বুধবার হোয়াইট হাউসে। ছবি: রয়টার্স।
তাঁর মেয়াদ আর ২২ মাস। মধ্যবর্তী নির্বাচন বলছে, দিন ফুরিয়ে আসছে ডেমোক্র্যাটদেরও। তবু প্রেসিডেন্ট হিসেবে তাঁর ষষ্ঠ ‘স্টেট অব দ্য ইউনিয়ন স্পিচ’ দিতে উঠে বাগ্মী বারাক ওবামা বুঝিয়ে দিলেন, তত্ত্ব কথা বোঝাতে তাঁর জুড়ি মেলা ভার। বাস্তবের থেকে তা যতই দূরে থাকুক।
মঙ্গলবার রাতে যখন বক্তৃতা দিতে উঠেছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট, কংগ্রেসে তখন থিকথিকে ভিড়। রিপাবলিকানদের। ইতিহাস বলছে, এত বেশি সংখ্যক রিপাব্লিকানের সামনে গত ৮৫ বছরে কোনও মার্কিন প্রেসিডেন্ট তাঁর ‘ইউনিয়ন স্পিচ’ দেননি। এর আগে এমন রিপাবলিকান-ঠাসা কংগ্রেস দেখেছিলেন প্রেসিডেন্ট হার্বাট হুভার, সেই ১৯৩০ সালে। তাঁর অবশ্য ওবামার মতো কোণঠাসা অবস্থা হয়নি, তিনি নিজেই রিপাবলিকান প্রেসিডেন্ট ছিলেন!
কিন্তু ওবামা যখন বক্তৃতা দিতে উঠলেন, আর তার পর ঘণ্টাখানেক ধরে বলেই চললেন, তাঁর মধ্যে কোনও নিরাপত্তাহীনতার আভাস দেখা দেয়নি। তাঁর বক্তৃতার বেশির ভাগটাই জুড়ে ছিল দেশের অর্থনৈতিক অবস্থা। প্রেসিডেন্টের দাবি করেন, “মন্দার আগে বেকারত্বের যা হার ছিল, এখন তা তার থেকেও কম। ১৯৯৯-এর পর থেকে এত দ্রুত হারে অর্থনীতির উন্নতি কখনও হয়নি। দেশে গ্র্যাজুয়েটের সংখ্যা অনেক বেড়েছে, বেশির ভাগ নাগরিকই স্বাস্থ্যবিমার সুবিধে ভোগ করছেন। আস্তে আস্তে আমাদের মাথার ওপর থেকে মন্দার ছায়া সরে যাচ্ছে। আমি আশাবাদী, ভবিষ্যৎ আরও উজ্জ্বল হবে।”
প্রেসিডেন্টের এই আশাব্যঞ্জক কথায় অবশ্য কংগ্রেসের চিড়ে ভেজেনি। হল-ঠাসা রিপাবলিকান সদস্যরা হাততালি দেওয়ার সৌজন্যটুকুও দেখাননি। হাউজ নিশ্চুপ দেখে ওবামা রসিকতা ছুঁড়ে দেন “খবরটা কিন্তু ভাল!” এই ঠাট্টা শুনে দু-চার জন রিপাবলিকান সদস্যকে দায়সারা ভাবে হাততলি দিতে দেখা যায়। এক রিপাবলিকান সদস্য পরে বললেন, “রাস্তায় নেমে প্রতিটা মানুষকে জিজ্ঞাসা করুন। বেশির ভাগ মানুষই কিন্তু বলবেন না যে, দেশের অর্থনীতির এত বাড়বাড়ন্ত।” ওবামার এই বক্তব্যকে অবশ্য বিশেষ ইঙ্গিতপূর্ণ বলে মনে করছেন ভারতীয় কূটনীতিকরা। আর তিন দিন পরেই ভারত সফরে যাচ্ছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট। দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্যিক সম্পর্কের উন্নতিতে আগ্রহী মার্কিন প্রেসিডেন্ট এ ভাবেই নয়াদিল্লিকে বার্তা দিলেন বলে মনে করছেন অনেকে।
অর্থনীতি ছাড়া অন্য যে বিষয়টি নিয়ে ওবামা তাঁর বক্তৃতার অনেকটা ব্যয় করেছেন, প্রত্যাশিত ভাবেই তা হল সন্ত্রাসবাদ। তাঁর কথায়, “পাকিস্তানের স্কুল থেকে প্যারিসের রাস্তা সন্ত্রাসবাদে আক্রান্ত সব মানুষের পাশে আমরা রয়েছি। সন্ত্রাসবাদ দমনে পৃথিবীজুড়ে যে চেষ্টা চালানো হচ্ছে, তাতে সব সময়ের মতো, এখনও অগ্রণী ভূমিকা নেবে আমেরিকা।” ওবামার এই মন্তব্যে অবশ্য বেজায় চটেছে রাশিয়া। বিদেশমন্ত্রী সের্গেই লাভরভ বলেন, “এখনও পৃথিবী জুড়ে আধিপত্য বিস্তারের চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে আমেরিকা। এই মনোভাবেপ পরিবর্তন ঘটিয়ে বিদেশনীতিতে পরিবর্তন না আনলে ভবিষ্যতে আমেরিকাই প্যাঁচে পড়বে!”