(বাঁ দিক থেকে) ডোনাল্ড ট্রাম্প, মেলানিয়া এবং জেফ্রি এপস্টাইন। — ফাইল চিত্র।
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প নাকি জানতেন যে কুখ্যাত যৌন অপরাধী জেফ্রি এপস্টাইনের ফাইলে তাঁর নাম রয়েছে! বুধবার এমনটাই জানা গিয়েছে মার্কিন সংবাদমাধ্যম ওয়াল স্ট্রিট জার্নালের একটি প্রতিবেদনে। সেই আবহেই তড়িঘড়ি বিবৃতি দিয়ে হোয়াইট হাউস জানাল, খবরটি আদ্যোপান্ত ‘ভুয়ো’! শুধু তা-ই নয়, হোয়াইট হাউসের দাবি, দীর্ঘ দিন ধরেই রিপাবলিকানদের বিরুদ্ধে ‘ষড়যন্ত্র’ চালাচ্ছেন প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা। এ সব তারই ফল।
সাম্প্রতিকতম বিতর্কের সূত্রপাত গত সপ্তাহে। ওয়াল স্ট্রিট জার্নালের একটি রিপোর্টে দাবি করা হয়, এপস্টাইনকে নগ্ন মহিলার ছবি এঁকে পাঠিয়েছিলেন ট্রাম্প। ২০০৩ সালে এপস্টাইনের ৫০তম জন্মদিনে চিঠি লিখে এ ভাবেই শুভেচ্ছা জানিয়েছিলেন তিনি। সেই থেকে নতুন করে সমালোচনা শুরু হয়। এর মাঝে, বুধবার নতুন করে একটি রিপোর্ট প্রকাশ করে ওয়াল স্ট্রিট জার্নাল। তাতে দাবি করা হয়, মার্কিন অ্যাটর্নি জেনারেল প্যাম বন্ডি মে মাসে ট্রাম্পকে জানিয়েছিলেন যে এপস্টাইন ফাইলগুলিতে বেশ কয়েক বার তাঁর নামের উল্লেখ রয়েছে। যদিও এই দাবিটি নতুন নয়। এর আগেও বিভিন্ন মহলে দাবি করা হয়েছে, কুখ্যাত যৌন অপরাধীর মামলার ফাইলে তাঁর নাম থাকার কথা ট্রাম্প আগে থেকেই জানতেন। তা সত্ত্বেও তড়িঘড়ি বিবৃতি দিয়ে ওয়াল স্ট্রিট জার্নালকে জবাব দেয় হোয়াইট হাউস।
হোয়াইট হাউসের তরফে জানানো হয়েছে, প্রতিবেদনটি ‘ভুয়ো’। হোয়াইট হাউসের এক কর্তা সংবাদমাধ্যম সিএনএনকে বলেন, ‘‘আমরা এতে অবাক হইনি। কারণ, দেশের বিচার বিভাগ এখনও অবধি মামলার সঙ্গে সম্পর্কিত যা যা তথ্য প্রকাশ্যে এনেছে, তাতে ট্রাম্পের নামের উল্লেখ রয়েছে। কিন্তু প্রেসিডেন্ট যে আদতে কোনও অন্যায় কাজের সঙ্গে জড়িত ছিলেন, এমন কোনও প্রমাণই নেই।’’ হোয়াইট হাউসের আর এক কর্তা স্টিভেন চিউংয়ের কথায়, ‘‘প্রতিবেদনটি পুরোপুরি ভুয়ো। ট্রাম্প অনেক আগেই এপস্টাইনের সঙ্গে সমস্ত সম্পর্ক ছিন্ন করেছিলেন। তাঁর বিকৃত মানসিকতার কথা জানতে পারার পর এপস্টাইনকে মার-আ-লাগো ক্লাব থেকে বার করেও দিয়েছিলেন ট্রাম্প। আদতে এ সব ডেমোক্র্যাট এবং উদারপন্থী সংবাদমাধ্যমের বানানো ভুয়ো খবর ছাড়া আর কিছুই নয়।’’
এ বিষয়ে কথা বলতে গিয়ে ওবামা-রাশিয়াগেট কেলেঙ্কারির প্রসঙ্গও টেনেছে হোয়াইট হাউস। ট্রাম্পের গোয়েন্দাপ্রধান তুলসী গ্যাবার্ড হোয়াইট হাউসের এক সাংবাদিক বৈঠকে দাবি করেন, ওবামা প্রশাসনের সবচেয়ে ক্ষমতাধর ব্যক্তিরা রাজনৈতিক অস্ত্র হিসেবে গোয়েন্দা তথ্যকে ব্যবহার করেছিলেন। ২০১৬ সালে ট্রাম্পের জেতা রুখতে এমনটাই করেছিলেন তাঁরা। ২০১৬ সালের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনকে প্রভাবিত করার নেপথ্যে নাকি হাত ছিল রাশিয়ারও। এর আগেও অবশ্য ওবামার বিরুদ্ধে একাধিক বার রাষ্ট্রদ্রোহের অভিযোগ তুলেছেন ট্রাম্প। তবে এ বারের দাবির পর থেকে নানা মহলে জল্পনা শুরু হয়েছে, এপস্টাইন ফাইলের দিক থেকে নজর ঘোরাতেই নাকি মূল প্রসঙ্গ থেকে সরে গিয়ে ওবামার দিকে আঙুল তুলছে ট্রাম্প-প্রশাসন।
দীর্ঘ দিন ধরে চলা এপস্টাইন মামলা নিয়ে আমেরিকার সাম্প্রতিক রাজনৈতিক পরিস্থিতি সরগরম। তবে এই মামলায় এখনও পর্যন্ত ট্রাম্পের বিরুদ্ধে কোনও গুরুতর অভিযোগ প্রকাশ্যে আসেনি। ট্রাম্পও দাবি করেছেন, এপস্টাইন তরুণীদের যৌন নির্যাতন করতেন, সেই সম্পর্কে তাঁর কোনও ধারণা ছিল না। এমনকি, ট্রাম্প এবং এপস্টাইনের সম্পর্ক অস্বীকার করেছে হোয়াইট হাউসও। ইতিমধ্যে ওয়াল স্ট্রিট জার্নালের বিরুদ্ধে মানহানির মামলাও করেছেন ট্রাম্প। দাবি করেছেন এক হাজার কোটি ডলার, ভারতীয় মুদ্রায় যা ৮৬ হাজার কোটি টাকার বেশি!