Sheikh Hasina Verdict

পুলিশের গুলিতে উপড়ে এসেছিল চোখ! নারায়ণগঞ্জের সেই চালকের সাক্ষ্য নিয়ে আদালতে শুরু হয় হাসিনার বিচার

ঢাকা সাউথ সিটির মেয়র শেখ ফাজেল নুর তাপস এবং হাসিনার ফোনের কথোপকথনের রেকর্ডের নথি আদালতে পেশ করা হয়। সরকারি আইনজীবীর সওয়াল, হাসিনা ফোনে তাপসকে প্রতিবাদীদের লক্ষ্য করে গুলি চালানোর নির্দেশ দেন।

Advertisement

আনন্দবাজার ডট কম ডেস্ক

শেষ আপডেট: ১৭ নভেম্বর ২০২৫ ১৪:৩৪
Share:

খোকনচন্দ্র বর্মনের (ইনসেট) সাক্ষ্যের ভিত্তিতে আদালতে বিচার শুরু হয়েছিল শেখ হাসিনার। — ফাইল চিত্র।

চোখের সামনে দেখেছিলেন প্রতিবাদীদের বুকে গুলি করছে পুলিশ-রক্ষীরা। গুলি ছুটে এসেছিল তাঁর দিকেও। তাতে উপড়ে গিয়েছিল একটি চোখ। সেই খোকন চন্দ্র বর্মণের সাক্ষ্যের ভিত্তিতেই আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইবুনালে গত ৩ অগস্ট বিচার শুরু হয় বাংলাদেশের প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার। এমনটাই জানিয়েছে বাংলাদেশের সংবাদমাধ্যমে ‘দ্য ডেলি স্টার’। হাসিনার বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগ রয়েছে। সোমবার সেই সংক্রান্ত মামলায় দোষী সাব্যস্ত করা হয় সে দেশের পলাতক প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রীকে। তাঁকে মৃত্যুদণ্ড দিয়েছে বাংলাদেশের বিশেষ আদালত।

Advertisement

খোকন ছোট বাসের চালক ছিলেন। তিনি গত ৩ অগস্ট আদালতে জানান, ২০২৪ সালের ১৮-১৯ জুলাই নারায়ণগঞ্জ সাইনবোর্ড এলাকায় তাঁর চোখের সমানেই প্রতিবাদীদের লক্ষ্য করে গুলি চালানো হয়। খোকনের দাবি, গত বছর ৫ অগস্ট যাত্রাবাড়িতে তাঁর চোখের সামনেই গুলিতে প্রাণ যায় দুই প্রতিবাদীর। আহত হন বহু। এজলাসে দাঁড়িয়ে খোকন বলেন, ‘‘আমি বিচার চাই। আমি চাই শেখ হাসিনা, আসাদুজ্জামান খান কামাল, আইজিপি মামুন, কাউয়া কাদের ওরফে ওবায়দুল কাদের, শামিম ওসমান সাজা পান। আমাকে আঘাত করার জন্য, আমার হাজার হাজার ভাইদের খুন এবং জখম করার জন্য।’’

হাসিনার পাশাপাশি এই মামলায় অভিযুক্ত বাংলাদেশের প্রাক্তন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল এবং আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লা আল-মামুন। হাসিনা এবং কামাল বাংলাদেশ ছেড়েছেন। মামুন রাজসাক্ষী হয়েছেন। তাঁকে শুনানির সময়ে আদালতে হাজির করানো হয়। খোকনের বয়ান রেকর্ড করে চ্যানেলে সম্প্রচারও করা হয়।

Advertisement

গ্রাফিক: আনন্দবাজার ডট কম।

বাংলাদেশের আদালতে বিচার শুরুর পরেই নিহত এবং আহতদের জন্য ন্যায়বিচার চেয়ে আর্জি জানান অ্যাটর্নি জেনারেল মহম্মদ আসাদুজ্জামান। তিনি সওয়াল করে জানান, গত বছর অগস্টে যা হয়েছিল, তা বাংলাদেশের ইতিহাসে ‘জঘন্য অপরাধ’। খোকনের বয়ান রেকর্ডের পরে আদালতকক্ষে বাংলাদেশের গণআন্দোলন নিয়ে একটি তথ্যচিত্র এবং কিছু ভিডিয়ো দেখানো হয়। তা দেখে স্তব্ধ হয়ে যান উপস্থিত লোকজন। সেই তথ্যচিত্রে ‘পুলিশি অত্যাচারের’ কথা তুলে ধরেছে গণআন্দোলনে নিহতদের পরিবার। সেই তালিকায় রয়েছেন আবু সাঈদ, মির মাহফুজুর রহমান মুগ্ধ, মাহবুবুর রহমান সৈকতের পরিবারের সদস্যেরা। তাহির জামানের ছবি নিয়ে এক শিশু জানায়, তার বাবাকে খুব মিস্ করছে। সাংবাদিক তাহির ওই ঘটনার পর থেকে নিখোঁজ। এই তথ্যচিত্র দেখে ভেঙে পড়েন অভিযুক্ত তথা রাজসাক্ষী মামুনও।

