ধ্বংসের পথেই কি হাঁটব আমরা? ‘না’ বলুক মঙ্গলবার 

গত দু’বছরে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প ও তাঁর রিপাবলিকান সরকারের কাজের তালিকায় যদি এক বার ভাল করে চোখ বুলিয়ে নেওয়া যায়, তা হলে আমরা দেখব

Advertisement

পার্থ বন্দ্যোপাধ্যায়

নিউ ইয়র্ক শেষ আপডেট: ০৩ নভেম্বর ২০১৮ ০১:৩৩
Share:

গত দু’বছরে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প ও তাঁর রিপাবলিকান সরকারের কাজের তালিকায় যদি এক বার ভাল করে চোখ বুলিয়ে নেওয়া যায়, তা হলে আমরা দেখব—

Advertisement

১। বিশ্ব উষ্ণায়ন রুখতে ২০১৫ সালে প্যারিসে যে জলবায়ু চুক্তিতে সই করেছিলেন তৎকালীন মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা, ট্রাম্প সেই চুক্তি থেকে আমেরিকার নাম প্রত্যাহার করে নিয়েছেন।

২। অতি সম্প্রতি রাশিয়ার সঙ্গে যৌথ ভাবে পাশ করানো পারমাণবিক চুক্তি থেকে সরে এসেছেন ট্রাম্প।

Advertisement

৩। এনভায়রনমেন্টাল প্রোটেকশন

এজেন্সি (ইপিএ)-র মাথায় আছেন এমন এক জন, যিনি ইপিএ-কে অবলুপ্ত করতে উঠে পড়ে লেগেছেন।

৪। সারা আমেরিকায় চালু করার জন্য ‘রাইট টু ওয়ার্ক’ আইন পাশ হয়েছে, যার ফলে শ্রমিক ইউনিয়নগুলোর সদস্য হওয়ার পথে বিরাট বাধার সৃষ্টি হবে এবং ইউনিয়নগুলো আরও দুর্বল হয়ে পড়বে। এখনই আমেরিকায় প্রতি একশো জন শ্রমিকের মধ্যে মাত্র দশ জন ইউনিয়ন মেম্বার। জার্মানি, ইটালি, ফ্রান্স, ব্রিটেন, বেলজিয়াম বা সুইডেনের তুলনায় যা অতি নগণ্য।

৫। অতি ধনী মার্কিনদের জন্যে আরোও বেশি কর কমানো হয়েছে এবং তার ফলে সরকারের বাজেট ঘাটতি দু’লক্ষ কোটি ডলারেরও বেশি হয়ে পড়েছে। সে ঘাটতি পূরণ করার জন্যে এখন বহু কাল ধরে চলা নানা জনহিতকর অর্থ তহবিল বাতিল করে দেওয়ার চক্রান্ত চলেছে।

৬। সম্প্রতি সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতি নিয়োগে এমন এক ব্যক্তিকে ট্রাম্প সমর্থন করেছেন, যাঁর বিরুদ্ধে বেশ কয়েক জন মহিলা যৌন নির্যাতনের মামলা করেছেন।

৭। অভিবাসী ও মহিলাদের সম্পর্কে প্রেসিডেন্ট অনর্গল কুরুচিকর কথাবার্তা বলে চলেছেন। এবং জাতিবিদ্বেষী ও বর্ণবিদ্বেষীরা তা উল্লাসে সমর্থন করছে।

৮। সাংবাদিকদের ওপর হামলা চালানো নির্বাচিত রিপাবলিকান নেতাদের ট্রাম্প সমর্থন করেছেন।

৯। হোয়াইট সুপ্রিমেসিস্ট বা শ্বেতাঙ্গ খ্রীষ্টান চরমপন্থী ব্যক্তিরা ট্রাম্পের চারদিকে উচ্চপদস্থ সরকারি পদে বহাল হয়েছে।

১০। সীমান্তে অভিবাসী শিশুদের মা-বাবার থেকে আলাদা করে খাঁচায় পুরে রাখা হচ্ছে। অনেক সময়ে তাদের মা-বাবাকে জোর করে দেশ থেকে তাড়িয়ে দেওয়া হচ্ছে।

এই তো এখন আমেরিকার হাল। মনে হচ্ছে, প্রাগৈতিহাসিক দানবেরা বহুকাল বন্ধ থাকার পর আদ্যিকালের বোতল থেকে ছাড়া পেয়ে গেছে। সভ্যতাকে ধ্বংস করতে উদ্যত তারা। কী ভাবে ঠেকানো যাবে তাদের?

আরও পড়ুন: ওরা পাথর ছুড়লে গুলি চালাব: ট্রাম্প

আশা করি, মঙ্গলবারের নির্বাচনে সেই উত্তরের দিশা দেবে। তাই আমি চাইছি, কিছু কিছু ল্যান্ডমার্ক আসনে ডেমোক্র্যাটরা যেন জেতে। যেমন, জর্জিয়ার গভর্নর নির্বাচনে কৃষ্ণাঙ্গ নেত্রী স্টেসি অ্যাব্রামস জয়লাভ করলে তা হবে আমেরিকার ইতিহাসে এক গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়। দক্ষিণের অতি রক্ষণশীল রাজ্যগুলোতে, সেই দাসপ্রথার সময়ে থেকেই, কৃষ্ণাঙ্গরা অনেক বেশি দলিত হয়েছেন। স্টেসি অ্যাব্রামস এক গুরুত্বপূর্ণ পরিবর্তন নিয়ে আসতে পারেন। শ্রমিক ইউনিয়নে ওঁর বক্তৃতাগুলোও দারুণ। চাইব, টেক্সাসের সেনেট নির্বাচনে টেড ক্রুজ়ের বিরুদ্ধে বেটো ও’রুর্কি যেন জয়লাভ করেন। টেক্সাস আর এক অতি রক্ষণশীল ট্রাম্প বেল্ট, শ্বেতাঙ্গ ও খ্রিষ্টান আধিপত্যবাদের জায়গা।

আরও পড়ুন: মারা গেল সেই ‘উলঙ্গ’ শিশু

ট্রাম্প তো শুধু আমেরিকার প্রেসিডেন্ট নন। তিনি এমন একটা দেশের প্রেসিডেন্ট, যে চাইলে কয়েক মুহূর্তের মধ্যে সারা পৃথিবীর বিনাশ ডেকে আনতে পারে। এই আমেরিকার হাতেই পৃথিবীর অস্ত্রভাণ্ডােরর সিংহভাগ। পারমাণবিক মারণাস্ত্রও। আমেরিকার বহুজাতিক সংস্থাগুলো সারা পৃথিবীতে রাজত্ব চালিয়ে যাচ্ছে। সেই আমেরিকার প্রেসিডেন্ট যদি উন্মাদ ও নিষ্ঠুর হন, তা হলে পৃথিবীর ধ্বংস তো আসন্ন বটেই!

ধ্বংসের পথেই কি হাঁটব আমরা? আশা করি উত্তরটা ‘না’-ই শোনাবে আগামী মঙ্গলবারের নির্বাচন!

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন