ছাত্র ‘খুনে’ কিমের দেশকে জরিমানা ৫০ কোটি ডলার

মার্কিন ছাত্র ওটো ওয়ার্মবিয়ারকে জেলের মধ্যে তিলে তিলে মেরে ফেলার জন্য উত্তর কোরিয়াকে ৫০ কোটি ডলারেরও বেশি জরিমানা আমেরিকার এক ফেডারেল কোর্ট। বিচারক জানালেন, এই মৃত্যুর জন্য কিম জং উনের প্রশাসনই দায়ী। 

Advertisement

সংবাদ সংস্থা

ওয়াশিংটন শেষ আপডেট: ২৬ ডিসেম্বর ২০১৮ ০২:২৭
Share:

বিচারক জানালেন, এই মৃত্যুর জন্য কিম জং উনের প্রশাসনই দায়ী। 

মার্কিন ছাত্র ওটো ওয়ার্মবিয়ারকে জেলের মধ্যে তিলে তিলে মেরে ফেলার জন্য উত্তর কোরিয়াকে ৫০ কোটি ডলারেরও বেশি জরিমানা আমেরিকার এক ফেডারেল কোর্ট। বিচারক জানালেন, এই মৃত্যুর জন্য কিম জং উনের প্রশাসনই দায়ী।

Advertisement

দেড় বছর আগে আমেরিকার সিনসিনাটি ইউনিভার্সিটির মেডিক্যাল সেন্টারে চিকিৎসাধীন ওটোর মৃত্যুর খবর পেয়েই মেজাজ হারিয়েছিলেন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। লিখিত বিবৃতিতে কিমের প্রশাসনকে ‘ভয়ঙ্কর নিষ্ঠুর’ তকমা দিয়েছিলেন। স্পষ্ট হুমকি দিয়েছিলেন— ‘‘এমন একটা দেশকে কী ভাবে শায়েস্তা করতে হয়, তা আমাদের ভালই জানা আছে।’’ কাল কোর্টে দাঁড়িয়ে একই কথা বলেন ওটোর মা সিন্ডি ওয়ার্মবিয়ার— ‘‘পৃথিবীতে আজও একটা অশুভ শক্তি, একটা শয়তান আছে। সেটা উত্তর কোরিয়া। ওরাই আমার ছেলেকে মেরেছে। এর বিচার চাই।’’ কাল কোর্টের রায় শুনে বরং কিছুটা শান্ত ওটোর বাবা ফ্রেড ওয়ার্মবিয়ার। বললেন, ‘‘লড়াইটা কঠিন ছিল। কিন্তু আমরা হাল ছাড়িনি। ছেলেকে যে কথা দিয়েছিলাম, এর শেষ দেখে ছাড়ব!’’

বাবা ‘কথা দেওয়ার’ কথা বলছেন বটে, কিন্তু ছেলে তখন কোমায়। কাল কলম্বিয়া ডিস্ট্রিক্ট কোর্টের বিচারকও জানান, পিয়ংইয়্যাং যখন ওটোকে আমেরিকার হাতে তুলে দেয়, তরুণ ছাত্র তখন সম্পূর্ণ অথর্ব, অন্ধ, শ্রবণশক্তিহীন। হাসপাতালে পরীক্ষা করে দেখা যায়, এক বছর ধরে ওটো কোমাতেই। মস্তিষ্কের কোষগুলো সব শুকিয়ে গিয়েছে! তার পর এক সপ্তাহও তাঁকে বাঁচিয়ে রাখা যায়নি।

Advertisement

২০১৬-র জানুয়ারিতে বন্ধুদের সঙ্গে ছুটি কাটাতে উত্তর কোরিয়ায় গিয়েছিলেন বছর বাইশের তরুণ ওটো। সেখানকার এক হোটেল থেকে সরকারি প্রচারমূলক পোস্টার চুরির দায়ে সে বছরই তাঁকে ১৫ বছরের সশ্রম কারাদণ্ড দেয় পিয়ংইয়্যাং। কিমের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রেরও অভিযোগ আনা হয় মার্কিন ছাত্রের বিরুদ্ধে। এর দেড় বছর পরে ওটোকে ‘মানবিক’ কারণে ছেড়ে দেয় কিমের দেশ। এ দিকে জানা যায়, জেলে যাওয়ার পর-পরই কোমায় চলে যান ওটো।

গোড়া থেকেই ওটোর পরিবারের দাবি, জেলে অমানবিক নির্যাতনের কারণেই কোমায় চলে যান তাঁদের ছেলে। আর উত্তর কোরিয়া জানায়, খাদ্যে বিষক্রিয়া এবং ঘুমের ওষুধ খেয়েই ওটোর ওই হাল হয়েছিল। রোগের নাম বটুলিজম। মার্কিন চিকিৎসকেরা যদিও খাদ্যে বিষক্রিয়া কিংবা ওই রোগের কোনও প্রমাণ পাননি। উত্তর কোরিয়ার জেলে ওটোর ঠিক কী চিকিৎসা হয়েছিল, তা নিয়েও ধোঁয়াশা বিস্তর।

ওয়ার্মবিয়ার পরিবার উত্তর কোরিয়ার তরফে ১০০ কোটি ডলার ক্ষতিপূরণ চেয়ে মামলা করেছিল। কোর্ট বলল, সামগ্রিক জরিমানা হিসেবে ৪৫ কোটি ডলার দিতে হবে পিয়ংইয়্যাংকে। আর ওয়ার্মবিয়ার পরিবারকে আলাদা ভাবে আর্থিক এবং মানসিক ক্ষতিপূরণ হিসেবে দিতে হবে আরও ৫১ কোটি ডলার। এতে কিমের কাছে বেশ ক়ড়া বার্তা গেল বলেই মনে করছেন মার্কিন কূটনীতিকদের একটা বড় অংশ। গত জুনে সিঙ্গাপুরে কিম-ট্রাম্পের ‘ঐতিহাসিক’ বৈঠকে পরমাণু নিরস্ত্রীকরণে রাজি হয়েছিল উত্তর কোরিয়া। কিন্তু এখনও পিয়ংইয়্যাংয়ের তরফে উল্লেখযোগ্য কোনও পদক্ষেপ করা হয়নি বলে অভিযোগ ট্রাম্প প্রশাসনের একাংশের।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন