Donald Trump on Afghanistan

ট্রাম্প ভারতের পড়শি দেশের বিমানঘাঁটির দখল নিতে এত মরিয়া কেন? প্রকাশ্যে অন্তত চারটি উদ্দেশ্য, নজরে ভারতও?

ভারতের প্রতিবেশী দেশের একটি বিমানঘাঁটিতে আমেরিকার কর্তৃত্ব পুনঃপ্রতিষ্ঠিত করতে মরিয়া ট্রাম্প। তাঁর অন্তত চারটি উদ্দেশ্য আছে বলে মনে করা হচ্ছে।

Advertisement

আনন্দবাজার ডট কম ডেস্ক

শেষ আপডেট: ২২ সেপ্টেম্বর ২০২৫ ১৪:২৮
Share:

বাগরাম বিমানঘাঁটি দখল করে নিতে মরিয়া মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। গ্রাফিক: আনন্দবাজার ডট কম।

ভারতের প্রতিবেশী দেশ আফগানিস্তানের বাগরাম বিমানঘাঁটি পুনর্দখল করতে চান আমেরিকার প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। আকারে-ইঙ্গিতে এত দিন সে কথা বোঝাচ্ছিলেন, সম্প্রতি সরাসরি আফগানিস্তানের তালিবান সরকারকে হুমকিও দিয়েছেন। বলেছেন, ‘‘বাগরাম বিমানঘাঁটি আমেরিকাকে ফেরত না দিলে আফগানিস্তানের খারাপ হবে।’’ তবে কী ঘটবে, তা আর খোলসা করেননি। কিন্তু কেন ট্রাম্প ওই বিমানঘাঁটির নিয়ন্ত্রণ আবার নিজের হাতে তুলে নিতে এত মরিয়া হয়ে উঠেছেন? কী এমন আছে বাগরামে? বিষয়টির সঙ্গে যোগাযোগ আছে, এমন তিনটি সূত্র উল্লেখ করে আমেরিকার সংবাদমাধ্যম সিএনএন ট্রাম্পের ‘উদ্দেশ্য’ ব্যাখ্যা করেছে। কিছু কারণ ট্রাম্প নিজেও জানিয়েছেন।

Advertisement

গত বৃহস্পতিবার ব্রিটেনের প্রধানমন্ত্রী কিয়ের স্টার্মারের সঙ্গে যৌথ সাংবাদিক বৈঠকে বাগরাম বিমানঘাঁটির কথা উল্লেখ করেছিলেন ট্রাম্প। বলেছিলেন, ‘‘আমরা বাগরাম কোনও কারণ ছাড়াই ওদের (তালিবান) দিয়ে দিয়েছিলাম। তবে আমরা ওটা আবার ফেরত নেওয়ার চেষ্টা করছি।’’ এ বিষয়ে তালিবান সরকারের কথা কথাবার্তা চলছে আমেরিকার, তা-ও প্রেসিডেন্ট জানিয়ে দিয়েছিলেন। সিএনএন সূত্র মারফত জানতে পেরেছে, গত মার্চ থেকে আফগানিস্তান প্রশাসনের সঙ্গে বাগরাম নিয়ে হোয়াইট হাউসের কথা শুরু হয়েছে। মূলত যে চারটি কারণে এই বিমানঘাঁটি আমেরিকা আবার নিজেদের নিয়ন্ত্রণে চাইছে, তার মধ্যে অন্যতম চিন। বাগরাম বিমানঘাঁটি থেকে চিনের সীমান্ত খুব দূরে নয়, মাত্র ৫০০ মাইলের মধ্যেই।

