পাকিস্তানকে অনুদানে শর্ত আমেরিকার

কোন দেশকে কোন বছর কতটা অর্থ সাহায্য করা হবে, তা ঠিক করতে ‘হাউস অব অ্যাপ্রোপ্রিয়েশনস কমিটি’ রয়েছে মার্কিন কংগ্রেসে। তারাই ২০১৮ সালের ‘ফরেন অপারেশনস অ্যাপ্রোপ্রিয়েশনস’ বিল পাশের সময়ে পাকিস্তানের উপরে নয়া শর্ত চাপানোর পক্ষে ভোট দিয়েছে।

Advertisement

সংবাদ সংস্থা

ওয়াশিংটন শেষ আপডেট: ২১ জুলাই ২০১৭ ০৩:৩৮
Share:

প্রতীকী ছবি।

ইঙ্গিত মিলেছিল কালই। মার্কিন কংগ্রেসে পেশ করা এক রিপোর্টে পাকিস্তানকে যথেষ্ট কোণঠাসা করেছিল বিদেশ দফতর। রিপোর্টে বলা হয়েছিল, পাকিস্তান হল এশিয়ার এমন এক দেশ যেখানে জঙ্গিরা লালিত-পালিত হয়। ওই রিপোর্ট পেশের চব্বিশ ঘণ্টার মধ্যেই পাকিস্তানকে অর্থ সাহায্য দেওয়ার বিষয়ে আরও কঠোর শর্ত চাপানোর পক্ষে ভোট দিল মার্কিন কংগ্রেসের একটি গুরুত্বপূর্ণ প্যানেল।

Advertisement

গত কাল মার্কিন কংগ্রেসে পেশ করা রিপোর্টে ওয়াশিংটন জানিয়েছে, লস্কর ই তইবা, জইশ ই মহম্মদের মতো সংগঠনের বিরুদ্ধে তেমন কোনও পদক্ষেপ করেনি পাকিস্তান। তারা সে দেশে নির্বিঘ্নে জঙ্গি প্রশিক্ষণ শিবির চালাচ্ছে। অর্থ সংগ্রহও করছে। আফগান সরকার এবং তালিবানের মধ্যে আলোচনা সমর্থন করেছিল পাকিস্তান। কিন্তু আফগান তালিবান এখনও পাকিস্তানে আশ্রয় পাচ্ছে। সেখান থেকেই তারা আফগানিস্তানে মার্কিন ও আফগান বাহিনীকে নিশানা করছে। এই রিপোর্ট নিয়ে এখনও সরকারি ভাবে মুখ খোলেনি ইসলামাবাদ। কিন্তু বিষয়টি নিয়ে কাল রাতেই প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে নয়াদিল্লি। মার্কিন বিদেশ দফতরের পেশ করা রিপোর্ট দেখে স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলেছে সাউথ ব্লক। বিদেশ মন্ত্রকের মুখপাত্র গোপাল ওয়াগলে বলেছেন, ‘‘ওই রিপোর্ট কার্যত ভারতের দীর্ঘদিনের দাবিতেই সিলমোহর লাগিয়েছে। পাকিস্তান কী ভাবে সীমান্ত সন্ত্রাসে মদত দিয়ে আসছে, তা এত দিনে বুঝতে পেরেছে মার্কিন প্রশাসন।’’

কোন দেশকে কোন বছর কতটা অর্থ সাহায্য করা হবে, তা ঠিক করতে ‘হাউস অব অ্যাপ্রোপ্রিয়েশনস কমিটি’ রয়েছে মার্কিন কংগ্রেসে। তারাই ২০১৮ সালের ‘ফরেন অপারেশনস অ্যাপ্রোপ্রিয়েশনস’ বিল পাশের সময়ে পাকিস্তানের উপরে নয়া শর্ত চাপানোর পক্ষে ভোট দিয়েছে। ধ্বনি ভোটে সেই প্রস্তাব পাশও হয়েছে কালই। বিদেশসচিব রেক্স টিলারসনের সম্মতি মিললে তবেই মার্কিন অর্থ সাহায্য পেতে আরও কড়া শর্ত চাপানো হবে ইসলামাবাদের উপরে।

Advertisement

আরও পড়ুন: শরিফ পরিবারকে হুঁশিয়ারি কোর্টের

বিদেশসচিবকে সে ক্ষেত্রে নিশ্চিত করতে হবে যে, সন্ত্রাস-দমন অভিযানে ওয়াশিংটনকে যথাযথ সহযোগিতা করছে ইসলামাবাদ। হক্কানি নেটওয়ার্ক থেকে শুরু করে কোয়েট্টার সুরা তালিবান, লস্কর-ই-তইবা, জইশ-ই-মহম্মদ, আল কায়দার মতো সন্ত্রাসবাদী সংগঠনগুলির বিরুদ্ধে পাক সরকার কতটা কড়া ব্যবস্থা নিচ্ছে, দেখা হবে তা-ও। পাকিস্তানকে দেওয়া অর্থ সাহায্য যাতে কোনও ভাবে জঙ্গি কার্যকলাপে না ব্যবহার করা হয়, সেটাও দেখবেন টিলারসন। তিনি মনে করলে তবেই সামরিক ও প্রতিরক্ষা খাতে মোটা অর্থ পাবে পাকিস্তান। সেই অর্থ সাহায্য থেকেই এফ-১৬-এর মতো যুদ্ধবিমান আমেরিকার কাছ থেকে কিনতে পারবে তারা।

সন্ত্রাসে মদত দেওয়া নিয়ে পাক সরকারকে এক হাত নিয়েছেন রেমন্ড ডেভিস নামে এক সিআইএ কন্ট্র্যাক্টর। এক সময় পাকিস্তানে ছিলেন তিনি। ২০১১ দুই পাকিস্তানি নাগরিককে মারার অভিযোগে লাহৌরে গ্রেফতার করা হয়েছিল তাঁকে। পরে মুক্তি পান। ৪২ বছরের রেমন্ড সম্প্রতি একটি বই লিখেছেন। ‘দ্য কন্ট্র্যাক্টর’ নামে ওই বইটিতে মার্কিন অর্থ সাহায্য কী ভাবে জঙ্গি কার্যকলাপে ব্যবহার করা হয়, তা বিস্তারিত লিখেছেন রেমন্ড। আমেরিকা থেকে পাওয়া অনুদান পড়শি দেশে জঙ্গি হামলার কাজেও পাকিস্তান ব্যবহার করে বলে অভিযোগ করেছেন তিনি। সেই সঙ্গেই তাঁর দাবি, পাকিস্তান মুখে সংসদীয় গণতন্ত্রের কথা বললেও সেনাই সেখানে শেষ কথা। প্রধানমন্ত্রী আর প্রেসিডেন্টকে সামনে রেখে গোটা দেশ কার্যত চালনা করে পাক সেনাই। জঙ্গিদের মদত দেওয়ার ক্ষেত্রেও পাক সেনার যথেষ্ট ভূমিকা রয়েছে বলে অভিযোগ রেমন্ডের।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন