কাকতালীয় ছাড়া আর কী-ই বা বলা যায়!
মালয়েশীয় বিমান ধ্বংসের পরের দিন, শুক্রবার শিকাগোয় হয়ে গেল মুক্তেশ মুখোপাধ্যায়ের স্মরণসভা। মুক্তেশ, যিনি একই বিমানসংস্থার আর এক অভিশপ্ত উড়ানের যাত্রী ছিলেন। সেই এমএইচ-৩৭০ বিমানটি মাঝ আকাশ থেকে রহস্যজনক ভাবে উবেই গিয়েছে এই বছরের ৮ মার্চ।
মুক্তেশের বাবা-মা, মলয় ও উমা মুখোপাধ্যায় এখন আমেরিকায় রয়েছেন। সঙ্গে রয়েছে দুই নাতি মুক্তেশ ও তাঁর স্ত্রী জিয়াওমো বাই-এর দুই ছেলে মিরাভ ও মাইলস। মুক্তেশের কাকা, কলকাতার বাসিন্দা মিলন মুখোপাধ্যায় শুক্রবার জানান, শিকাগোয় বাঙালিদের মধ্যে জনপ্রিয় ছিলেন মুক্তেশ। তাই আগে থেকেই ঠিক করা ছিল, শুক্রবার ছোট করে একটি স্মরণসভা করা হবে। মিলনবাবু বলেন, “কাল রাতে মালয়েশীয় বিমানের দুর্ঘটনার খবর পেয়ে অবাক হলাম। একই বিমানসংস্থায় পরপর এ রকম ঘটনা! আর আজই আমার ভাইপোর স্মরণসভা। নতুন করে কেউ যেন পুরনো ক্ষতে আঘাত করে গেল!”
মুক্তেশ ও তাঁর দুই ছেলে মার্কিন নাগরিক। জিয়াওমো কানাডার নাগরিক এবং তাঁর বাবা মা বেজিংয়ে থাকেন। তাঁদের কাছেই দুই ছেলেকে রেখে মার্চ মাসে মুক্তেশ ও জিয়াওমো গিয়েছিলেন মালয়েশিয়ায়। সেখান থেকে এমএইচ-৩৭০ উড়ানেই বেজিং ফিরছিলেন। মাঝ আকাশ থেকে হারিয়ে যায় বিমানটি। যার হদিস আজও পাওয়া যায়নি। এই হারিয়ে যাওয়ার নানা ব্যাখ্যা বিভিন্ন সময়ে উঠে আসে। সাম্প্রতিকতম বিশ্বাসটি হল, অস্ট্রেলিয়ার অনেকটা দক্ষিণে ভারত মহাসাগরে সম্ভবত ভেঙে পড়েছিল বিমানটি। অথচ আঁতিপাতি খুঁজেও সেই বিমানের কোনও ভগ্নাংশ পাওয়া যায়নি। নতুন করে সেখানে তল্লাশি শুরু হয়েছে। মলয়বাবুদের তাই ই-মেল মারফত আরও তিন মাস অপেক্ষা করতে বলেছে অস্ট্রেলিয়ার সরকার।
এই ঘটনার পরে ৭ বছরের মিরাভ ও ২ বছরের মাইলসকে নিয়ে ভারতে চলে এসেছিলেন মলয়-উমা। মুম্বইয়ে থাকেন তাঁরা। সেখানকার হাইকোর্টে আবেদন করে বাপ-মা হারা দুই বাচ্চার আইনি অভিভাবকত্ব পেয়েছেন বৃদ্ধ-বৃদ্ধা। কিন্তু যেহেতু এই দুই নাবালকই মার্কিন নাগরিক এবং তাদের নামে সে দেশে সম্পত্তি রয়েছে, তাই নিয়মমাফিক মার্কিন আদালতেও আবেদন জানাতে হবে। সেই কাজেই সবাই এখন শিকাগোয়। মিলনবাবু জানান, ভারতে কেউ নিখোঁজ হওয়ার সাত বছরের মধ্যে ফিরে না এলে তাঁকে আইনত মৃত ঘোষণা করা হয়। কিন্তু মার্কিন আদালত জানিয়েছে, পারিপার্শ্বিক তথ্যপ্রমাণ দেখেই ধরে নিতে হবে যে, সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি (এ ক্ষেত্রে মুক্তেশ ও জিয়াওমো) মারা গিয়েছেন। আদালতের সেই নির্দেশের উপরে ভিত্তি করেই সম্পত্তি হস্তান্তর-সহ অন্যান্য কাজ চলছে।
কবে ওই দু’জনের ডেথ সার্টিফিকেট পাওয়া যাবে, তা নিয়ে ধন্দে রয়েছে পরিবার। মিলনবাবু নিজে আইনজীবী। তিনি এ দিন বলেন, “এখনও বুঝতে পারছি না আমেরিকা, মালয়েশিয়া নাকি অস্ট্রেলিয়ার সরকার সেই সার্টিফিকেট দেবে?” তবে, মাঝে মালয়েশীয় বিমানসংস্থা বড় অঙ্কের ক্ষতিপুরণ নেওয়ার প্রস্তাব পাঠিয়েছিল। তা প্রত্যাখ্যান করে মলয়বাবুরা জানিয়ে দিয়েছেন, যে দিন সরকারের পক্ষ থেকে মুক্তেশদের মৃত ঘোষণা করা হবে, সে দিন তাঁরা ক্ষতিপুরণ নিয়ে কথা বলবেন। তার আগে নয়।
তত দিন পর্যন্ত মনের কোথাও হয়তো সামান্য হলেও বাঁচিয়ে রাখা যাবে অভাবনীয় কিছু ঘটে যাওয়ার আশা।