এ ছাড়া, আফগানিস্তানের বেশ কিছু বিরল খনিজ উপাদান ও খনিকে কাজে লাগাতে চায় আমেরিকা। সেখান থেকে অর্থনৈতিক লাভের সম্ভাবনা রয়েছে। তৃতীয় কারণ হিসাবে সন্ত্রাসদমনের উদ্দেশ্যের কথা উল্লেখ করা হয়েছে রিপোর্টে। আইসিস জঙ্গিদের মোকাবিলা করতে বাগরামের কৌশলগত অবস্থান গুরুত্বপূর্ণ হতে পারে। এই অবস্থানকে নানা ভাবে কাজে লাগাতে পারে আমেরিকা। চতুর্থত, আফগানিস্তানের সঙ্গে কূটনৈতিক আলোচনা পুনরায় চালু করা যায় কি না, বাগরামের নিয়ন্ত্রণ হাতে পেলে হোয়াইট হাউস তা-ও বিবেচনা করতে পারবে। ট্রাম্পের সম্ভাব্য উদ্দেশ্যের তালিকায় আপাতত ভারত নেই বলেই মনে করা হচ্ছে। ভারতের সঙ্গে বাণিজ্য শুল্ক নিয়ে আমেরিকার দর কষাকষি চলছে। রয়েছে মতানৈক্যও। শুল্ক সংঘাতের মধ্যেই ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী চিনে গিয়ে সেখানকার প্রেসিডেন্টের সঙ্গে বৈঠক করে এসেছেন। অনেকে তাই মনে করছেন, এই পরিস্থিতিতে ভারতের উপর এবং ভারত-চিন ঘনিষ্ঠতার উপর নজর রাখতে আফগানিস্তানের বিমানঘাঁটি ট্রাম্পের প্রয়োজন হতে পারে।

Advertisement

কিন্তু এই সকল উদ্দেশ্য সাধনের জন্য একটা জিনিস প্রয়োজন। তা হল আফগানিস্তানের মাটিতে মার্কিন সেনাবাহিনীর উপস্থিতি। ২০২১ সালে যা প্রত্যাহার করে নিয়েছিল হোয়াইট হাউস। এ নিয়ে পূর্বতন জো বাইডেন প্রশাসনের সমালোচনাও করেছেন ট্রাম্প। জানিয়েছেন, সেই সময় তিনি ক্ষমতায় থাকলে সেনা প্রত্যাহার করলেও বাগরাম বিমানঘাঁটির নিয়ন্ত্রণ কখনও আলগা হতে দিতেন না।

ট্রাম্প নিজে বাগরাম বিমানঘাঁটির বিষয়ে একটি অন্য উদ্দেশ্যের কথা জানিয়েছেন। তিনি দাবি করেছেন, যেখানে চিন পরমাণু অস্ত্র এবং ক্ষেপণাস্ত্র তৈরি করে, সেখান থেকে বাগরাম মাত্র এক ঘণ্টা দূরে। তাঁর কথায়, ‘‘আমি ক্ষমতায় থাকলে আমেরিকা আফগানিস্তান থেকে সরে আসত ঠিকই, কিন্তু বাগরাম আমরা রেখে দিতাম। আফগানিস্তানের কারণে নয়, চিনের কারণে। কারণ, চিন যেখানে পরমাণু ক্ষেপণাস্ত্র তৈরি করে, সেখান থেকে বাগরাম এক ঘণ্টা দূরে। ওখানে একটা ছোট বাহিনী রাখা দরকার ছিল।’’

আফগানিস্তানে আমেরিকার সেনা থাকাকালীন বাগরাম বিমানঘাঁটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ছিল। জর্জ বুশ, বারাক ওবামার মতো প্রাক্তন মার্কিন প্রেসিডেন্টরাও এই বিমানঘাঁটিতে একাধিক বার গিয়েছেন এবং সেখান থেকে আফগানিস্তানের মানুষকে আশ্বাস দিয়েছেন। অতীতে এই বিমানঘাঁটি তালিবানের অসংখ্য হামলা, আত্মঘাতী হামলার সাক্ষী ছিল। বর্তমানে তাতে তালিবানের কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠিত। ট্রাম্পের এই সংক্রান্ত বক্তব্যের নিন্দা করে রবিবারই বিবৃতি দিয়েছে আফগান সরকার। তারা জানিয়ে দিয়েছে, এক ইঞ্চি জমিও আমেরিকা বা অন্য কাউকে ছেড়ে দেওয়ার প্রশ্ন নেই।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement
Advertisement