কোর্ট চত্বরে জঙ্গি হানা, হত বিচারক-সহ ১১

রাজধানী শহর ইসলামাবাদের একেবারে কেন্দ্রস্থলে কোর্ট চত্বরে আত্মঘাতী হামলায় নিহত হলেন এগারো জন। নিহতের মধ্যে রয়েছেন খোদ বিচারক ও একাধিক আইনজীবী। সোমবার সকাল ন’টা।

Advertisement

সংবাদ সংস্থা

ইসলামাবাদ শেষ আপডেট: ০৪ মার্চ ২০১৪ ০৮:০৮
Share:

হামলার পরে অ্যাম্বুল্যান্সে তোলা হচ্ছে বিচারক রফাকত আমানত খানকে। ছবি: এএফপি।

রাজধানী শহর ইসলামাবাদের একেবারে কেন্দ্রস্থলে কোর্ট চত্বরে আত্মঘাতী হামলায় নিহত হলেন এগারো জন। নিহতের মধ্যে রয়েছেন খোদ বিচারক ও একাধিক আইনজীবী।

Advertisement

সোমবার সকাল ন’টা। আদালত খোলার প্রায় সঙ্গে সঙ্গেই গ্রেনেড ছুড়তে ছুড়তে ঢুকে পড়ে জঙ্গিরা। একই সঙ্গে হাতে ধরা একে-৪৭ থেকে চলছে নাগাড়ে গুলিবৃষ্টি। জঙ্গি হানায় আহত হয়েছেন আরও ২৫ জন। এঁদের মধ্যে পাঁচ জনের অবস্থা আশঙ্কাজনক।

ব্যস্ত বাজার এলাকা এফ-৮ মার্কেটের ঠিক পাশেই ইসলামাবাদের এই দায়রা আদালত। ব্যবসার খাতিরে বহু বিদেশিরও আনাগোনা আছে ওই এলাকায়। ভরা বাজারের মধ্যে দিয়েই আদালতে হুড়মুড়িয়ে ঢুকে পড়ে হামলাকারীরা। গোলাগুলির শব্দ শুনে কোর্টে ছুটে যায় পুলিশবাহিনী। পুলিশের দাবি, দুই জঙ্গিকে তাঁরা কোণঠাসাও করে ফেলেছিলেন। ঠিক সেই সময় নিজেদের গুলি করে মেরে ফেলে তারা।

Advertisement

তবে জঙ্গিরা সংখ্যায় কত জন ছিল, তা এখনও স্পষ্ট নয়। প্রত্যক্ষদর্শীদের কয়েক জন জানিয়েছেন, ৯ থেকে ১৫ জনকে সশস্ত্র অবস্থায় ঢুকতে দেখেছিলেন তাঁরা। আদালত চত্বরে কোনও সিসিটিভি না থাকায়, হামলাকারীদের ছবি পাওয়া যায়নি। পুলিশের প্রাথমিক রিপোর্টে অবশ্য চার হামলাকারীর উল্লেখ আছে। দুই আত্মঘাতী জঙ্গির বাকি দু’জন সঙ্গী পালিয়ে গিয়েছে বলেই পুলিশের অনুমান। তাদের বয়স ২০ থেকে ২৫ এর মধ্যে।

এমনিতে দেশের নানা প্রান্তে জঙ্গি হানা হয় হামেশাই। কিন্তু কড়া নিরাপত্তার চাদরে মোড়া ইসলামাবাদে এ ধরনের হামলার বিশেষ নজির নেই। তার উপর দু’দিন আগেই পাক অভ্যন্তরীণ মন্ত্রী চৌধুরি নিসার খান বলেছিলেন, ইসলামাবাদের মতো নিরাপদ শহর হয় না।

সম্প্রতি তালিবানের সঙ্গে শান্তি আলোচনা শুরু করেছিল পাকিস্তান সরকার। কিন্তু গত মাসের সতেরো তারিখ ২০১০-এ অপহৃত ২৩ সেনাকে মাথা কেটে হত্যা করে তালিবান জঙ্গিরা। এর পরই সাময়িক ভাবে আলোচনা স্থগিত রাখা হয়। নতুন করে আলোচনা শুরু করতে দু’দিন আগেই এক মাসের সংঘর্ষ বিরতি ঘোষণা করে পাক-তালিবান।

গত কাল জঙ্গি ডেরায় বিমান হানা চালাবে না বলে জানিয়েছিল সরকারও। তার পর ২৪ ঘণ্টা কাটতে না কাটতেই এই হামলা।

পাকিস্তানের প্রধান জঙ্গি সংগঠন তেহরিক-ই তালিবান যদিও এ দিনের হামলার দায় অবশ্য স্বীকার করেনি। সোমবারের ঘটনার নিন্দা করে সংগঠনের প্রধান মৌলানা সামিয়ুল হক বলেন, “সব ঘটনায় তালিবান-হাত খোঁজা অবান্তর।”

এ দিন সকালে কোর্ট চত্বরে ঢুকে প্রথমেই দুটো গ্রেনেড ছোড়ে হামলাকারীরা। বিস্ফোরণের জেরে আগুন ধরে যায় একটি ভবনে। তার পর ১৫ মিনিট ধরে চলে তাণ্ডব। অতিরিক্ত দায়রা বিচারক রফাকত আমানত খান আওয়ান-সহ মারা যান বহু কৌঁসুলি। যে ২৫ জনের আঘাত লেগেছে, তাঁদের প্রত্যেকেরই শরীরের উপরের ভাগে গুলি লেগেছে।

আগামী কাল প্রধান বিচারপতির নেতৃত্বে তিন জনের একটি বেঞ্চ আজকের হামলা সংক্রান্ত মামলাটি শুনবেন। ঘটনার প্রতিবাদে ধর্মঘটের ডাক দিয়েছে পাক বার কাউন্সিল। দেশের নিরাপত্তা ব্যবস্থা খতিয়ে দেখতে প্রশাসনের শীর্ষ কর্তাদের নিয়ে বৈঠকে বসেন প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরিফ।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন