিয়ায় শান্তি ফেরানোর বার্তা দিলেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা। আর অন্য দিকে, গত এক সপ্তাহ ধরে বিদ্রোহীদের হটিয়ে আলেপ্পো পুনর্দখল করতে নজিরবিহীন ভাবে বোমা-গুলি চালিয়ে যাচ্ছে সরকারি বাহিনী। দফায় দফায় উঠছে রাসায়নিক অস্ত্র ব্যবহারের অভিযোগ, কোথাও আবার আম জনতার পরোয়া না করেই চলছে গুলি-বোমা। বিভিন্ন মানবাধিকার সর্বেক্ষণের দাবি, গত পাঁচ বছরে আলেপ্পোয় এত ভারী বোমাবর্ষণ এই প্রথম। বিভিন্ন মানবাধিকার সংস্থা এবং পর্যবেক্ষণ সংস্থা সূত্রে পাওয়া খবর বলছে, গত শনিবার পর্যন্ত আলেপ্পোয় মৃত্যু হয়েছে অন্তত ২৮৯ জনের। এই তথ্যে সিলমোহর লাগিয়েছে সিরীয় অসামরিক প্রতিরক্ষা মন্ত্রকের ‘দ্য হোয়াইট হেলমেটস’।

বিদ্রোহীদের দখলে থাকা পূর্ব আলেপ্পোয় রবিবার একটি ব্যারেল-বোমায় একই পরিবারের ৬ জনের মৃত্যু হয়েছে। একটি সূত্র বলছে, ওই বোমায় ব্যবহার করা হয়েছিল ক্লোরিন। যদিও এই দাবি উড়িয়ে দিয়েছে দামাস্কাস। জানা গিয়েছে, ওই দিনই আলেপ্পোর একটি স্কুলে বিদ্রোহীদের গুলিতে মৃত্যু হয়েছে ৮ শিশুর।

Advertisement

রবিবার রাতেই পূর্ব আলেপ্পোর পরিস্থিতি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে বিবৃতি প্রকাশ করেছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা। জানানো হয়েছে, পূর্ব আলেপ্পোর হাসপাতালগুলি ভয়ানক ক্ষতিগ্রস্ত। স্থানীয় চিকিৎসক ও নার্সরা জানিয়েছেন, গত দু’দিনে সিরীয় বাহিনীর বোমাবর্ষণে তালা পড়েছে এলাকার সবচেয়ে বড় দু’টি হাসপাতালে। বন্ধ হয়েছে আলেপ্পোর এক মাত্র শিশু চিকিৎসালয়টি। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার বিবৃতি বলছে, ‘‘ছোট চিকিৎসাকেন্দ্রের মাধ্যমে ওই এলাকায় কিছু পরিষেবা এখনও পাওয়া যাচ্ছে। তবে অস্ত্রোপচার, ট্রমা কেয়ার কিংবা বড় ধরনের কোনও চিকিৎসা মিলছে না।’’ চিকিৎসা পরিষেবার পাশাপাশি যুদ্ধকালীন পরিস্থিতিতে শহর জুড়ে হাহাকার শুরু হয়েছে খাবার আর পানীয় জলের জন্যও।

শহর দখলের এই অভিযান এবং সাধারণ মানুষের মৃত্যুর খবর উদ্বেগ বাড়িয়েছে তামাম বিশ্বের মানবাধিকার সংস্থাগুলির। এই পরিস্থিতির তীব্র নিন্দা করেছে ইউরোপীয় ইউনিয়নও। পাশাপাশি প্রশ্ন উঠছে, শহর দখল অভিযানের আগে কেন আলেপ্পোর সাধারণ মানুষকে নিরাপদ জায়গায় সরিয়ে আনার চেষ্টা করছে না সরকার? হাসপাতালহীন ওই এলাকায় ত্রাণ পাঠানোর ব্যবস্থাই বা নেই কেন? আর সর্বোপরি যে প্রশ্নটা আরও এক বার জনমানসে সরকারের অবস্থান নিয়ে প্রশ্ন তুলে দিচ্ছে তা হল, ক্লোরিন-বোমা বা রাসায়নিক অস্ত্র ব্যবহারের অভিযোগ সরকার উড়িয়ে দিলেও দিনের পর দিন কেন এই ক্লোরিন-বোমার বলি হতে হচ্ছে আম জনতাকে? পরিস্থিতি সামলাতে কেন পদক্ষেপ করছে না সরকার? প্রশ্ন তুলছে মানবাধিকার সংস্থাগুলি।

তবে মুখে কুলুপ এঁটেছে দামাস্কাস।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন