Ukraine

Russia Ukraine War: ভোটদানে বিরতই থাকল ভারত, রাষ্ট্রপুঞ্জের মানবাধিকার কাউন্সিল থেকে সাসপেন্ড রাশিয়া

বৃহস্পতিবার রাষ্ট্রপুঞ্জের বিশেষ অধিবেশনে আমেরিকার নেতৃত্বে আনা রাশিয়া-বিরোধী প্রস্তাবের পক্ষে ভোট দেয় ৯৩টি দেশ। বিরুদ্ধে ২৪টি দেশ।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ০৮ এপ্রিল ২০২২ ০৬:২৯
Share:

ফাইল চিত্র।

ইউক্রেনে গণহত্যার অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে রাষ্ট্রপুঞ্জের মানবাধিকার কাউন্সিল থেকে সাসপেন্ড করা হল রাশিয়াকে। ২০১১-য় লিবিয়ার পরে এই প্রথম কোনও দেশের বিরুদ্ধে এই পদক্ষেপ করা হল। ইউক্রেন সঙ্কটের ক্ষেত্রে ভারত ভোটদানে বিরত থাকার ধারা অব্যাহত রেখেই এই প্রথম কার্যত রাশিয়ার বিরুদ্ধে গেল।

Advertisement

বৃহস্পতিবার রাষ্ট্রপুঞ্জের বিশেষ অধিবেশনে আমেরিকার নেতৃত্বে আনা রাশিয়া-বিরোধী প্রস্তাবের পক্ষে ভোট দেয় ৯৩টি দেশ। বিরুদ্ধে ২৪টি দেশ। ভোটদানে বিরত থেকেছে ৫৮টি দেশ, যার মধ্যে রয়েছে ভারতও। ৪৭ সদস্যের এই কাউন্সিল থেকে সাময়িক ভাবে রাশিয়াকে বরখাস্ত করার জন্য প্রস্তাবের পক্ষে ভোটদানকারী রাষ্ট্রগুলির দুই তৃতীয়াংশের সমর্থন প্রয়োজন ছিল। যারা ভোটদানে বিরত থেকেছে, তাদের সংখ্যা এখানে কোনও পক্ষেই গণ্য হয় না।

ভারতের ভোটদান থেকে বিরত থাকাটা এই মঞ্চে রাশিয়া-বিরোধী হয়ে উঠল বলেই মনে করা হচ্ছে। এর ফলে মস্কোর সঙ্গে ভবিষ্যতে সম্পর্কে চিড় ধরার আশঙ্কা তৈরি হল। আবার একই ভাবে ভোটদানে বিরত থাকার সিদ্ধান্ত খুশি করেনি আমেরিকাকেও। রাশিয়াকে মানবাধিকার কাউন্সিল থেকে সরাতে ভারতের ভোটও জরুরি ছিল আমেরিকার কাছে। ফলে যে ‘ভারসাম্য’ নিয়ে চলছিল ভারত, তা কিছুটা ধাক্কা খেল বলেই প্রাথমিক ভাবে মনে করছে কূটনৈতিক শিবির। রাষ্ট্রপুঞ্জে ভারতের স্থায়ী মিশনের প্রতিনিধি টি তিরুমূর্তি যদিও সেই বাঁধা গতেই বলেছেন, ‘ভারত শান্তির পক্ষে। ভারত চায় অবিলম্বে হিংসা বন্ধ হোক এবং কূটনীতি ও সংলাপের মাধ্যমে সংঘাতের সমাধান হোক।’

Advertisement

এর আগে গত দেড় মাসে বারবার রাষ্ট্রপুঞ্জের নিরাপত্তা পরিষদে রাশিয়া-বিরোধী প্রস্তাবে ভোটদানে বিরত থেকেছে ভারত। সেটা কার্যত রাশিয়ার সপক্ষে গিয়েছিল। ওয়াকিবহাল শিবিরের মতে, এ বারের পরিস্থিতি ছিল ভিন্ন। তার কারণ, এই প্রস্তাবে ভোটদান থেকে বিরত থাকলে আগের মতো ভারসাম্যের রাস্তায় চলার বার্তা যায় না। কারণ, রাষ্ট্রপুঞ্জের মানবাধিকার সংক্রান্ত ভোট গণনা হয় শুধু ভোটদানকারী রাষ্ট্রের সংখ্যার ভিত্তিতে। উপরন্তু নিরাপত্তা পরিষদে স্থায়ী সদস্যদের (এ ক্ষেত্রে রাশিয়া) যেমন ভিটো দানের ক্ষমতা থাকে, আজকের ভোটে সেই ক্ষমতাও প্রযোজ্য নয়।

মস্কোর পক্ষ থেকে কূটনৈতিক চ্যানেলে ভারতকে বলে দেওয়া হয়েছিল, ভারত যেন রাশিয়ার পক্ষে (অর্থাৎ প্রস্তাবের বিপক্ষে) ভোট দিয়ে পাশে দাঁড়ায়। এ কথাও মনে করিয়ে দেওয়া হয়েছিল, যে রাশিয়া শুধু ভারতের বিশেষ কৌশলগত মিত্ররাষ্ট্রই নয়, সস্তায় ভারতকে অশোধিত তেল সরবরাহেও প্রস্তুত। কিন্তু কার্যক্ষেত্রে আজ সরাসরি রাশিয়ার পাশে দাঁড়ায়নি ভারত। কারণ ভোটদানে বিরত থাকাটা রাশিয়ার কাজে আসেনি, তার পক্ষের ভোটের সংখ্যা কমিয়েছে মাত্র। অন্য দিকে পুরোপুরি খুশি হয়নি আমেরিকাও। কারণ তার ভোটের পাল্লাও ভারী করেনি ভারত।

বুচাতে ইউক্রেনের নিরীহ নাগরিকদের মেরে আধপোড়া অবস্থায় স্তূপাকারে রাস্তার দু’পাশে ফেলে রাখার অভিযোগ উঠেছে রাশিয়া্র বিরুদ্ধে৷ রাষ্ট্রপুঞ্জ ও লোকসভায় বুচার গণহত্যার কড়া নিন্দা করে নিরপেক্ষ স্বাধীন তদন্তের দাবি করেছে ভারতও৷ এই ঘটনার পরই রাষ্ট্রপুঞ্জের মানবাধিকার কাউন্সিল থেকে রাশিয়াকে বের করে দেওয়ার প্রস্তুতি শুরু করে আমেরিক ও তার মিত্রদেশগুলি৷ যুদ্ধপরাধের জন্য রাশিয়ার সেনাবাহিনীর বিচার চেয়েও ডাক দিয়েছে আমেরিকা।

কূটনৈতিক শিবিরের মতে, মানবাধিকার কাউন্সিল থেকে কোনও রাষ্ট্রের সাসপেন্ড হওয়ার ঘটনা খুবই বিরল। এর আগে মুয়াম্মর গদ্দাফির বাহিনী বিদ্রোহীদের উপরে হিংস্র আক্রমণ চালানোয় ২০১১ সালে লিবিয়াকে সাসপেন্ড করা হয়েছিল। আজ যে প্রস্তাবটির উপর ভোটাভুটি হল, তার খসড়ায় বলা হয়েছে, ‘ইউক্রেনে চলতি মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনা এবং প্রবল মানবিক সঙ্কটে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করা হচ্ছে।’ এত দিন মস্কো ছিল মানবাধিকার কাউন্সিলের অন্যতম সরব ও সক্রিয় সদস্য। কূটনৈতিক শিবিরের মতে, এখনও তারা কাউন্সিলকে প্রভাবিত করার চেষ্টা করবে পরোক্ষে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন