(বাঁ দিকে) শি জিনপিং, (মাঝে) আয়াতোল্লা আলি খামেনেই এবং ডোনাল্ড ট্রাম্প (ডান দিকে)। —ফাইল চিত্র।
আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের জন্য গুরুত্বপূর্ণ জলপথ হরমুজ় প্রণালী বন্ধ হওয়া আটকাতে চিন কথা বলুক ইরানের সঙ্গে। বেজিংকে খোঁচা দিয়ে এমনটাই বলল আমেরিকা। রবিবার আমেরিকার হামলার পরেই খবর ছড়ায়, হরমুজ় প্রণালী আটকে দিতে চাইছে ইরান। তেহরানের পার্লামেন্টও তাতে সায় দিয়েছে বলে জানায় ইরানের সরকার নিয়ন্ত্রিত সংবাদমাধ্যম ‘প্রেস টিভি’। যদিও চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া এখনও বাকি।
আমেরিকার বিদেশসচিব মার্কো রুবিওর বক্তব্য, হরমুজ় প্রণালী নিয়ে ইরানের সঙ্গে কথা বলা উচিত চিনের। বস্তুত, রবিবার ভোরে ইরানের পরমাণুকেন্দ্রে আমেরিকার হামলার নিন্দা জানিয়ে বিবৃতি দিয়েছে চিন। ওই হামলায় আমেরিকা আন্তর্জাতিক আইন ভেঙেছে বলে দাবি বেজিংয়ের। তাদের অভিযোগ, রাষ্ট্রপুঞ্জের সনদের তোয়াক্কা না করেই ইরানে হামলা চালিয়েছে আমেরিকার বাহিনী। এই পরিস্থিতিতে আমেরিকা মনে করছে, হরমুজ় প্রণালী নিয়েও ইরানের সঙ্গে কথা বলা দরকার চিনের।
সংবাদমাধ্যম ‘ফক্স নিউজ়’কে রুবিও বলেন, “আমি চাই চিন সরকার যেন এ বিষয়ে তাদের (ইরানের) সঙ্গে যোগাযোগ করে। কারণ চিন তাদের তেলের জন্য হরমুজ় প্রণালীর উপর ভীষণ ভাবে নির্ভরশীল।” ইরান যদি হরমুজ় প্রণালী সত্যিই বন্ধ করে দেয়, তা হলে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের অর্থনীতি ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে আশঙ্কা করছেন রুবিও।
ইরানের বিরুদ্ধে আমেরিকার হামলার প্রকাশ্যে নিন্দা জানানো দেশগুলির মধ্যে অন্যতম চিন। সরাসরি কোনও দেশের নাম না করলেও হামলার নিন্দা জানানো দেশগুলিকে খোঁচা দিয়েছেন রুবিও। তাঁর বক্তব্য, যাঁরা হামলার নিন্দা জানাচ্ছেন, তাঁরাও মনে মনে বুঝতে পারছেন ২৪ ঘণ্টা আগে যা পরিস্থিতি ছিল, তা এখন অনেক শান্ত হয়েছে।
আমেরিকার বিদেশসচিবের মতে, ইরান হরমুজ় প্রণালী বন্ধ করলে সেটি তেহরানের জন্য আরও একটি বড় ভুল হবে। রুবিও বলেন, “যদি ওরা (ইরান) এমন করে, তা হলে এটা ওদের জন্য অর্থনৈতিক আত্মহত্যার সমান। আমরা এই পরিস্থিতি মোকাবিলা করার জন্য বিকল্প তৈরি করে রেখেছি। অন্য দেশগুলিকেও এ দিকে নজর দেওয়া উচিত। (হরমুজ় প্রণালী বন্ধ হলে) আমাদের চেয়ে অন্য দেশগুলির অর্থনীতিতে অনেক বেশি ক্ষতি হবে।”
রুবিওর এই মন্তব্যের পরে ওয়াশিংটনে চিনা দূতাবাসের সঙ্গে যোগাযোগ করে সংবাদ সংস্থা রয়টার্স। তবে সেখান থেকে তাৎক্ষণিক কোনও প্রতিক্রিয়া মেলেনি। বস্তুত, তেল এবং প্রাকৃতিক গ্যাসের আন্তর্জাতিক বাজারের ক্ষেত্রে হরমুজ় প্রণালী অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। ওমান এবং ইরানের মাঝে সরু একটি জলপথ। আন্তর্জাতিক বাজারে যত তেল আমদানি-রফতানি করা হয়, তার পাঁচ ভাগের এক ভাগই চলে এই জলপথ দিয়ে। তেল রফতানিকারী দেশগুলির জোট ‘ওপেক’-এর সদস্য সৌদি আরব, ইরান, সংযুক্ত আরব আমিরশাহি, কুয়েত, কাতার, ইরাকের মতো দেশগুলি এখান দিয়ে তেল রফতানি করে। এই রফতানি হওয়া তেলের বেশির ভাগই যায় এশিয়ায়। আবার বিশ্বের তরল প্রাকৃতিক গ্যাস (এলএনজি) আমদানি-রফতানিরও প্রায় ২০% হয় হরমুজ় দিয়ে। যার মধ্যে কাতার ও সংযুক্ত আরব আমিরশাহির সমস্ত গ্যাসই যায় এই পথে।