তেরোতেই শিল্পপতি, মার্কিন মুলুকে কেরামতি বাঙালির

শিল্পপতি হওয়ার ক্ষেত্রে বয়স যে কোনও বাধা নয়, ফের বোঝাল সিলিকন ভ্যালি। জন্মসূত্রে বাঙালি, ক্যালিফোর্নিয়ার কিশোর শুভম বন্দ্যোপাধ্যায়ের (১৩) কৃতিত্বে তাজ্জব গোটা দুনিয়া। ক্লাস এইটেই শুভম আস্ত একটা কোম্পানির মালিক। নাম, ব্রেইগো ল্যাবস। দৃষ্টিহীনদের জন্য অল্প খরচে রোবটচালিত ব্রেইল মুদ্রণযন্ত্রই তৈরি হবে শুভমের কারখানা থেকে।

Advertisement

সংবাদ সংস্থা

সান্টা ক্লারা শেষ আপডেট: ২১ জানুয়ারি ২০১৫ ০৩:১৫
Share:

শিল্পপতি হওয়ার ক্ষেত্রে বয়স যে কোনও বাধা নয়, ফের বোঝাল সিলিকন ভ্যালি। জন্মসূত্রে বাঙালি, ক্যালিফোর্নিয়ার কিশোর শুভম বন্দ্যোপাধ্যায়ের (১৩) কৃতিত্বে তাজ্জব গোটা দুনিয়া। ক্লাস এইটেই শুভম আস্ত একটা কোম্পানির মালিক। নাম, ব্রেইগো ল্যাবস। দৃষ্টিহীনদের জন্য অল্প খরচে রোবটচালিত ব্রেইল মুদ্রণযন্ত্রই তৈরি হবে শুভমের কারখানা থেকে। বিনিয়োগের হাত বাড়িয়ে ইতিমধ্যেই এগিয়ে এসেছে মার্কিন মুলুকের প্রথম সারির প্রযুক্তি বিষয়ক সংস্থা ইনটেল কর্পোরেশন। শুভমের চোখে তাই ঘুম নেই, শুধুই এগিয়ে যাওয়ার স্বপ্ন। একই সঙ্গে চলছে স্কুলের পড়া, আর কোম্পানির দেখভাল।

Advertisement

বছর খানেক আগের ঘটনা। নেহাতই কৌতূহলের বশে বাবার কাছে কিশোরটি জানতে চেয়েছিল দৃষ্টিহীনরা পড়ে কী ভাবে? শুভমের অভিভাবক বিস্তারিত ব্যাখ্যায় না গিয়ে শুধু বলেছিলেন, “ইন্টারনেটে খুঁজে দেখ, তোমার সব উত্তর পেয়ে যাবে।” সব উত্তর এখনও অধরা, তবে সেটাই যে শুভমের কোম্পানি তৈরির প্রথম ধাপ, জানালেন কিশোরের গর্বিত বাবা নিলয় বন্দ্যোপাধ্যায়। প্রশংসায় পঞ্চমুখ ইন্টেলের শীর্ষকর্তারাও।

বাবার নির্দেশে নিজের মতো করেই অনলাইনে গবেষণা শুরু করে ছেলেটি। সামান্য ঘাঁটাঘাঁটির পরেই জানতে পারে, একটা মেশিনের দাম পড়ছে প্রায় দু’হাজার ডলারের মতো। মাথায় হাত কিশোরের সর্বনাশ, এত দাম দিয়ে সবাই এই যন্ত্র কিনতে পারে নাকি! শুভমের কথায়, সেই ভাবনা থেকেই যন্ত্র তৈরির কাজে হাত দেওয়া। ক্যালিফোর্নিয়ার বাড়িতে রান্নাঘরের টেবিলে এখনও সেই যন্ত্র নিয়ে টুকটাক কাজ করেই চলেছে সে। সে বলে, “কাজ শুরুর আগেই যেন মনে হচ্ছিল, যন্ত্রটার দাম এত বেশি হওয়ার কথা নয়। একটু চেষ্টা করলেই আরও কম দামে বানানো যায়।”

Advertisement

চেষ্টার ফল মেলে হাতেনাতে। গত বছর স্কুলের বিজ্ঞান-প্রদর্শনীতেই নিজের হাতে বানানো যন্ত্র প্রথম পেশ করে সে। শুভমের লক্ষ্য, ডেস্কটপ ব্রেইল মুদ্রণযন্ত্র তৈরি করা। যার দাম কোনও ভাবেই ৩৫০ ডলারের বেশি হবে না। সাধারণত এই ধরনের যন্ত্রের ওজন ৯ কিলোর মতো হয়। কিশোর শিল্পপতির দাবি, তার যন্ত্র এর কয়েক গুণ হাল্কা হবে। সাধারণ কম্পিউটার থেকে যেমন কালিতে মুদ্রিত হরফ বার হয়। এই কম্পিউটার থেকে তেমনই বেরোবে ব্রেইল।

মাস চারেক আগে বাবার থেকে ৩৫ হাজার ডলার পুঁজি নিয়ে কোম্পানি শুরু করে শুভম। আজ সেখানে রমরমা কারবার। ছেলের স্বপ্নপূরণ হতে দেখে অসম্ভব খুশি শুভমের ইঞ্জিনিয়ার বাবা-ও। ইতিমধ্যেই যন্ত্রের খাতিরে বহু পুরস্কার ও প্রশংসা পেয়েছে কিশোর। তবে এই মুহূর্তে শুভমের লক্ষ্য দেশ-বিদেশ থেকে বাছাই করা কিছু ইঞ্জিনিয়ারকে নিজের কোম্পানিতে নিয়ে আসা। তার স্বপ্ন সফলের আসল কারিগর যে এঁরাই। বয়সটা নেহাতই কম, তাই শুভমের হয়ে কোম্পানির সিইও-র দায়িত্ব সামলাচ্ছেন তার মা। প্রথম দিকে ছেলের কর্মকাণ্ডকে বিশেষ পাত্তা না দিলেও, আজ মানছেন ছেলে সত্যিই একটা কাজের কাজ করেছে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন