কতটা ‘ভাল’ আছে এখন যুদ্ধের সেই মুখ

বাস্তবেও হয়েছিল সেটাই। গত বছর অগস্ট মাসে গোটা বিশ্বের সংবাদমাধ্যমে এই ছবিটি এমনই তীব্র প্রতিক্রিয়া জাগিয়েছিল। যুদ্ধে বিধ্বস্ত শৈশবের মুখ হয়ে উঠেছিল আলেপ্পোর ওই চার বছরের শিশুটি।

Advertisement

সংবাদ সংস্থা

আলেপ্পো শেষ আপডেট: ১২ জুন ২০১৭ ১৪:০০
Share:

যুদ্ধ-বিধ্বস্ত দাকনিশ। এক বছর আগে।

সুন্দর করে ছাঁটা চুল। সাফসুতরো উজ্বল ঝলমলে পোশাক। বাবার কোলে নিশ্চিন্তে বসে আছে ছেলেটি। ছবিটা স্বস্তির। দেখলেই মনে হয় ওমরান দাকনিশ এখন ভাল আছে।

Advertisement

ছবিটা হালের। কিন্তু বছর খানেক আগেও এই ছোট্ট ছেলেটির অন্য এক ছবি চমকে দিয়েছিল গোটা বিশ্বকে। রক্ত-ধুলোয় মাখামাখি মুখ-হাত-পা। একমাথা ঝাঁকড়া চুল এলোমেলো, ধূসরিত। বসে আছে একটি অ্যাম্বুল্যান্সের পিছনে। গদিওয়ালা সিটের উজ্জ্বল কমলা রংয়ের সঙ্গে আসমান-জমিন বৈপরীত্য। কাঁদছে না। ঠোঁট দু’টি চেপে রেখেছে একে অপরকে। ছেলেটির বাঁ দিকের চোখ ফুলে বুজে রয়েছে প্রায়। ডান চোখ খোলা। দৃষ্টিতে এমন এক শূন্যতা, যা যে কোনও যুদ্ধবাজ মানুষকেও কয়েক মুহূর্ত থমকে দিতে পারে, শিউরে উঠতে পারেন যে কোনও বাবা-মা।

বাস্তবেও হয়েছিল সেটাই। গত বছর অগস্ট মাসে গোটা বিশ্বের সংবাদমাধ্যমে এই ছবিটি এমনই তীব্র প্রতিক্রিয়া জাগিয়েছিল। যুদ্ধে বিধ্বস্ত শৈশবের মুখ হয়ে উঠেছিল আলেপ্পোর ওই চার বছরের শিশুটি।

Advertisement

সেই দাকনিশেরই অন্য চেহারার ভিডিও ও ছবি এখন ভাইরাল হয়ে উঠেছে নেট-সমাজে, সংবাদমাধ্যমে। দাকনিশকে কোলে নিয়ে টিভিতে সাক্ষাৎকার দিচ্ছেন তার বাবা মহম্মদ। গত বছর দাকনিশের ১০ বছর বয়সি দাদা মারা গিয়েছিল। বিপর্যস্ত হয়ে পড়ে গোটা পরিবার। কিন্তু প্রেসিডেন্ট বাসার আল আসাদের মিত্র রুশ বাহিনীর আকাশ হানায় তা হয়েছিল, এমন কথার ধারেকাছে ঘেঁষতে রাজি নন মহম্মদ। কিছু সংবাদমাধ্যম বলছে মার্কিন নেতৃত্বাধীন বাহিনীর হানাতেও বিধ্বস্ত হয়ে থাকতে পারে দাকনিশের পরিবার। মহম্মদ বরং সরব ছেলের চিকিৎসার ব্যবস্থা করার আগেই যারা তার ভিডিও ও ছবি তুলতে ব্যস্ত হয়ে পড়েছিল, সেই পশ্চিমি সংবাদমাধ্যমের সমালোচনায়। এবং আসাদ-বিরোধী বিদ্রোহীদের। তাঁর বক্তব্য, ‘‘আমাদের ইচ্ছার বিরুদ্ধেই ওরা ছবি তুলেছিল। আমরা দাকনিশের জন্য কিছুই চাইনি। সংবাদমাধ্যমের প্রচার, খ্যাতি— কিছুই নয়।’’ মহম্মদ জানাচ্ছেন, ওই ছবি প্রকাশ হওয়ার পরে হুমকিও দেওয়া হয়েছে তাঁদের। খ্যাতির বিড়ম্বনা ও খুনের হুমকি থেকে বাঁচাতে কী ভাবে এই ক’মাস আগলে রেখেছেন ছেলেকে, সেই বিবরণও কম মর্মস্পর্শী নয়। ‘‘কখনও ছেলের মাথা কামিয়ে দিয়েছি। পাল্টে দিয়েছি নাম। একটি বার পা ফেলতে দিইনি রাস্তায়। ঈশ্বরকে ধন্যবাদ। এখন পরিস্থিতির উন্নতি হচ্ছে। সিরিয়ার সেনা এগোচ্ছে এবং আরও এলাকা বিদ্রোহীমুক্ত করছে।’’