ভিডিয়ো দেখানোর পরে ১০ মিনিটের বিরতি ঘোষণা করে আদালত। শুনানি শুরু হলে সাক্ষী খোকন চন্দ্রের ভিডিয়ো দেখানো হয় এজলাসে। তিনি জানান, যাত্রাবাড়িতে উড়ালপুলের নীচে একটি ব্যারেলের পিছনে লুকিয়ে ছিলেন। সেখান থেকে তাঁকে টেনে বার করে তাঁর মুখ লক্ষ্য করে গুলি ছোড়ে পুলিশ। তখনই একটি চোখ হারান খোকন। অন্য চোখের আংশিক দৃষ্টিও চলে যায়। নাক এবং মুখের অংশ প্রায় থেঁতলে যায়। তার পর থেকে বাংলাদেশ এবং রাশিয়ার হাসপাতালে একাধিক অস্ত্রোপচার হয়েছে খোকনের। তবু মুখের দাগ মেলায়নি। তাঁর কণ্ঠও হয়েছে ক্ষীণ।

খোকন আদালতে জানান, গত বছর ১৮ জুলাই নারায়ণগঞ্জে পড়ুয়াদের বিক্ষোভে যোগ দেন তিনি। পরের দিন চাশারা যাওয়ার সময়ে চোখের সামনে এক ছাত্রকে গুলিতে খুন হতে দেখেন। তিনি সাক্ষ্য দিয়ে জানান, ২০২৪ সালের ৫ অগস্ট সাইনবোর্ড এলাকা থেকে ঢাকার উদ্দেশে রওনা হয়েছিলেন তিনি এবং প্রতিবাদীরা। পথে যাত্রাবাড়িতে তাঁদের উদ্দেশে গুলি ছোড়া হয়। মৃত্যু হয় এক জনের। তাঁর কথায়, ‘‘পশুবলির সময় যেমন হয়, সে রকম ভাবে রক্ত ছড়িয়ে ছিল পথে।’’ তিনি জানান, সেনা এসে শূন্যে গুলি ছোড়ে। পুলিশকে পিছু হটতে বলে। কিন্তু সেনাবাহিনী সেখান থেকে সরে যেতেই আবার যাত্রাবাড়ি থানা থেকে গুলি ছুড়তে শুরু করে পুলিশ।

খোকন জানান, সে সময় তিনি কোনওমতে একটি উড়ালপুলের নীচে লুকিয়ে পড়েন। সেখান থেকে পুলিশ টেনে বার করে এনে তাঁর মাথা লক্ষ্য করে গুলি ছুড়েছিল। সেই গুলি ছিটকে লেগেছিল তাঁর মুখে। আদালতে এমনটাই জানান খোকন। হাসিনা এবং কামালের হয়ে আদালতে সওয়াল করেন আইনজীবী আমির হোসেন। তাঁকে নিয়োগ করেছে বাংলাদেশ প্রশাসনই। সেই হোসেনের সওয়াল, ২০২৪ সালের ১৮-১৯ জুলাই এবং ৫ অগস্ট কাজ কামাই করে কেন পথে নেমেছিলেন তিনি। খোকন জানান, ওই দিনগুলিতে কোনও যান পথে নামেনি। আমিরের দাবি, খোকনের বক্তব্য এবং তদন্ত রিপোর্টেও অনেক ফারাক রয়েছে। সরকারি আইনজীবী জানান, বাংলাদেশের সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশে কোনও সাক্ষীর সাক্ষ্য তদন্ত রিপোর্টের ভিত্তিতে চ্যালেঞ্জ করা যাবে না।

ট্রাইবুনালের মুখ্য প্রসিকিউটর তাজুল ইসলাম সওয়াল করে জানান, গণআন্দোলনের সময় প্রতিবাদীদের যে নির্যাতন করা হয়েছিল, সেই অপরাধের ‘নিউক্লিয়াস’ ছিলেন হাসিনা। ঢাকা সাউথ সিটির মেয়র শেখ ফাজেল নুর তাপস এবং হাসিনার ফোনের কথোপকথনের রেকর্ডের নথি আদালতে পেশ করেন আইনজীবী। তাঁর সওয়াল, হাসিনা ফোনে তাপসকে প্রতিবাদীদের উপরে গুলি চালানোর নির্দেশ দেন। তিনি এ-ও জানান, সেনাপ্রধানের সঙ্গে ইতিমধ্যে কথা বলে ‘অভিযান’ শুরু করেছেন। ড্রোন, কপ্টারের মাধ্যমে নজরদারি চলছে। তিনি র‌্যাব, ডিজিএফআই-কে ধরপাকড়ের নির্দেশ দেন বলেও দাবি তাজুলের।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement