পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ় শরিফ। —ফাইল চিত্র।
চিনে সাংহাই কোঅপারেশন অর্গানাইজ়েশন (এসসিও)-এর সম্মেলনে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর পাশাপাশি গিয়েছিলেন পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ় শরিফও। সেখান থেকে এসসিও-র সদস্য দেশগুলি যে যৌথ বিবৃতি দেয়, তাতে পহেলগাঁওয়ের ঘটনার উল্লেখ ছিল। এই ঘটনা নিয়ে ভারত প্রথম দিন থেকে পাকিস্তানকে দায়ী করে আসছে। সে ক্ষেত্রে যৌথ বিবৃতিটিকে কী চোখে দেখছে ইসলামাবাদ? তারা কি বক্তব্যকে মেনে নিচ্ছে? শুক্রবার এই সংক্রান্ত প্রশ্নের জবাব দিয়েছেন পাকিস্তানের বিদেশ মন্ত্রকের মুখপাত্র। দাবি, পাকিস্তানের সম্মতিতেই ওই যৌথ বিবৃতি প্রকাশ করা হয়েছে।
গত ২২ এপ্রিল পহেলগাঁওয়ে জঙ্গি হামলায় মৃত্যু হয়েছিল ২৬ জনের। ভারত প্রথম থেকেই অভিযোগ তোলে, পাকিস্তানের মদতে এই হামলা হয়েছে। এমনকি, হামলাকারীরাও পাকিস্তানি, তার প্রমাণ মিলেছে। এই পরিস্থিতিতে এসসিও সম্মেলনে গিয়ে পাক প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ়ের সামনেই পহেলগাঁও প্রসঙ্গ তুলেছিলেন মোদী। হামলার নিন্দা করে মদতদাতাদের বিরুদ্ধে কঠোর বার্তা দিয়েছিলেন। যদিও পাকিস্তানের নাম উল্লেখ করেননি তিনি। এর পর পহেলগাঁও নিয়ে এসসিও-র যৌথ বিবৃতি প্রকাশ করা হয়। ভারত, পাকিস্তান-সহ মোট ১০টি রাষ্ট্র এসসিও-র সদস্য। তবে চিনের সম্মেলনে যোগ দিয়েছিলেন অন্তত ২০টি দেশের প্রতিনিধি। যৌথ বিবৃতিতে বলা হয়, ‘‘সদস্য রাষ্ট্রগুলি ২০২৫ সালের ২২ এপ্রিল পহেলগাঁওয়ে জঙ্গি হামলার তীব্র নিন্দা করছে। নিহত এবং আহতদের পরিবারের প্রতি গভীর সমবেদনা জানানো হচ্ছে। এই হামলার অপরাধী, আয়োজক এবং মদতদাতাদের অবশ্যই বিচারের আওতায় আনতে হবে।’’ এই বিবৃতিতেও পাকিস্তানের নাম উল্লেখ করা হয়নি। পাক প্রধানমন্ত্রীর স্বাক্ষর ছিল এই বিবৃতিতে।
সম্মেলনে সরাসরি কিছু বলা না-হলেও মদতদাতা হিসাবে এর আগে একাধিক বার ভারত সরাসরি পাকিস্তানকে দুষেছে। সেই সূত্র টেনেই শুক্রবার পাকিস্তানের সংবাদমাধ্যম এ বিষয়ে সরকারকে প্রশ্ন করে। পাক বিদেশ মন্ত্রকের বক্তব্য, ‘‘এসসিও-র যৌথ বিবৃতিতে পহেলগাঁওয়ের ঘটনা নিয়ে যে ভাষা প্রয়োগ করা হয়েছে, তাতে আমাদের সম্মতি রয়েছে। এ বিষয়ে আমরা এত দিন ধরে যে অবস্থান নিয়ে এসেছি, বিবৃতির বক্তব্যের সঙ্গে তা সঙ্গতিপূর্ণ।’’ একই সঙ্গে ভারতকেও বার্তা দিয়েছে ইসলামাবাদ। পাক বিদেশ মন্ত্রকের মুখপাত্র বলেছেন, ‘‘ভারতের উচিত নিজেদের অবস্থান পুনর্বিবেচনা করে শান্তির জন্য ভিন্ন পথ গ্রহণ করা।’’
পহেলগাঁওয়ের ঘটনায় নিজেদের যোগ প্রথম থেকেই অস্বীকার করছে পাকিস্তান। তারা এ বিষয়ে নিরপেক্ষ আন্তর্জাতিক তদন্তের দাবি জানিয়েছে। ভারত এই ঘটনার প্রতিবাদে পাকিস্তানের সঙ্গে দীর্ঘ দিনের সিন্ধু জলবণ্টন চুক্তি বাতিল করে দেয়। বন্ধ করা হয় বাণিজ্য, পাকিস্তানি বিমানের জন্য আকাশপথও। এর পর গত ৬ মে মধ্যরাতে ভারত সেনা অভিযান চালায় পাকিস্তানে। ধ্বংস করে দেওয়া হয় একাধিক পাক জঙ্গিঘাঁটি। টানা চার দিন ধরে দুই দেশের মধ্যে সংঘাত চলেছিল। গত ১০ মে সংঘর্ষবিরতিতে সম্মত হয় ভারত এবং পাকিস্তান। তবে দুই দেশের দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক এখনও তলানিতে।