এখন বাবার কোলে।

চলতি সপ্তাহেই প্রেসিডেন্ট আসাদ বলেছেন, ‘‘সবচেয়ে খারাপ সময়টা আমরা পিছনে ফেলে এসেছি বলেই মনে করি।’’ প্রেসিডেন্টের সঙ্গে এক সুরে দাকনিশের বাবারও দাবি বিদ্রোহী-মুক্ত আলেপ্পোয় তাঁরা এখন ভালই আছেন।

কী বলছে দাকনিশ?

পাঁচ বছরেই অনেক কিছু দেখে ফেলা শিশুটি দেশের সরকারি সংবাদমাধ্যম সামা-কে বলেছে, ‘‘বিদ্রোহীদের কম্যান্ডার মহম্মদ এল ফতেহ্ এসে বলেছিল, তুরস্কের প্রধানমন্ত্রীর অনুরোধে সে আমাদের নিতে এসেছে। আমরা যদি সিরিয়া সরকারের নিন্দা করি, তবে আমাদের নিরাপদে তুরস্কে পৌঁছে দেবে। সেখানে বাড়ি, কাজ ও নাগরিকত্ব মিলবে।’’

‘‘গেলে না কেন?’’

দাকনিশের জবাব, ‘‘কারণ, আমি আমার দেশকে ভালবাসি। ওদের কথা আমার বিশ্বাস হয়নি। ওরা অদ্ভুত।’’

গোটা পর্বে গুরুতর দু’টি প্রশ্ন উঠে এসেছে বিভিন্ন মহলে।

প্রশ্ন এক, সত্যিই কী ভাল আছে দাকনিশরা? নাকি আসাদ সরকার চাপ দিয়ে দাকনিশ ও তার বাবাকে দিয়ে তোতাপাখির বুলি বলাচ্ছে? এর উত্তর মেলা শক্ত।

প্রশ্ন দুই, সিরিয়ার যুদ্ধবিধ্বস্ত শিশুরা কি এখন ‘প্রোপাগান্ডা’র হাতিয়ার? অবশ্যই, বলছে আসাদপন্থী ও তাঁর বিরোধী বিদ্রোহীরা। এবং দুই শিবিরে ভাগ হয়ে থাকা সংবাদমাধ্যমও। এই একটি বিষয়ে একমত সকলেই। প্রত্যেকেই আঙুল তুলছে বিপক্ষ শিবিরের দিকে।

শিবিরভুক্ত নন যাঁরা? তুরস্কের তটে উবু হয়ে পড়ে থাকা তিন বছরের আলান কুর্দির দেহটি নিরন্তর তাঁদের তাড়া করে ফিরেছে ২০১৬-র মার্চ থেকে। বাবার কোলে ঝকঝকে দাকনেশকে দেখে স্বস্তি খুঁজছেন তাঁরা।

ছবি: টুইটার।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন