আমার দেশ ছেড়ে যাও, কানসাসে খুন ভারতীয়

প্রতি সপ্তাহের মতো বন্ধুর সঙ্গে পছন্দের বারে সময় কাটাতে গিয়েছিলেন বছর বত্রিশের দক্ষিণ ভারতীয় যুবকটি। তবে শ্রীনিবাস কুচিভোটলা আর তাঁর বন্ধু তথা সহকর্মী অলোক মাদাসানিকে পছন্দ হয়নি অ্যাডাম পিউরিটনের।

Advertisement

কানসাস সিটি

সংবাদ সংস্থা  শেষ আপডেট: ২৫ ফেব্রুয়ারি ২০১৭ ০৩:০২
Share:

শ্রীনিবাস কুচিভোটলা

প্রতি সপ্তাহের মতো বন্ধুর সঙ্গে পছন্দের বারে সময় কাটাতে গিয়েছিলেন বছর বত্রিশের দক্ষিণ ভারতীয় যুবকটি। তবে শ্রীনিবাস কুচিভোটলা আর তাঁর বন্ধু তথা সহকর্মী অলোক মাদাসানিকে পছন্দ হয়নি অ্যাডাম পিউরিটনের। মার্কিন নৌসেনার প্রাক্তন এই কর্মী ওই দুই ভারতীয়কে পশ্চিম এশিয়ার মুসলিম বলে সন্দেহ করেছিল। শ্রীনিবাসরা কেন তার দেশে আছেন, সে নিয়ে প্রথমে বচসা শুরু করে অ্যাডামই। কিছু ক্ষণের জন্য বার থেকে বেরিয়ে গিয়ে বন্দুক নিয়ে ফিরে আসে সে। খানিকটা দেশের বর্তমান প্রেসিডেন্টের সুরেই বছর একান্নর অ্যাডাম চিৎকার করে বলে ওঠে, ‘‘গেট আউট অব মাই কান্ট্রি।’’ তার পরই কয়েকটা গুলি, ওই দুই ভারতীয় যুবককে লক্ষ করেই। বুধবার আমেরিকার কানসাসের ওলেথের ঘটনা।

Advertisement

এ দিন রাতে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার পথেই মারা যান শ্রীনিবাস। অল্পের জন্য বেঁচে গিয়েছেন অলোক। বুলেটের আঘাত নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি আরও এক। বছর চব্বিশের ওই যুবক ইয়ান গ্রিলট অবশ্য ‘খাঁটি’ আমেরিকান। দুই ভারতীয়কে বাঁচাতে যান তিনি। চিকিৎসকেরা জানিয়েছেন, আপাতত বিপন্মুক্ত ইয়ান। প্রাথমিক চিকিৎসার পরে ছাড়া পান অলোকও।

গুলি চালানোর পর বার ছেড়ে পালিয়েছিল অ্যাডাম। পাঁচ ঘণ্টা পরে, মিসৌরির একটি বার থেকে তাকে ধরে পুলিশ। বারটেন্ডারকে ফলাও করে বলেছিল কী ভাবে দু’জনকে গুলি করে এসেছে সে। ওই বারটেন্ডারই পুলিশে খবর দেন।

Advertisement

আরও পড়ুন:
৩৪০ কোটির লগ্নি খাদ্য প্রক্রিয়াকরণে

ট্রাম্প জমানায় বর্ণ বিদ্বেষের মুখে পড়ে কোনও ভারতীয়ের মৃত্যুর ঘটনা এই প্রথম। অবৈধ অভিবাসী, বিশেষত মুসলিমদের বিরুদ্ধে ট্রাম্পের বিষোদ্‌গারের প্রভাব ভারতীয়দের উপর এ ভাবে পড়ায় ক্ষোভে ফুটছে সোশ্যাল মিডিয়া। বিদেশমন্ত্রী সুষমা স্বরাজ টুইট করে জানিয়েছেন, শ্রীনিবাসের দেহ ভারতে আনতে যাতে তাঁর পরিবারের কোনও অসুবিধে না হয়, তার নির্দেশ দিয়েছেন তিনি। বিদেশ মন্ত্রকের মুখপাত্র বিকাশ স্বরূপ জানান, খবর পেয়েই হিউস্টন থেকে কানসাস রওনা দিয়েছেন ভারতীয় কনসাল আর ডি জোশী। ডালাস থেকে পৌঁছেছেন ভাইস কনসাল হরপাল সিংহও। শ্রীনিবাসের পরিবার ও এখানকার গোটা প্রবাসী ভারতীয় সম্প্রদায়ের সঙ্গে কথা বলবেন তাঁরা।

স্থানীয় পুলিশের সঙ্গে শ্রীনিবাসের মৃত্যুর তদন্তে নেমেছে এফবিআই-ও। কিন্তু বর্ণ বিদ্বেষের বিষয়টি নিয়ে মুখে কুলুপ এঁটেছে পুলিশ। ঘটনার নিন্দা করেছে নয়াদিল্লির মার্কিন দূতাবাস। চার্জ দাফেয়ার্স মেরিকে কার্লসনের কথায়, ‘‘আমেরিকা সকলের। ওখানে যাঁরা পড়তে যান, ঘুরতে যান বা কাজের জন্য যান, আমেরিকা সকলকে আপন করে নেয়।’’

একটি জিপিএস সংস্থার শ্রীনিবাস কর্মী বহু বছর আমেরিকায় রয়েছেন। প্রথমে হায়দরাবাদে, তার পর টেক্সাস বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করেছিলেন। স্ত্রী সুনয়নাও কানসাসে কর্মরত। কম কথার, নির্বিবাদী ওই যুবককে ওলেথের ওই বারের বারটেন্ডারও এক ডাকে চিনতেন। তাঁরাই জানান, প্রতি সপ্তাহেই ওই বারে আসতেন শ্রীনিবাস ও অলোক। দু’-একটা সিগারেট, কয়েক পেগ হুইস্কি। ব্যস। বিল মিটিয়ে, গাড়ি নিয়ে চলে যেতেন।

ঘটনার পর থেকেই ভয়ে কাঁটা অলোকের পরিবার। তাঁর বাবার প্রশ্ন, ‘‘এর পরও কি আমাদের সন্তানদের আমেরিকা যাওয়ার খুব প্রয়োজন রয়েছে?’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন