ইজ়রায়েল এবং ইরানের যুদ্ধ পরিস্থিতি। —ফাইল চিত্র।
পশ্চিম এশিয়ায় গত কয়েক দিন ধরে যে সংঘর্ষ চলছে, তার মূলে রয়েছে ইরানের পরমাণু গবেষণা! ইরানের পরমাণুকেন্দ্র লক্ষ্য করে গত শুক্রবার হামলা চালায় ইজ়রায়েলি সেনা। তার পর থেকে দু’দেশই একে অন্যের উপর আক্রমণ চালিয়ে যাচ্ছে। কিন্তু ইরানের পরমাণুকেন্দ্র লক্ষ্য করে কেন হঠাৎ হামলা চালাল ইজ়রায়েল? তারা কি কিছু টের পেয়েছিল?
ইজ়রায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহুর বক্তব্য, ইরানের জন্য যাতে ইজ়রায়েলের কোনও ক্ষতি না হয়, সে জন্যই এই অভিযান। ইজ়রায়েলের অস্তিত্ব রক্ষা করতেই এই সামরিক অভিযান বলে দাবি তাঁর। নেতানিয়াহুর আশঙ্কা, ইরানকে থামাতে না পারলে তারা খুব কম সময়ের মধ্যেই পরমাণু অস্ত্র বানিয়ে ফেলত। এক বছর বা কয়েক মাসের মধ্যেই তেহরান পরমাণু শক্তিধর হয়ে উঠত বলে আশঙ্কা তাঁর।
সংবাদমাধ্যম ‘বিবিসি’-র এক প্রতিবেদন অনুসারে, ইজ়রায়েলি বাহিনীর দাবি, ইরান পরমাণু বোমা বহনের জন্য বিশেষ অস্ত্র তৈরির চেষ্টায় আরও গতি এনেছে। গোয়েন্দা সূত্রে এমন তথ্য এসেছে বলে দাবি ইজ়রায়েলি সেনার। যদিও অস্ত্র নিয়ন্ত্রণ সংক্রান্ত আমেরিকার একটি সংগঠন ‘আর্ম্স কন্ট্রোল অ্যাসোসিয়েশন’-এর ডিরেক্টর কেলসি ডেভেনপোর্টের মতে, ইরানের বিরুদ্ধে অভিযোগের কোনও স্পষ্ট প্রমাণ দেখাতে পারেননি ইজ়রায়েলের প্রধানমন্ত্রী। তাঁর বক্তব্য, ইরান কয়েক মাসের মধ্যে একটি পরমাণু অস্ত্র তৈরি করে ফেলতে পারে, এমন দাবি নতুন নয়। তবে এর সপক্ষে পর্যাপ্ত কোনও প্রমাণ নেই।
বর্তমানে মোট ন’টি দেশকে পরমাণু শক্তিধর বলে ধরে নেওয়া হয়। এর মধ্যে রয়েছে রাশিয়া, আমেরিকা, চিন, ফ্রান্স, ব্রিটেন, ভারত, পাকিস্তান, ইজ়রায়েল এবং উত্তর কোরিয়া। যদিও ইজ়রায়েল নিজেদের পারমাণবিক শক্তিধর রাষ্ট্র বলে সরকারি ভাবে ঘোষণা করেনি। বিভিন্ন সূত্রে দাবি করা হয়, তাদের কাছে ৯০টি পরমাণু অস্ত্র রয়েছে। তবে এই দাবি স্বীকার বা খণ্ডন কিছুই করেনি ইজ়রায়েল। উত্তর কোরিয়াও নিজেদের পরমাণু শক্তিধর বলে দাবি করে। আন্তর্জাতিক নিষেধাজ্ঞার পরেও তারা বেশ কিছু পারমাণবিক পরীক্ষানিরীক্ষা চালিয়েছে। তবে উত্তর কোরিয়াকে পরমাণু শক্তিধর বলে স্বীকৃতি দিতে চায় না অনেক দেশই।
পারমাণবিক অস্ত্রের ক্ষেত্রে অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ উপাদান হল ইউরেনিয়াম। আন্তর্জাতিক বিধিনিষেধ ভেঙে ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণ কর্মসূচি চালানোর অভিযোগ উঠেছে ইরানের বিরুদ্ধে। তবে ইরান যে এখনও কোনও পরমাণু অস্ত্র তৈরি করে উঠতে পারেনি, তা কার্যত স্বীকার করে নিয়েছেন আমেরিকার প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পও। একই কথা বলা হয়েছে আন্তর্জাতিক পরমাণু শক্তি সংস্থা (আইএইএ)-র রিপোর্টেও। রবিবার তেল আভিভের দক্ষিণে ইরানি ক্ষেপণাস্ত্র হানায় ক্ষতিগ্রস্ত এলাকা পরিদর্শনে যান নেতানিয়াহু। সেখানেও তাঁর কথায় স্পষ্ট, ইরান এখনও পারমাণবিক অস্ত্র তৈরি করে উঠতে পারেনি বলেই মনে করছেন।
সাধারণ ভাবে পরমাণু বোমা তৈরি করতে গেলে ৯০ শতাংশ পরিশুদ্ধ ইউরেনিয়াম প্রয়োজন। তবে ৪২ কিলোগ্রাম ৬০ শতাংশ সমৃদ্ধ ইউরেনিয়াম ব্যবহার করে কম ক্ষমতাসম্পন্ন পরমাণু বোমা বানানো সম্ভব। বিভিন্ন সূত্রে দাবি করা হচ্ছে, চলতি বছরের ৮ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত ইরান প্রায় ২৭৫ কিলোগ্রাম ৬০ শতাংশ পরিশুদ্ধ ইউরেনিয়াম তৈরির কাজে সফল হয়েছে। আর এই নিয়েই উদ্বেগ তৈরি হয়েছে। যদিও ইরানের দাবি বিদ্যুৎ উৎপাদন এবং অন্যান্য শান্তিপূর্ণ কর্মকাণ্ডের জন্যই তাদের পারমাণবিক কর্মসূচি চলছে।