রাশিয়ার বিমান নামিয়ে চাপে পড়ল তুরস্ক

১৭ সেকেন্ড। মাত্র ১৭ সেকেন্ড। তুরস্কের আকাশে এই ১৭ সেকেন্ডই কাটিয়েছিল রাশিয়ার সুখোই-২৪ বিমানটি। তার পরে তুরস্কের এফ-১৬-এর আক্রমণে ধ্বংস হয় সেটি। রাশিয়া অভিযোগ নয়, রাষ্ট্রপুঞ্জের নিরাপত্তা পরিষদে চিঠি লিখে এমনই জানিয়েছেন রাষ্ট্রপুঞ্জে তুরস্কের রাষ্ট্রদূত। উইকিলিক এই চিঠিটা ফাঁস করেছে।

Advertisement

রত্নাঙ্ক ভট্টাচার্য

শেষ আপডেট: ২৬ নভেম্বর ২০১৫ ১৮:২১
Share:

উত্তর সিরিয়ায় তুর্কি সেনার গোলায় ভেঙে পড়ছে রুশ যুদ্ধবিমান।

১৭ সেকেন্ড। মাত্র ১৭ সেকেন্ড। তুরস্কের আকাশে এই ১৭ সেকেন্ডই কাটিয়েছিল রাশিয়ার সুখোই-২৪ বিমানটি। তার পরে তুরস্কের এফ-১৬-এর আক্রমণে ধ্বংস হয় সেটি। রাশিয়া অভিযোগ নয়, রাষ্ট্রপুঞ্জের নিরাপত্তা পরিষদে চিঠি লিখে এমনই জানিয়েছেন রাষ্ট্রপুঞ্জে তুরস্কের রাষ্ট্রদূত। উইকিলিক এই চিঠিটা ফাঁস করেছে।

Advertisement

এই ‘মাত্র’ ১৭ সেকেন্ড বিশ্ব মঞ্চে রাশিয়াকে আরও সুবিধা করে দিল। যদিও তুরস্কের আকাশপথে নিজের বিমান ঢোকার কথাই রাশিয়া স্বীকার করেনি। কিন্তু তুরস্কের কথা যদি মেনেও নেওয়া হয় তবে মাত্র ১৭ সেকেন্ডে আকাশপথে থাকার জন্য রাশিয়ার যুদ্ধবিমানকে ধ্বংসে করে সিরিয়ার গৃহযুদ্ধে অন্যমাত্রা যোগ করল সিরিয়া। রাশিয়ার বিদেশমন্ত্রী সার্গেই লেভারভ তো অভিযোগই করেছেন, পরিকল্পনা করেই কাজটি করেছে তুরস্ক। প্রেসিডেন্ট পুতিন আগেই একে পিছন থেকে ছুরি মারা বলেছিলেন।

এ কথা সত্য যে তুরস্কের উপরে চাপ ছিল। সিরিয়ার উত্তরে লাতাকিয়া প্রদেশে তুর্কমেনদের উপরে রাশিয়ার ক্রমাগত বোমাবর্ষণে ঘরোয়া রাজনীতিতে প্রেসিডেন্ট এর্দোয়ানে উপরে চাপ বাড়ছিল। রাষ্ট্রপুঞ্জের নিরাপত্তা পরিষদের বার বার অভিযোগও করেছিল তুরস্ক। কিন্তু ফল মেলেনি। তাই চাপের মুখেই তুরস্কের এই আচরণ। কিন্তু তুরস্কের এই আচরণ তুরস্ককেই বিপদে ফেলবে। অন্যের আকাশসীমায় ঢুকে পড়ার যে অভিযোগ তুরস্ক তুলছে সেই তুরস্কই ২০১৪-এ গ্রিসের আকাশপথে ২২১৪ বার নিজেদের যুদ্ববিমান পাঠিয়েছে। ফলে রাশিয়ার দিকে আঙুল তুললে তুরস্কের দিকেও আঙুল তোলার লোকের অভাব হবে না। আবার উইকিলিকের ফাঁস করা মার্কিন সেনার গোপন বার্তায় দেখা যাচ্ছে চলতি বছরের ৬ সেপ্টেম্বর সিরিয়া আক্রমণ করতে গিয়ে ইজরায়েলের যুদ্ধবিমান বেশ কয়েক বার তুরস্কের আকাশপথে ঢুকে পড়ে। সে ক্ষেত্রে কিন্তু এত তৎপর হয়নি তুরস্ক।

Advertisement

পাশাপাশি ন্যাটোর মধ্যেও মতপার্থক্য তীব্র হবে। ন্যাটোর সেক্রেটারি জেনারেল জেন্স স্টোলেনবার্গ যদিও তুরস্কের পাশেই দাঁড়িয়েছেন। কিন্তু কানাঘুঁষো হল ইউরোপের বেশ কিছু দেশ কিন্তু ভিতরে ভিতরে ভিন্ন সুর গাইতে শুরু করেছে। বিশ্বজুড়ে ইসলামিক স্টেট (আইএস) বিরোধী জোট গড়ে তোলার চেষ্টা করছেন ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ফ্রাঁসোয়া ওলাঁদ। বৃহস্পতিবার তার প্রেসিডেন্ট পুতিনের সঙ্গে দেখা করার কথা। তুরস্কের ঘটনা যে সেই আলোচনা উঠবে তা নিয়ে সন্দেহ নেই। আইএসের উপরে এখন প্রায় এক সঙ্গে ফ্রান্স ও রাশিয়ার বিমান হামলা চালাচ্ছে। এ ক্ষেত্রে ফ্রান্স কতটা তুরস্কের পিছনে দাঁড়াবে তা বলা মুশকিল। একই অবস্থান নিতে পারে ইউরোপের অন্য কয়েকটি দেশও। সে ক্ষেত্রে ন্যাটো ভবিষ্যতে কতটা তুরস্কের পিছনে থাকবে তা নিয়ে সংশয় রয়েছে।

এর একটা বড় কারণ ইউরোপ আর তুরস্কের লক্ষ্য ভিন্ন। তুরস্ক সিরিয়ার প্রেসিডেন্ট বাসার আল-আসাদকে সরাতে যতটা আগ্রহী, আইএস বিরোধী অভিযানে ততটা নয়। কিন্তু ইউরোপের দেশগুলির প্রধান মাথাব্যথা আইএস। সেই কাজে রাশিয়ার সাহায্য পাওয়া যাচ্ছে। তুরস্কের পিছনে থেকে সেই সুযোগ ইউরোপ হাতছাড়া করবে কেন।

হামলার জবাবে এখনও পাল্টা হামলা করেনি রাশিয়া। তবে লাতাকিয়ার কাছেই যুদ্ধজাহাজ পাঠাচ্ছে রাশিয়া। কিন্তু বড় শঙ্কা যুদ্ধ নয়, অর্থনীতি। তুরস্কের আসা প্রাকৃতিক জ্বালানী গ্যাসের ৬০ শতাংশ আসে রাশিয়া থেকে। তুরস্ক থেকে রাশিয়া মোট কৃষিজাত পণ্যের আমদানির চার শতাংশ আসে। দু’টিই বন্ধ করার কথা উঠেছে। তুরস্কের বদলে ইরান, মরক্কো, ইজরায়েল, আজারবাইজান, উজবেকিস্তান থেকে কৃষিপণ্য আনিয়ে সামলে নিতে পারবে রাশিয়া। কিন্তু বেশ চাপে পড়ে যাবে তুরস্কের অর্থনীতি। ঘরে-বাইরের এই চাপ প্রেসিডেন্ট এর্দোয়ান কী ভাবে সামলান তা ভবিষ্যতই বলবে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন